২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাজেরিগার পাখি পালক সুলতান

পাখির পরিচর্যা করছেন সুলতান বাবু -

তারুণ্য মানে দুরন্ত দুর্বার। নতুন প্রজন্মের জন্য আলোর দিশারি। হ্যাঁ বলছি তেমনি এক তরুণের গল্প। নাম তার সুলতান বাবু। ঢাকার আগারগাঁও তালতলার বাসিন্দা। নামের সঙ্গে তার যাপিতজীবনের কাজকর্মেরও রয়েছে বেশ মিল। ছোটবেলা থেকেই পাখি পালনে বেশ ঝোঁক ছিল। টিয়া, ময়না, শালিকসহ নানান পাখি খাঁচায় পুষতে ভালোবাসতেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালের দিকে সে জানতে পারে বন্যপখি খাঁচায় পালন বৈধ নয়। সুস্থ মানসিকতার মানুষ যখন জানতে পারে সে ভুল করে কোনো অনৈতিকতার সাথে জড়িত, তখন আর তার পক্ষে যত শখের বস্তুই হোক না কেন সে আর করার আগ্রহী হবেন না। সুলতান বাবুর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বাবু একদিন বন্যপাখি সব খাঁচামুক্ত করে দিলেন। কে জানত তার এই ত্যাগই একদিন তাকে অনেক উঁচু মর্যাদা এনে দেবে। পাখিগুলো ছেড়ে দেয়ার পর কেটে যায় বেশ কিছুকাল। এরপর তার এলাকার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারে খাঁচার পাখি বাজেরিগার সম্পর্কে। রক্তের সাথেই যার মিশে আছে পাখি পালনের শৌখিন নেশা, তাকে আর থামায় কে। মাত্র তিন জোড়া বাজরিগার পাখি দিয়ে শুরু করে। এরপর চারটি বাচ্চার সফল ব্রিডিং করেন। এভাবেই বাজেরিগার নিয়ে চলতে থাকে তার দিনলিপি। ২০০৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সাথে যুক্ত হন। যুক্ত হওয়ার পর তিনি বাজেরিগার সোসাইটি অব বাংলাদেশ নামে ফেসবুক গ্রুপ ওপেন করেন। ধীরে ধীরে গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাজেরিগার প্রেমিকদের কিভাবে পালন ও পাখিদের চিকিৎসাসেবা দেয়া শুরু করেন। তার সহযোগিতাপ্রবণ মানসিকতার কারণে একসময় গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয় অনেক। ফেসবুকে বাজেরিগার পালক বিদেশী বন্ধুদের সাথে পরিচয় হয়। তাদের কাছ থেকে জানতে পারে বাজেরিগারের কালার ও সাইজের উপর প্রতিযোগিতা হয়। সে তার বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে ২০১০ সালে আয়োজনের উদ্যোক্তা হয়ে, বাংলাদেশে প্রথম বাজেরিগারের ওপর প্রতিযোগিতা সফলভাবে সম্পন্ন করেন। এরপর আর তাকে পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। সারা পৃথিবীতে বাজেরিগার সোসাইটি আছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের সাথে যুক্ত হতে লাগলেন। মালয়েশিয়া বাজেরিগার সোসাইটি থেকে তাদের প্রতিযোগিতা উৎসবে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণিত হন। তিনি গেলেনও মালয়েশিয়া। তাদের সাথে বাজেরিগার পাখি পালন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে এলেন। এতে করে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি আরো সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিচিতি বাড়ল। দেশে এলেন।
আয়োজন করলেন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পেট পালনকারীদের উৎসাহিত করার জন্য, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড প্রদানের। ওই আয়োজন সারা দেশের পেট পালনকারীদের মাঝে ব্যাপক সারা ফেলল। এবার যেন তারুণ্যের দিশারি সুলতান বাবু মুকুটহীন সুলতান হতে চললেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শৌখিন বাজেরিগার পাখি পালন শুধু শখই পূরণ করে নাÑ মানুষকে বিপথগামী হতেও ফেরাতে সক্ষম। সেইসাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পাখি বিক্রি করে পকেট খরচও চালানো যায়। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে এডমিন লেভেলে চাকরির পাশাপাশি তার এখন বাজেরিগারের উপরেই ধ্যান-জ্ঞান। তিনি জানালেন, বাংলাদেশ সরকার যদি বাজেরিগার পালনকারীদের প্রতি সহযোগিতা প্রদান করে, তাহলে প্রতি বছর বাজেরিগার রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। সদ্যসমাপ্ত মিসরের কায়রো নাসির স্টেডিয়ামে বাজেরিগার ক্লাব অব ইজিপ্টের উদ্যোগে বাজেরিগার চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও তিনি ক্লাবের সভাপতি মহেব নাবিল বুলসের আমন্ত্রণে কায়রো যান। সেই সাথে সুলতান বাবু বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে, সেখানে বাজেরিগার জাজ ট্রেনিং নেন। তিনি সেখানে দেশের হয়ে মিসরের জাতীয় টিভি চ্যানেলেও সাক্ষাৎকার দেন। যা বাংলাদেশের জন্য গর্ব। এই দেশের তরুণদের জন্য নবচেতনার বার্তা বয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ভ্রমণ সংগঠন ‘দে-ছুট’-এর পক্ষ থেকেও বাজেরিগার পাখি পালক মুকুটহীন সুলতানÑ মুহাম্মদ সুলতানুর রহমান সুলতান বাবুকে সম্মাননা দেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement