২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

শরতের বিকেলে

চারাগল্প
-


প্রথম পরিচয় শপিংয়ে। কাকতালীয়ভাবেই। গিয়েছিলাম ছোট বোনের জন্য একটা থ্রিপিস কিনতে। প্রথম দোকানে ঢুকেই একটা থ্রিপিসে চোখ আটকে গেল। বেশ চমৎকার থ্রিপিসটা। গেরুয়া রঙের উপর নীল বুটিকের কাজ করা। একপলক দেখেই চোখে ধরল। ভাই, একটু এই থ্রিপিসটা দেখি।
তরুণ বয়সের একটা ছেলে তাক থেকে বের করে আমার হাতে থ্রিপিসটা দিলো। নেড়েচেড়ে দেখে থ্রিপিসটা খ্বু পছন্দ হলো। ভাই, এটার দাম কত?
এক্সকিউজ মি!
ঝট করে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকালাম। দেখি আমার পেছনে সুন্দরী এক ললনা দাঁড়িয়ে আছে। বেশ স্মার্ট। চোখে রঙিন চশমা।
সরি, আমাকে বলছেন? বললাম আমি।
জি।
বলুন।
এই থ্রিপিসটা...।
এই থ্রিপিসটা কী?
আমি নিতে চাই।
কিন্তু এটা তো আমি আগে পছন্দ করেছি।
না ভাইয়া, আমিই আগে চয়েস করেছি।
কিভাবে ?
গতকাল এসে চয়েস করেছিলাম। সাথে টাকা ছিল না, তাই নিতে পারিনি। আজ নেব বলে টাকা নিয়ে এসেছি।
আমি দোকানদারকে এরকম আরেকটা থ্রিপিস বের করতে বললাম। দোকানদার বলল, এই থ্রিপিস শুধু একটাই আছে।
আমি আর তর্কে না গিয়ে মেয়েটিকে থ্রিপিসটা দিয়ে দিলাম। বললাম, ঠিক আছে, আপনিই নিন।
মেয়েটিকে থ্রিপিসটা দিয়ে আমি দোকান থেকে বের হয়ে চলে আসছিলাম।
এক্সকিউজ মি! পেছন থেকে আবার ডাকল মেয়েটি।
আমি দাঁড়ালাম। পেছনে তাকিয়ে বললাম, কিছু বলবেন?
মেয়েটি সুন্দর করে হাসল। সরি ভাইয়া, ভুলে গিয়েছিলাম।
কী?
দিতে।
কী দিতে?
থ্যাংক ইউ।
আমি আর না হেসে পারলাম না। ফিক করে হেসে দিলাম।
হাসলেন যে!
হাসব না?
কেন? এখানে হাসির কী হলো?
আপনি এমনভাবে বলছিলেন, আমি মনে করেছিলাম কী না কী...
ওমা! আপনি এত বড় উপকার করলেন, আর আমি যদি একটা থ্যাংক ইউ না দেই, তাহলে কী আর হয়?
ততণে গল্পের ফাঁকে ফাঁকে দোকানে ক্যাশ পেমেন্ট করে মেয়েটি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
আমি হাঁটছি। সেও হাঁটছে আমার সাথে সাথে।পাশাপাশি।
ভাইয়া!
বলুন।
মেয়েটি এবার বলল, চলুন।
আমি অবাক। কোথায়?
দোকানে।
কোন দোকানে?
বাহ রে! আমি আপনার চয়েস করা থ্রিপিসটা নিয়ে নিলাম। আর আপনাকে একটা থ্রিপিস চয়েস করে দেবো না? চলুন।
আমরা দু’জনে আরেকটা কাপড়ের দোকানে ঢুকলাম। একটা থ্রিপিস কিনলাম। মেয়েটিই রঙ পছন্দ করল।
কাপড় কেনা শেষে দু’জনে ঢুকলাম কফি হাউজে। কফি খেতে খেতে অনেক কথা হলো। পরিচয় হলো। মেয়েটি বলল, আমার নাম নদী।
আমি বললাম, আমার নাম সাগর।
শুনেই মেয়েটি হেসে খুন। জানেন?
বললাম, কী?
নদীর পানি কিন্তু গড়িয়ে পড়ে সাগরের বুকেই।
তারপর থেকে শুরু হলো আমাদের ফোনে কথা বলা। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর বন্ধুত্ব থেকে প্রেম।
আজ শরতের প্রথম দিন।
নদীর জন্মদিন। আমি দুপুরের পর অফিস থেকে ছুটি নিলাম। বিকেলে আমরা ঘুরে বেড়াব।
নদী আজ খ্বু সুন্দর করে সেজেছে। নীল শাড়ি পরেছে। কপালে লাল টিপ পরেছে। চুল খোঁপা বেঁধেছে। আমি পরেছি লাল পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা। দু’জনে বাইক চালিয়ে গেলাম অনেক দূরে। পল্লী গাঁয়ের এক নদীর তীরে। নদীর তীরে ফুটেছে সাদা সাদা শুভ্র কাশফুল। মৃদু বাতাসে পানির ঢেউয়ের মতো দুলছে সেই কাশফুলের বন। শরতঋতু আর সাদা কাশবন নদীর খুব প্রিয়। সাদা কাশবন দেখেই ওয়াও বলে লাফিয়ে উঠে সে। নদীর দিকে তাকিয়ে চমকে উঠি। নীল শাড়ি আর লাল টিপ পরে সাদা কাশবনের মাঝে তাকে লাগছে অপূর্ব! যেন বেহেশত থেকে উড়ে আসা কোনো হুরপরী!
আমাকে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে হরিণী চোখের পাপড়ি নাচিয়ে নদী বলল, এ্যাই, এভাবে কী দেখছ?
তোমাকে।
দেখনি কোনো দিন?
দেখেছি।
তাহলে আজ নতুন করে দেখার কী আছে?
আজ তুমি অন্য দিনের মতো নও। একেবারে আলাদা। নতুন।
কী রকম?
যেন বেহেশত থেকে উড়ে আসা কোনো হুরপরী। অপ্সরী!
যাহ! লজ্জায় লাল হয়ে উঠে নদী। দুই হাতে মুখ ঢাকে সে।
অমনি পটাপট কয়েকটা কাশফুল ছিঁড়ে গুঁজে দেই তার খোঁপায়। হাঁটু গেড়ে বসে পড়ি তার সামনে। দুই হাত ডানে-বায়ে প্রসারিত করে চিৎকার করে বলি, আই লাভ ইউ নদী, আই লাভ ইউ।
আমার কাণ্ড দেখে রিনঝিন শব্দে খিলখিল করে হেসে উঠে নদী।
সাথে সাথে সাদা কাশবনও।
সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর।


আরো সংবাদ



premium cement