২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোজার বিকেলে : চারাগল্প

-

আজ দিনটা যা গেল! প্রচণ্ড তাপদাহ। ভ্যাপসা গরম। এই রকম একটা দিনে রোজা রেখে কাজ করা চাট্টিখানি কথা! পিপাসায় ছাতি ফেটে যায়। চোখে সরষে ফুল ভাসে। মতি মিয়া ক্ষুৎপিপাসা ভরা শরীর নিয়ে হাঁটে এবং দ্রুতই হাঁটে। ইফতারের আগেই বাড়ি ফিরতে হবে তাকে। ইফতারের সময় আর বেশি নেই। মাত্র ১১ মিনিট। পথ এখনো ঢের আছে। ঘড়ি দেখে আরো দ্রুত পা চালায় মতি মিয়া।
জুতার দোকানে চাকরি করে সে। গতকাল রাতে দোকান থেকে বাড়ি ফিরে দেখে ছেলে রুহান ঘুমিয়ে পড়েছে। অথচ সে দোকান থেকে ফেরার আগে কোনো দিন ঘুমায় না ছেলে, জেগে থাকে। তার জন্য অপেক্ষা করে। সে বাসায় ফিরলে আজ কী কী লেখাপড়া করেছে সব পড়ে শোনায়, তারপর ঘুমায়। অথচ সেই ছেলে আজ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
মতি মিয়া বলল, ও রুহানের মা, রুহান ঘুমাই পড়ছে যে! তার কী শরীরডা খারাপ?
না, রুহানের বাবা।
তাইলে ঘুমিয়ে পড়েছে ক্যান?
ছেলে বায়না ধরেছিল। ইফতার খাবে। বুট, বুন্দিয়া, বেগুনি, বড়া খাবে। ওসব খাওয়ার জন্য কান্না করছিল। কান্না করতে করতে ঘুমাইয়া গ্যাছে।
মতি মিয়ার বুকটা হু হু করে ওঠে। ঘুমন্ত ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে। মন খারাপ করিও না বাপজান, আমি কাইল তোমার জন্য ইফতার আনব। তোমাকে ইফতারি খাওয়াব।
পরের দিন দোকানে গিয়ে মহাজনকে বলে, মহাজন চাচা, আজ আমাকে ইফতারের আধা ঘণ্টা আগে ছুটি দিতে হবে।
কেন?
আমার ছেলে কাল বায়না ধরেছিল ইফতার খাবে। আমি তারে কথা দিয়েছি, আজ তার জন্য ইফতারি কিনে নিয়ে যাব।
ওসব ন্যাকামি বাদ দাও মতি মিয়া, সামনে ঈদ। দোকানে কাস্টমারের চাপ। ছুটি দেয়া যাবে না।
মতি মিয়া গোঁ ধরে। সে যাবেই। বলল, আমাকে যেতেই হবে চাচা।
আচ্ছা ঠিক আছে। আধা ঘণ্টার মধ্যে চলে আসবে।
ঠিক আছে।
মাস শেষ। মতি মিয়ার হাতে টাকা নেই। একজনের কাছ থেকে ৫০ টাকা ধার নেয় সে। ইফতারি কেনে। তারপর দ্রুত পায়ে বাসায় ছোটে।
ইফতারি দেখে ছেলের চোখ খুশিতে চিকচিক করে ওঠে। হেসে কুটি কুটি যায়। বলে, আমি সব খাবো বাবা।
মতি মিয়া ছেলের কথা শুনে হাসে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বলে, খাও বাপজান।
ছেলে সব ইফতারি সামনে নিয়ে বসে। পেটপুরে খায়।
খাওয়া শেষে বলল, বাবা, তুমি কিন্তু আজ আর দোকানে যাবা না। আমার কাছে থাকবা। আমি তোমাকে বই পড়ে শোনাবো।
আজ সারা দিন যা গরম গেল! ইফতার করে মতি মিয়ার শরীরটা ভেঙে পড়ে। অলস লাগে। দোকানে যেতে ইচ্ছে করে না। বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। চোখ বুজে আসে। ঘুমিয়ে পড়ে।
ফোনের রিংটোন শুনে ঘুম ভাঙে তার। ফোন হাতে নিয়ে দেখে মহাজনের ফোন।
মতি মিয়া, কই তুমি?
ইফতার করে শরীরটা খুব খারাপ লাগছিল। একটু শুয়ে ছিলাম।
ঠিক আছে, তুমি শুয়ে থাকো। তোমাকে আর দোকানে আসতে হবে না। আমি নতুন লোক ঠিক করেছি। বলেই লাইন কেটে দিলো মহাজন।
মতি মিয়ার মন খারাপ হয়ে যায়। বুক ফেটে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
ছেলে কাছে আসে। বলে, মহাজন ফোন করেছিল বাবা?
হ্যাঁ।
বকা দিলো তোমাকে?
মতি মিয়া বলল, কিছু না বাপজান। তুমি একটু বই পড়ো, শুনি।
ছেলে বই পড়ে। মতি মিয়া ছেলের পড়া শোনে। শুনেই মন ভরে যায়। ভুলে যায় তার যে চাকরিটা আর নেই।
সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর


আরো সংবাদ



premium cement