২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সততা

চারাগল্প
-


নতুন চাকরিতে জয়েন করলাম। ছাত্রজীবন শেষ করে হঠাৎ চাকরিজীবনে প্রবেশ এক নতুন অভিজ্ঞতা। সব কিছু নতুন নতুন লাগছিল। সবার সাথে পরিচিত হতে বেশ সময় লাগে। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে অফিসের পিয়ন জয়নালের সাথে বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠে। অফিসে ঢুকতে বের হতে জয়নালের সাথে কথা হতো। জয়নাল অদ্ভুত প্রকৃতির মানুষ। এত বিনয়ী মানুষ হতে পারে তাকে দেখার আগে জানা ছিল না। একটু গোমড়া মুখে দেখলেই জয়নাল জিজ্ঞেস করত,
-স্যার মন খারাপ নাকি?
-না, মন খারাপ না।
-স্যার, মন খারাপ করবেন না। সব সময় হাসিখুশি থাকবেন, দেখবেন মনের কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
জয়নালের কথাগুলো আমি মন দিয়ে শুনতাম। বয়সের ছাপ চেহারায় স্পষ্ট কিন্তু একটুও কান্তির ছাপ নেই। কাজ শুরু করলে শেষ করার আগে এক মুহূর্তের জন্য ও বিশ্রাম নেয় না জয়নাল। নাম ধরে ঢাক দেয়ার আগেই জয়নাল এসে হাজির। জয়নালের সততার গল্প সবার মুখে মুখে। কোনো কিছু আনতে দিলে জয়নাল খুব সুন্দর করে তার হিসেব বুঝিয়ে দেবে।
একদিন হঠাৎ করে জয়নাল জিজ্ঞেস করে,
-স্যার কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
-হুম বলো।
-স্যার, আমার এক শ’ টাকা ধার লাগবে। দিতে পারবেন?
জয়নালের কথা শুনে অবাক হলাম। মাত্র এক শ’ টাকা লাগবে তাও এত অনুনয়-বিনয় করে বলছে। মনে মনে ভাবি মানুষের চাহিদা এত কম কিভাবে হয়?
-মাত্র এক শ’ টাকা? বেশি লাগবে না?
-না স্যার, মাত্র এক শ’ টাকা।
আমি এক শ’ টাকার একটা নোট তার হাতে গুঁজে দিলাম।
-স্যার, এক সপ্তাহ পর আমি টাকাটা দিয়ে দেবো।
-আরে না না, এটা আর দিতে হবে না।
-না স্যার, এটা আমি ধার নিছি, এটা আমি দিমুই।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
কয়েক দিন পর আমার নতুন একটা চাকরি হয়ে যায়। বিদায়ের সময় জয়নাল আমাকে ধরে অনেক কেঁদেছে। আমিও কেঁদেছি। ওখানে থেকে চলে আসার পর মাঝে মধ্যে জয়নালের সাথে কথা হতো। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে একসময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রায় তিন মাস পর জয়নাল আমাকে ফোন দেয়। ফোন দিয়েই কান্না শুরু করে দিলো,
-স্যার, আমাকে মাফ করে দিয়েন।
আমি কিছু বুঝতে পারছি না। কী হলো যে মাফ করতে হবে।
-কী হয়েছে তোমার? কেন মাফ করতে বলছ?
-স্যার, আমি একটা বড় অন্যায় করে ফেলছি।
-কী অন্যায়?
-আমি আপনার কাছ থেকে এক শ’ টাকা ধার নিয়েছি সেটা দিতে পারিনি। আমি ভুলে গেছি। স্যার, আমি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি। আমাকে মাফ করে দেন।
আমি নিজেই ভুলে গেছি সেই এক শ’ টাকার কথা।
-আরে সমস্যা নেই। এক শ’ টাকা আর দিতে হবে না। আর এটা অন্যায়ের কী আছে?
-না স্যার,আমি টাকাটা দিতে চাই। আপনার মোবাইলে রিচার্জ করে দিই।
আমি অনেক কষ্ট করেও তাকে আটকাতে পারিনি। সে টাকা পাঠিয়ে দেয়। জয়নাল মাত্র এক শ’ টাকা ঠিকসময় দিতে না পারার যে অনুশোচনা কিংবা টাকাটা পরিশোধ করার যে তাড়া দেখিয়েছে, তা অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেছে। জয়নালের এ শিা আজীবন বুকে লালন করে এগিয়ে যাবো।


আরো সংবাদ



premium cement