২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আবার দেখা হবে : চারাগল্প

-

এইচএসসি শেষ করে কোচিং করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় এলাম। অদ্ভূত এই শহর আমার কাছে সবই অচেনা ছিল। কোচিং সেন্টারে চুপচাপ বসে থাকতাম। কারো সাথে কথা বলতে বেশ আনইজি লাগত। ওখানেই পরিচয় হয় হুমায়ুনের সাথে। হুমায়ুনের গায়ের রঙ কালো। তবে তার হাসিটা চমৎকার ছিল। কখন যে তার সাথে একটা ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হলো টেরই পাইনি। হুমায়ুনের গানের গলা বেশ ভালো ছিল। ক্লাসের ফাঁকে গুনগুন করে গাইত। হুমায়ুনের চোখ ছিল বড়। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকত। চোখে-মুখে দুষ্টুমি খেলা করত।
কোচিংয়ের শেষের দিনগুলো বেশ খারাপ লেগেছিল। হঠাৎ শূন্যতা অনুভব করলাম। অল্প কয়েক দিনের বন্ধুত্ব যে এত গভীর হবে তা ভাবিনি। বিচ্ছেদের জ্বালা তখনি টের পাচ্ছি। দু’জন দুই জায়গা থেকে এসেছি। আবার কোথায় চলে যাই তার কোনো ঠিক নেই। যেদিন হুমায়ুনের সাথে শেষ ক্লাস করছিলাম, সেদিন বলেছিÑ
Ñহুমায়ুন, তোর সাথে আর মনে হয় দেখা হবে না।
হুমায়ুন মুছকি হাসি দিয়ে বলল,
Ñপৃথিবী গোল, আবার দেখা হবেই।
সেই বছরই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে হুমায়ুনের সাথে দেখা। হুমায়ুন আমাকে বলল,
Ñদেখলি! আমি বলছি না; আবার দেখা হবে?
Ñহা হা, তুই তো ঠিকই বলেছিস।
হুমায়ুনের মোবাইল নম্বর বেশ ক’দিন ছিল। মাঝে মধ্যে টুকটাক কথা হতো। কিভাবে যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল টের পাইনি। মোবাইল থেকে নম্বরটিও হারিয়ে গেছে। হয়তো হুমায়ুনের মোবাইল থেকেও আমার নম্বরও হারিয়ে গেছে।
হুমায়ুনকে প্রায় ভুলেই গেছি। গত ১০ বছরে ওর সাথে একবারও দেখা হয়নি। কেমন আছে তাও জানি না।
বাসে করে শাহবাগ থেকে মিরপুর আসছি। ফার্মগেট এসে বাস জ্যামে পড়ল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখ আটকে গেল। পরিচিত মুখ, চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু কে সে তা মনে করতে পারছিলাম না। অনেকক্ষণ ভেবে মনে পড়ল হুমায়ুনের কথা। এ কি আসলেই হুমায়ুন? তারপর সাহস করে ডাক দিলাম,
Ñহুমায়ুন কেমন আছিস?
হুমায়ুন আমার কথা শুনে তাকাল। সেও ঠিকমতো চিনতে পারেনি। তবে ওর তাকানো দেখেই বুঝলাম ও হুমায়ুন। হুমায়ুন কী যেন বলতে চাচ্ছিল। ঠিক হয়তো চিনতে পারেনি। কিংবা আবছা আবছা মনে পড়ছে। জ্যাম কেটে গাড়ি চলতে লাগল। হুমায়ুন আমার থেকে আস্তে আস্তে দূরে চলে গেল। এত কাছে থেকেও তার সাথে কথা বলতে পারলাম না। বাসায় এসে ওর নাম দিয়ে ফেসবুকে সার্চ দিলাম। কত হুমায়ুন আসে, কিন্তু তাকে পাইনি।
হুমায়ুন অনেক বদলে গেছে। এতদিনে ওর চোখে চশমা উঠেছে। ভুঁড়িটাও বড় হয়ে গেছে। হুমায়ুন হয়তো আমাকে ঠিক চিনতে পারেনি। কিন্তু ক্ষণিকের জন্য হলেও একটু নাড়া দিয়েছে। একবারের জন্য হলেও অতীতে ফিরে গেছে। হুমায়ুনের সাথে আর কোনো দিন দেখা হবে কি না জানি না। তবে তার শেষ কথাটা এখনো বিশ্বাস করিÑ
‘পৃথিবী গোল, কোনো একদিন আবার দেখা হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement