ধন দৌলত
চারাগল্প- জোবায়ের রাজু
- ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
অহনার জন্য আজকের সম্ব^ন্ধটা এসেছে কালিকাপুর থেকে। জাফর চৌধুরী অতীতের অনেকগুলো সম্ব^ন্ধ প্রত্যাহার করেছেন নিজের মনের মতো মেলেনি বলে। ভালো ঘরে মেয়েকে বিয়ে দেয়ার কাক্সিক্ষত সুযোগ তিনি বরাবরই খুঁজছিলেন। অবশেষে কালিকাপুর থেকে আসা আজকের সম্বন্ধটাকে তিনি গ্রহণ করেছেন। ছেলে শিক্ষিত, বংশমর্যাদার নাম ডাক, আর্থিক অবস্থা, সবই জাফর চৌধুরীকে আকর্ষণ করেছে বলে পাত্রপক্ষকে আজ তিনি বাড়ি ডেকেছেন।
পাত্র আদিত্য। দেশ-বিদেশে তার বিশাল ব্যবসা। ব্যবসায়িক কাজে প্রায়ই বিদেশ উড়াল দেয়। দেখতেও যথেষ্ট স্মার্ট। অহনা এখন বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি নয়। কিন্তু বাবার মুখে আদিত্যের সম্পর্কে ইতিবাচক ভাষণ শোনে একটু ভেবে দেখেছে।
২.
আদিত্যকে পাঠানো হলো অহনার ঘরে একান্ত কোনো কথা থাকলে তা সেরে নেয়ার জন্য। অহনার মুখোমুখি বসে আছে আদিত্য।
Ñঅহনা, এখানে আসার আগে শুনেছি তুমি নাকি ধবধবে ফর্সা। এখন তো দেখছি তুমি শ্যামলা। তবে চেহারা কিন্তু মিষ্টি।
Ñইয়ে মানে...।
Ñযাই হোক, তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে? একটা কথা বলব?
Ñবলুন।
Ñতোমার কয়টা বয়ফ্রেন্ড?
Ñসরি। আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।
Ñবাহ। বিউটিপার্লারে কি নিয়মিত যাও?
Ñ না। ওসবে আমার ইচ্ছে নেই।
Ñরাতভর কি ফেসবুকে ডুবে থাকো?
Ñনা। আইডি আছে। তবে আমি ফেসবুকে অতটা সবর নই।
Ñভেরি গুড। বাইরে বের হলে কি বোরকা পরো? না খোলামেলা পোশাক?
আদিত্য এসব কি প্রশ্ন করছে অভদ্রের মতো। অহনা নার্ভাস হচ্ছে। পাত্রী দেখতে এসে কেউ এভাবে প্রশ্ন করে? বাবার মুখে অহনা শুনেছে, আদিত্য নাকি সুশিক্ষিত! সুশিক্ষিতরা অভদ্রের মতো প্রশ্ন করতে পারে বলে জানা নেই অহনার।
Ñআচ্ছা অহনা, ছেলেরা তোমাকে প্রপোজ করলে তুমি কি করো? ফিরিয়ে দাও, নাকি সবাইকে ইয়েস বলো গিফটের লোভে।
Ñমানে কী?
Ñরাগ করো না অহনা। তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা তুমি কি ঘুমের ঘোরে নাক ডাকো?
Ñআশ্চর্য, কি সব প্রশ্ন!
Ñএসব জানতে চাই কেন জানো? তোমাকে নিয়ে সংসার করব তো, তাই এসব জানার অধিকার আমার অবশ্যই আছে, তাই না?
Ñকিন্তু আপনার মতো মানুষকে নিয়ে সংসার করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।
Ñকেন অহনা? আমাদের ধন-দৌলতের কোনো অভাব নেই। সারাজীবন সুখে থাকবে। তা ছাড়া আমার মতো সুদর্শন স্মার্ট ছেলেকে তোমার অপছন্দ করার কোনো কারণ দেখছি না।
Ñমিস্টার আদিত্য, আপনি আমাকে যতগুলো প্রশ্ন করেছেন, সবগুলো অপমানজনক। ধন-দৌলত দিয়ে কী হবে, যদি মানুষের আদব-কায়দা সুন্দর না হয়! হ্যাঁ আপনি স্মার্ট, কিন্তু আপনার আচরণ প্রশংসাযোগ্য নয়। মানুষের কথাবার্তার মাপকাঠি হতে হয় গোলাপের মতো সুন্দর।
অহনার কথায় আদিত্য নার্ভাস হয়ে রেগে যায়।
Ñতুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো অহনা।
Ñআপনিও আমাকে আজেবাজে প্রশ্ন করে অপমান করেছেন। নারীকে সম্মান দিতে শিখুন।
Ñআশ্চর্য, এত বড়াই কিসের তোমার! কী আছে তোমাদের এই ঘরভিটে ছাড়া। আমাদের সব আছে। টাকা পয়সা, গাড়ি-বাড়ি, ধন -দৌলত।
Ñথামুন মিস্টার আদিত্য। এখান থেকে চলে যান। আপনাদের ধন-দৌলতের গল্প অন্য কোথাও গিয়ে শোনান।
আদিত্য অপমানিত হয়ে অহনার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।
৩.
ড্রয়িংরুমে কথা বলছেন জাফর চৌধুরী আর খান সাহেব। আদিত্য বাবার কাছে এসে রাগী গলায় বলল, ‘আব্বু, চলে এসো এখান থেকে। এখানে আমি বিয়ে করব না।’ খান সাহেব ছেলের কথা শোনে অবাক হয়ে বললেন, ‘কী হয়েছে বাবা!’ জবাব না দিয়ে আদিত্য বাবার হাত ধরে টেনে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
মেয়ের মুখে সব শুনলেন জাফর চৌধুরী। তিনি ভাবতেই পারেননি পরিস্থিতি এমন রূপ নেবে। অহনা অনেকটা তেজি গলায় বলল, ‘এই ছেলে ধনী বাবার বিরাট অহঙ্কারি সন্তান। ধন-দৌলতের গর্বে মাটিতে পা পড়ে না। মানুষের ধন-দৌলত থাকলেই হয় না বাবা, মনুষ্যত্ব, ব্যক্তিত্ব, কথাবার্তায় মাধুর্যতা লাগে, যা আদিত্যের নেই।’
জাফর চৌধুরী চুপ করে সব শুনে গেলেন। ১০ বছর বয়সে মা হারানো মেয়েটা কী সুন্দর যুক্তি দিয়ে কথা বলে।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা