১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মন মানে না

চারাগল্প
-

এবারের সম্বন্ধটাসহ মোট ছয়টি সম্বন্ধ বাতিল করেছে শ্বেতা। প্রতিটি সম্বন্ধ অতি ভালো ঘর থেকে আসার পরও মেয়ের এমন কর্মকীর্তি দেখে রহিম সাহেব মেয়েকে প্রশ্ন করলেন, ‘তোর কারো সাথে সম্পর্ক আছে?’ দ্বিধা আর লাজে রাঙা হয়ে শ্বেতা ছোট্ট করে বলে, ‘আছে।’ রহিম সাহেব কিছুক্ষণ কী যেন ভেবে মেয়েকে বললেন, ‘ছেলেটাকে আমার সাথে দেখা করতে বলো। আগে আমার পছন্দ হতে হবে।’
বাবার কথা শুনে বুকে খুশির নাচন ওঠে শ্বেতার। সে কল্পনাই করতে পারেনি বাবা এমন কিছু বলবেন। অনিলকে কল দেয় শ্বেতা।
Ñহ্যাঁ, বলো।
Ñএই গাধা। তোর সুখবর।
Ñকী?
Ñবাবা তোকে দেখতে চাইছেন।
Ñসত্যি?
Ñমিথ্যে বলছি নাকি গাধা! এখনই আয়।
Ñএখন? এখন তো বাইরে বৃষ্টি।
Ñআশ্চর্য, বৃষ্টি বেশি নাকি আমাদের প্রেম বেশি? তুই এখনই আয়। আমার মন মানে না।
Ñআচ্ছা।
লাইন কেটে দেয়ার পর শ্বেতার মনে হলো অনিলকে কিছু কথা বলা হয়নি। সাথে সাথে আবার কল দেয়।
Ñএই তুই কী পরে আসবি?
Ñপাঞ্জাবি।
Ñনা গাধা। পাঞ্জাবি পরে বিয়ে করতে আসবি নাকি?
Ñদু’দিন পর তো আমাদের বিয়েই।
Ñশোন, জন্মদিনে তোকে যে আকাশি রঙের শার্ট গিফট করেছি, ওটা পরে আয়।
Ñপ্যান্ট পরব?
Ñঅদ্ভুত। প্যান্ট পরবি না তো কি লুঙ্গি পরে আসবি?
Ñনা মানে, জিন্সের প্যান্ট?
Ñহ্যাঁ দ্রুত আয়। বাবার মন আবার কখন বদলে যায় কে জানে!
Ñওকে আসছি।
শ্বেতা খয়েরি শাড়ি পরেছে। কপালে লাল টিপ আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। বাইরে ঝড়ো হাওয়া আর অবিরাম বৃষ্টি। বৃষ্টি ঝরছে শ্বেতার মনেও। সুখের বৃষ্টি। জানালার কাচ গলে বিদ্যুৎ চমকানির আলো এসে যেন শ্বেতাকে বলে যায়Ñ‘অনিল শুধু তোমারই হবে।’

২.
উফ! অনিলটা আসছে না কেন! এত সময় পার হলো। শ্বেতা কল দেয় অনিলকে।
Ñকী হলো তোর, এত দেরি?
Ñঅনেক বৃষ্টি। বাড়ি থেকে বের হয়েছি কেবল। তালগাছের তলে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি রিকশার। আমাদের বাড়ির সামনে যে তালগাছগুলো আছে, ওই যে ফেসবুকে দেখছ না, সে গাছগুলোর তলে।
Ñউফ, আমার মন মানে না। জলদি আয়। পাখি হয়ে যা। উড়ে আয় জলদি।
ফোনটা রেখে শ্বেতা জানালার কাছে আসে। বাইরে এত বৃষ্টি আজ। সেই সাথে মেঘের গর্জন। এর চেয়ে বেশি গর্জন বাজছে শ্বেতার মনে। বাবা যদি অনিলকে পছন্দ না করেন! না, অনিলকে অপছন্দ করার মতো কিছু নেই। স্মার্ট ছেলে, সুন্দর ব্যবহার, ভালো স্টুডেন্ট, নম্রভদ্র, সব মিলিয়ে অনিলকে বাবা যোগ্য ছেলে হিসেবে ধরে নেবেÑ মনে মনে ভাবে শ্বেতা।
প্রায় এক ঘণ্টা পার হলো। অস্থিরতা বাড়ে শ্বেতার। অনিলের আসতে এত দেরি কেন? কল দেয় অনিলকে। অনিলের মোবাইল বন্ধ। আশ্চর্য, গাধাটা মোবাইল বন্ধ রেখেছে কেন! মেজাজ খারাপ হয় শ্বেতার।
সন্ধ্যার ছায়া নেমে আসে। অনিলের নাম্বার তখনো বন্ধ দেখে কান্না চলে আসে শ্বেতার। অনিল কেন মোবাইলটা বন্ধ রেখেছে!

৩.
না, অনিল আসেনি শ্বেতাদের বাড়ি। কপালের টিপ আর ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে ফেলে শ্বেতা। ঘড়ির কাঁটায় যখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা, ফেসবুক ওপেন করে সে।
হঠাৎ একটা নিউজ চোখে পড়ে শ্বেতার। মামুন নামে অনিলের এক বন্ধু অনিলের ছবি আপলোড করে এবং অনিলকে সে ছবিটা ট্যাগ করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘কেন এই বৃষ্টির মধ্যে তালগাছ তলে গেলি বন্ধু? তা না হলে আজ তুই বজ্রপাতে মরে গিয়ে আমাদেরকে এভাবে কাঁদাতি না। আল্লাহ তোকে জান্নাতবাসী করুন।’
নিউজটা পড়ে শ্বেতার পৃথিবী থরথর করে কেঁপে উঠল এবং হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে গেল। বাইরে তখনো অঝোরে বৃষ্টি আর বজ্রপাতের বিকট শব্দ।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী


আরো সংবাদ



premium cement