২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্মৃতির সেই সব রমজান জীবনের বাঁকে বাঁকে

-

প্রতি বার যখন বছর ঘুরে রমজান আসে, মনে পড়ে শৈশবকে। শৈশবের রমজান ছিল অন্য এক আবেশের। বেশ আয়োজন করে সন্ধ্যায় ইফতারিতে বসতাম পরিজনদের সাথে। তখন নিয়ম করে ৩০ রোজা না রাখা হলেও চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকত না। মুখে রোজা রেখে এক অধীর আগ্রহ ছিল ঈদের জন্য। ১৫তম রোজা পার হলে উদ্বিগ্ন হতাম ঈদের জামার আশায়।
ভোরে সেহেরির জন্য আম্মা তাগিদ দিলে ঘুমকাতুরে চোখে বিছানা ছাড়তাম। মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের আজানের ডাক পড়বে বলে দ্রুত সেহেরি খেয়ে চলে যেতাম মসজিদে। সারা পাড়ার মুসল্লিতে ভরে যেত মসজিদের ভেতর থেকে বারান্দা অবধি।
কিশোরবেলায় রোজা রাখাটা ছিল বড় কষ্টসাধ্যের। বেলা পড়ার সাথে সাথে রোজা ভাঙার কৌশল খুঁজতে গেলে আম্মা বারণ করতেন। রোজা ভাঙলে পরকালে কী কী শাস্তি হবে, আম্মা সব ব্যাখ্যা করতেন। কুরআন পাঠের তাগিদ দিতেন। পরিবার থেকে যারা বিদায় হয়েছেন, তাদের কবর জিয়ারত করার নির্দেশ দিতেন। আম্মার সেসব নির্দেশ পালনে বেশ সক্রিয় ভূমিকা রাখতাম।
২০১১ সালের ১৩ রমজান আমার জীবনের এক তিক্ত অভিজ্ঞতার সময়। সে বছর রোজা আসার আগ থেকে আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। একাধিক ডাক্তারের চিকিৎসার কাছেও আম্মার রোগমুক্তি না হয়ে ক্রমেই বাড়তে লাগল। রোগের সাথে যুদ্ধ করতে করতে অনেকটা পরাজিত আম্মাকে যখন হাসপাতালে নেয়া হলো, সেই শীতময় রমজানের সকালে, আমি তখন এসএসসির ফরম পূরণের জন্য নাজিম স্যারের সামনে কঠিন ব্যস্ত সময় পার করছি।
এমন সময়ে আচমকা কানে আসে হাসপাতাল থেকে আম্মার মৃতদেহ বাড়িতে আনার ব্যথিত সংবাদ। সেই সময়ে এমন নিষ্ঠুর সংবাদ শোনার পর নিজের ভেতরটা কতখানি ভাঙতে ভাঙতে আমি কঠিন মুহূর্ত পার করেছি, সে গল্প অন্য দিন বলব।
সারা দিনের রোজা রাখার সব ক্লান্তি আর চোখের পানিকে পেছনে ফেলে রাতেই দাফন হলো আম্মার। মনে আছে, সে ছিল এক রুপালি চাঁদের আলো ছড়ানো ঝলমলে রাত। আশ্চর্য, এমন একটা সুন্দর রাতে আমরা আম্মাকে দাফন করেছি আর আমাদের মন ছিল ভীষণ খারাপ।
তারপর জীবনের লম্বা পথ চলতে চলতে আজ বয়স ঠেকেছে ৩০ পেরিয়ে। প্রতি বছর রমজান আসে। ১৩ রমজান স্মৃতি হয়ে গেল সারা জীবনের জন্য।
এখনো আসে রমজান। বদলেছে সময়। বদলেছি আমরা। ফেসবুকে আমাদের রাতজাগা পাখি বানিয়েছে। রাতভর ফেসবুকের আড্ডা জমতে জমতে এখন সেহেরি খাওয়ার সময় হয়ে যায়।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী


আরো সংবাদ



premium cement