২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

তাল নিয়ে গালগপ্প  

-

ছয় ঋতুর এ বাংলাদেশে শরৎ আসে নানা ব্যঞ্জনায়। আকালে ধবল মেঘের গুঁড়াগুঁড়ি; থেমে থেমে বৃষ্টি! আহা, কী অপার শান্তি! আর এ কারণেই বোধহয় ঋতুকে শুভ্রতার প্রতীক বলে অভিহিত করা হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায়ও আমরা শরৎকে পাইÑ ‘আজি কী তোমার মধুর মূরতি/হেরিনু শারদ প্রভাতে!/ হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ/ ঝলিছে অমল শোভাতে।/ পারে না বহিতে নদী জলাধার,/ মাঠে মাঠে ধান ধরে নাকো আর.../ ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোয়েল/ তোমার কাননসভাতে।/ মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী,/ শরৎকালের প্রভাতে।’ কিন্ত ঋতুবৈচিত্র্যের কারণে রবিঠাকুরের সেই শরৎ আর আগের মতো করে আসে না। তবে এখন ঋতুটির আগমনে ঘটে ভ্যাপসা গরমের মধ্য দিয়ে। ঘটবেই তো! কারণ, ভাদ্র-আশ্বিন মানেই গরমকাল। ভাদ্রের সেই গরমে আমরা যখন ছটফট করি তখন গরমের সাথে একটি ফলের নাম এসে যায়। আর সেই ফলটি হলোÑ তাল। গরমের হাঁসফাঁস করতে করতে বলে ফেলি- ‘ইস রে, এ যেন তাল পাকা গরম! কথাটি কিন্তু মোটেও মিথ্যা নয়। হয়তো এর ব্যাখ্যা অনেকটা লৌকিক। সত্যিই কি তাল পাকতে গরমের দরকার হয়? এই প্রশ্নে কেউ বলে দরকার, আবার কেউ বা না।
গ্রীষ্ম ঋতু থেকে তালের গাছ থেকে পড়া কচি তাল আসা শুরু করে শহরের দিকে। আর এই তালের বিচি বা শাঁস শহরের ছাত্রছাত্রীসহ যুবক-বৃদ্ধদের প্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত। তালের শাঁস খাওয়ার ব্যাপারটি গ্রামে বলতে গেলে অনুপস্থিত। তবে শহরে তা বেশ প্রচলিত। তখন গ্রামের লোকজন তাৎক্ষণিক অন্য মওসুমি ফল-ফলাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কচি তালের শাঁস খেতে বেশ মজা। রাস্তার মোড়ে, ফুটপাথে ও স্কুল-কলেজের সামনে কচি তালের ছড়ি নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে। বড়দের চেয়ে ছোটরা তালের শাঁস বেশি পছন্দ করে। সধারণত চৈত্র- বৈশাখ মাসে গাছে তাল ধরে। ভাদ্র মাসের শেষ দিকে এবং আশ্বিন মাসের প্রথম দিকে তাল পাকা শুরু হয়। ভাদ্রে গাছ থেকে পাকা তাল পড়ার দৃশ্যটাই মনে হয় এমন আকাশ ভেঙে কী পড়ল যেন! আর এই তাল পড়ার শব্দ শুনে সাথে সাথে তা কুড়ানোর জন্য দৌড়ে ছুটে যায় অনেকে। আসলে তাল পড়ার দৃশ্য ও তার শব্দ মনে রাখার মতো। তবে সবচেয়ে বেশি মনে রাখার দৃশ্যটা হচ্ছে যখন গাছ থেকে তাল পুকুরে পড়ে তখন অনেকে পুকুরে নেমে প্রতিযোগিতা করে ওই তালটিকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে।
এই মওসুমে গ্রামের হাটবাজারে এবং শহরে কাঁচাবাজার, ফুটপাথের বাজারগুলোতেও পাকা তাল কেনাবেচা হয়। অনেকে ফেরি করে শহরের মহল্লাগুলোতে তাল বিক্রি করে।
তালের ওপরের শক্ত খোলস ফেলে দিলে ভেতরে রসালো আঁশযুক্ত তালের বিচি বা কোস পাওয়া যায়। আর এই বিচিগুলোকে তালের রস আহরণকারী যন্ত্রের ওপর ঘষে আঁশ থেকে রস আলাদা করা হয়। আর এই রস আলাদা করার সময় এক বাড়ির তালের ঘ্রাণ পাশের অন্য বাড়িতে চলে যায়। তাই পাকা তালের ঘ্রাণ খুব আকর্ষণীয়। পাকা তাল থেকে এ রস জ্বাল দিলে বেশ ঘন হয়। আর এই জ্বাল দেয়া ঘন রস দিয়ে মুড়ি খাওয়ার স্বাদের জুড়ি নেই। অনেকে দুধ-ভাতের সাথেও এই রস খেয়ে থাকে। তা ছাড়া রস দুধের সাথে মিশিয়ে গরম করে বিভিন্ন উপায়ে খেয়ে থাকে। পাকা তাল থেকে রস বের করার পর আঁটিটিকে অনেকেই মাটিতে পুঁতে রাখেন এবং এক-দু’মাস পর সেই আঁটি উঠিয়ে তা থেকে নরম প্রকৃতির ফুগা ও ফুফরা স্থানীয় গ্রাম্য ভাষায় যাকে বলা হয় খুমবা, অনেকেই তা খেয়ে থাকেন। তবে এটা ছোটদের খুব প্রিয়।
গ্রামবাংলার মানুষের মধ্যে বছরব্যাপী যে পিঠা বানানোর সংস্কৃতি চালু রয়েছে তার মধ্যে ভাদ্রে তালের পিঠা বানানো একটি বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। তাল পাকা এই গরমে চালের গুঁড়া বা ময়দার সাথে তালের রস মিশিয়ে তার সাথে গুড় বা চিনি দিয়ে সুন্দর সুন্দর পিঠা তৈরি করা হয়। এসব পিঠার মধ্যে রয়েছেÑ তেলের পিঠা, পাটিসাপটা, মালপোয়া, কুলি পিঠা, রুটি অথবা পরোটার মতো পিঠা ইত্যাদি। পাকা তালের রস দিয়ে এসব পিঠা গ্রামবাংলার মেয়ের জামাই আপ্যায়নে জুড়ি নেই। পল্লীবধূরা নানা নকশায় বিভিন্ন আকৃতিতে এ পিঠা তৈরি করেন। এসব পিঠা কারো কারো কাছে গরম গরম খেতে ভালো লাগে আবার কেউ কেউ পরদিন সকালে খেতে বেশি পছন্দ করেন। এ পিঠা নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ঘরের লোকেরাই খেতে অভ্যস্ত। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পূজা-পার্বণেও এ পিঠা তৈরি হয়। হিন্দুদের মধ্যেই তালের পিঠার ব্যবহার বেশি। আশ্বিনের পূজায় ও শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে তারা নানা ধরনের তালের পিঠা তৈরি করেন। উচ্চবিত্তের মধ্যে পাকা তালের রস এবং তালের পিঠা খুব একটা জনপ্রিয় নয়। তালের পিঠা আমাদের পিঠা সংস্কৃতির অঙ্গনে গ্রামের ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার প্রিয়। এ পিঠার সাথে আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রথম হয়েছেন যারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিজ দেশে ৫ বছর পর ফিরল দিপক চট্টগ্রামে ৬ কিশোর গ্যাংয়ের ৩৩ সদস্য আটক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : শামসুল ইসলাম ইউরো ২০২৪’কে সামনে রেখে দল নির্বাচনে বিপাকে সাউথগেট ভারতীয় পণ্য বর্জনকে যে কারণে ন্যায়সঙ্গত বললেন রিজভী মাকে ভরণ-পোষণ না দেয়ায় শিক্ষক ছেলে গ্রেফতার প্রথম বাংলাদেশী আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত ঢাবির সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিরাপত্তা-বিষয়ক আলোচনা করতে উত্তর কোরিয়ায় রুশ গোয়েন্দা প্রধান

সকল