২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কে এসেছে : চারাগল্প

-

অমৃতার একটি বদস্বভাব হলো কল রিসিভ না হওয়া পর্যন্ত সে অবিরত কল দিয়েই যাবে। ওপারের মানুষটি ব্যস্ত আছে কি নেই, মোবাইল সাইলেন্ট কি সাইলেন্ট না, এসব ভেবে দেখা প্রয়োজন মনে করে না। বাদল অবশ্য ইচ্ছে করেই বেশির ভাগ সময় অমৃতার কল ধরে না। সে ভালো করে জানে কল রিসিভ করলে এই মেয়ে অহেতুক বকবক করবে। তবে এখন অমৃতার কল রিসিভ না করার কারণ হচ্ছে চার্জ। গতকাল রাতে এখানে কারেন্ট গেছে। জানা গেছে আগামী তিন দিন বিদ্যুৎ আসবে না। পাশের রাস্তার ধারে গাছ উপড়ে পড়ে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে।
উফ! লাইন কেটে দেয়ার পরও অমৃতার কল। নাহ্, রিসিভ করতেই হবে দেখা যাচ্ছে।
Ñবল।
Ñএই বান্দর। লাইন কেটে দিস কেনো! জানিস না তোর মহারানী কল করেছে।
Ñতুই আমার মহারানী! জানতাম না তো!
Ñজানতে হবে না। ন্যাকামো বাদ দে। কবে আমরা বিয়ে করব, বল!
Ñবিয়ে! হা হা হা। আমার মতো চালচুলোহীন ছেলেকে বিয়ে করে ত অনাহারে থাকতে হবে।
Ñতাই, থাকব।
Ñএখন রাখ।
Ñনা রাখবো না।
Ñমোবাইলের চার্জ শেষ। এখনি বন্ধ হয়ে যাবে।
Ñকোনো অজুহাত মানি না। কল কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ রাখলে কিন্তু তোর দুয়ারে যখন তখন হাজির হয়ে যাবো।
চার্জ ফুরিয়ে মোবাইলটা বন্ধ হয়ে গেল বাদলের। সে কথা অমৃতাকে কে বোঝাবে! অমৃতা রাগে জ্বলে যাচ্ছে। তার ধারণা বাদল ইচ্ছে করেই মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছে এবং বাদল তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। অথচ এই বাদলকে ছাড়া ধনীর দুলালী অমৃতা আজকাল কিছুই ভাবতে পারে না।
খুব সাধারণ ঘরের ছেলে বাদল। তার বাবা সাধারণ একজন রাজমিস্ত্রি। অভাবের সংসারে জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বেড়ে ওঠা ছেলে বাদল জেলা সদরের এক সুপরিচিত ছাত্রাবাসে বন্ধুদের সাথে থাকে। রাজমিস্ত্রি বাবা মাস শেষে বাদলের জন্য টাকা পাঠান। সেই টাকায় ভার্সিটির ছাত্র বাদল পড়ালেখার পেছনে ব্যয় করে।
ভার্সিটিতে ভর্তির প্রথম দিনেই পরিচয় অমৃতার সাথে। বাদলের রূপসৌন্দর্য আকৃষ্ট করে অমৃতাকে। ফলে সরাসরি প্রপোজাল না দিলেও অমৃতা আকার ইঙ্গিতে বাদলকে বহুবার বুঝিয়েছে তাকে বুকে একটুখানি জায়গা দিয়ে তুলে নেয়ার। কিন্তু নিজের পারিবারিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে বাদল অমৃতার সেসব আকার ইঙ্গিত বুঝেও না বোঝার ভান করে গেছে। এ দিকে অমৃতাও বাদলের কাছ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে মুখফুটে নির্দ্বিধায় বলে গেছে তার সব অনুভূতির সাজানো কথামালা।
সম্পর্কের নদী বয়ে যেতে থাকে নীরবে। লাজ শরমের মাথা খেয়ে অমৃতা বাদলকে তাগিদ দেয় কোর্ট ম্যারেজের। কিন্তু এত বড় দুঃসাহস যে বাদলের নেই। পারিবারিক দরিদ্রতা বাদলকে সাহসী করতে পারেনি। বাদল যে ছাত্রাবাসে থাকে, অমৃতা মাঝে মধ্যে বান্ধবীদের দল নিয়ে সে ছাত্রাবাসে কারণে-অকারণে চলে আসে। ফলে বন্ধুদের সামনে অস্বস্তিতে পড়ে বাদল।
২.
আজ টানা তিন দিন বৃষ্টি কমার কোনো লক্ষণ নেই। এই তিন দিনে বিদ্যুৎ আসেনি বলে মোবাইল থেকে দূরে বাদল। ফোনকল বা ফেসবুক ছাড়া এই তিনটি দিন কিভাবে যে গেছে!
দরজায় টোকা পড়ল। এই অবেলায় আবার কে এসেছে। নিশ্চয়ই অমৃতা। তিন দিন বাদলের কোনো খবর না পেয়ে বেচারি নিশ্চয়ই দিওয়ানা হয়ে ছুটে এসেছে! বাদল হয়তো এখনি দরজা খুলে দেখবে অমৃতা গাল ফুলিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে মুখে লেগে থাকা অভিমানগুলোকে দেখতে দরজার দিকে এগিয়ে আসে বাদল। কিন্তু দরজা খুলে অমৃতার বদলে যাকে দেখে বাদল টাশকি খায়, তিনি যে স্বয়ং বাদলের বাবা।
Ñবাবা, আপনি!
Ñতোর কী হয়েছেরে?
Ñমানে?
Ñফোন বন্ধ কেন?
Ñইয়ে মানে...!
Ñতিনটা দিন তোকে কল করে করে আমরা অস্থির। কোনো কিছু হয়েছে না তো, এই চিন্তায় তোর মায়ের প্রেসার বেড়ে গেছে।
Ñএখানে তিন দিন কারেন্ট নেই। এত অস্থির হওয়ার কী আছে!
Ñএত অস্থির হওয়ার কী আছে, না? আগে বাবা হও। তারপর বুঝবে অস্থির হওয়ার কী কারণ।
বাবার কথা শুনে চুপ হয়ে যায় বাদল। পিতৃত্ববোধ কেমন হয়, বাদলের জানা নেই। পিতৃত্ববোধ অন্য রকম হয় বলেই তো বাদলের বাবা তিন দিন ধরে বাদলের খোঁজ না পেয়ে আজ এখানে ছুটে এসেছেন।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী।


আরো সংবাদ



premium cement