২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রেস্ট হাউজ : জীবনের বাঁকে বাঁকে

-

ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ার ও সেকেন্ড ইয়ার এই দুই বছর আমার জীবনের একটা কালো অধ্যায়। কলেজের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হলেও কলেজে যাওয়া হয়নি বেশির ভাগ সময়। বেশ কয়েকবার কলেজের স্যারেরা বাড়িতে ধরতে এসেছিলেন আমাকে। দুই মাস তিন মাস পর এক দিন কলেজে যেতাম। আর যদিও বা যেতাম বাজারে নয়তো কলেজের পাশের বাজারে ক্যারম খেলে আবার বাড়ি ফিরতাম। এমন রুটিনের আরো অনেকেই ছিল আমার দলে। তার মধ্যে নাসিম ভাই, মিঠুন, সঞ্জু মামা, অমিত ঠাকুর, অনন্ত, অভিজিত, অপূর্ব, সেলিম ও তাইনসহ ১৫-১৬ জনের একটা দল। গঙ্গারামপুর থেকে বেরইল কলেজ তিন কিলোমিটারের দূরত্ব¡। সাইকেলে আমাদের আসতেলেগে যেত দেড়-দুই ঘণ্টা। দুনিয়ার টালবাহানা করতে করতে আসতাম। এসে কালীবাড়ি বসে আড্ডা দিতাম। তখনকার সময়ে কালীবাড়ি আমাদের কাছে পরিচিত ছিল রেস্ট হাউজ নামে। কলেজে এলে ওখানেই রেস্ট নেয়া হতো। তখন কারো কারো ভিডিও ফোনও ছিল। ফোনে ফুল সাউন্ডে গান চালিয়ে হলিউড, বলিউড, ঢালিউড থেরাপি ফলো করে নাচানাচি চলত। তখন কালীবাড়িতে অনেক বড় বড় গাছ ছিল। মেহগনি, আমসহ আর কিছু গাছ। আমরা লুকোচুরি খেলতাম। গাছে উঠে, মন্দিরের পেছনে, কেউবা আবার সিঁড়ির তলে পালাতাম। এভাবে করতে করতে যখন দেখতাম সবাই কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছে, তখন আমরাও তাদের সাথে যোগ দিয়ে ভদ্রছেলের মতো বাড়ি ফিরতাম। আমাদের ভেতর তখন এমন ভাব বিরাজমান ছিল যেন আমরা সব কিছুর ঊর্ধ্বে। যেন সব বাধা পেরিয়ে আমরা মুক্ত আকাশে বাতাসের সাথে মিলেছি। তখন মনে হতো এভাবেই মনে হয় চলে যাবে জীবন। বুঝে আসত না আসলে কী করছি আমরা। এ রকম আমোদপ্রমোদেই কেটে গেল ইন্টারমিডিয়েট জীবন। রেজাল্টও দিলো আমাদের কৃতকর্মের। এবার শুরু হলো আর এক জীবন। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সংগ্রাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম ইন্টারমিডিয়েটের রেজাল্ট বিরাট ফ্যাক্ট। ওখানে খেলাম এক ধাক্কা। অনুশোচনার শুরুটা ওখান থেকেই শুরু। যা-ই হোক তবুও আশায় বুক বেঁধে যার যার মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভার্সিটি কোচিং করলাম সবাই। কোচিং শেষে সবাই নিরাশ হয়ে ফিরলাম আবার সেই পুরনো গন্তব্যে। অভিজিত একটা কথা বলেছিল, কত ভার্সিটিতে অ্যাডমিশন দিলাম কিন্তু কনগ্র্যাচুলেশন এসএমএস পেলাম না কোথাও থেকে। কী আর করা, নিরাশ হয়ে শুরু হলো আবার সেই আড্ডাবাজি। সবার বাড়ি বাজারের কাছাকাছি হলেও আমার আর তাইনের বাড়ি ছিল সবার থেকে দূরে। আমি আর তাইন সাইকেলে যেতাম। তাইনের সাথে আমার অনেক মিল। আড্ডায় আসার জন্য তাইনেরও ধান্দায় থাকতে হতো যে কখন ও সাইকেল ভাগে পায়। ঠিক আমার বেলায়ও সেই একই অবস্থা বাড়িতে সাইকেল একখান আব্বু নিয়ে বেড়ায়। ধান্দায় থাকতে হতো কী করে সাইকেল পাওয়া যায়। আমরা সবাই বিকেলে জড়ো হয়ে রোজ এখানে-সেখানে ঘুরতে যেতাম তখন। কখনো নদী পার হয়ে ওপাড়ে যেতাম, কোনো দিন ও মাঠে আর কোনো দিন এদের ওদের বাড়ি এটাওটা খেতে। আর যে দিন কোনো শিডিউল থাকত না, সেদিন সবাই সোজা চলে যেতাম রেস্ট হাউজ খ্যাত কালীবাড়িতে। একদম নিরিবিলি জায়গা। যতক্ষণ শান্তিতে থাকা যায়। তৃপ্তি মিটিয়ে হাসি-তামাশা ফাজলামি করা যায়। এভাবেই কেটে গেল দু’টি বছর। একই রুটিনে। ধীরে ধীরে অনার্সের পড়াশোনার চাপে বাড়ি ছাড়তে হলো সবার। আড্ডাটা বন্ধ হয়ে গেল। এরপর বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান যেমন দুই ঈদ আর পূজায় সবাই বাড়ি আসে, তখন একটু এক জায়গায় হওয়া যায়। তা ছাড়া এখন আর সবাই এক জায়গায় একত্র হওয়া হয়ে ওঠে না। কেউ আসে তো কেউ বাড়িতে আসেনি। বহু বছর পর সেদিন বন্ধু তাইনের নতুন বাইকে গিয়ে হাজির হলাম কালীবাড়িতে আমাদের রেস্ট হাউজে। যেতেই মনের ভেতর দোলা দিয়ে ভেসে উঠতে লাগল হাজারও স্মৃতি, হাজার কথা। হাজারও মজার কাহিনী। আমরা ঠিক সেই জায়গাটায় বসলাম যেখানে আগে বসতাম সিঁড়িতে। হঠাৎ মন্দিরের দেয়ালে চোখ যেতেই ধরা পড়ল ইট দিয়ে লেখা রেস্ট হাউজ। যেটা আট বছর আগে লিখেছিলাম। তখন তাইন আর আমি বাকরুদ্ধ হয়ে একে অন্যের দিকে বারবার তাকাচ্ছিলাম।
এ জন্যই বলতে হয় সময় চলে যায়, জীবন পাল্টে যায়, ইতিহাস বিগড়ে যায়; কিন্তু স্মৃতি স্মৃতিপটে যুগের পর যুগ বেঁচে থাকে ভালোবাসায়।


আরো সংবাদ



premium cement
জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব থাকবে বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি বাগাতিপাড়ায় ইসতিসকার নামাজ পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন : বাকৃবি অধ্যাপক বৃষ্টির জন্য হাকাকার, সাভারে ইসতিসকার নামাজ আদায় বরিশালে সালাতুল ইসতিসকার আদায় অর্ধ শতাব্দীতে ভ্যাকসিন সাড়ে ১৫ কোটি লোকের জীবন বাঁচিয়েছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আল্লাহর রহমত কামনায় সকলকে সিজদাহ অবনত হতে হবে-মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন কাউখালীতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা

সকল