২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুর্ভাগা বস্তিবাসী

-

নদীভাঙন, জলবায়ুজনিত উদ্বাস্তু ছিন্নমূল মানুষের ঠাঁই নগরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বস্তিতে। দিনমজুরি ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে ঘর-সংসার সাজায় তারা। স্বপ্ন বুনে বস্তিতে। দিনে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পরিজন নিয়ে ঠাসাঠাসি করে রাত যাপন করে বস্তির ঘুপরি ঘরে। ঠিকানা বলতে বস্তিবাসীদের সেটুকুই। কিন্তু উচ্ছেদ আর আগুন বস্তিবাসীদের পিছু ধাওয়া করে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। বারবার উদ্বাস্তু হয় এসব মানুষ।
২০১৫ সালের বস্তিশুমারি অনুযায়ী, দেশে বস্তিবাসীর সংখ্যা সাড়ে ২২ লাখ। তাদের মধ্যে চট্টগ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি বস্তিতে বাস করেন তারা। সরকারি জমিতে এসব বস্তি গড়ে উঠলেও সেখানকার ঘরের মালিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকর্মী। স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি-পয়ঃনিষ্কাশন কিংবা শিক্ষার ন্যূনতম সুবিধা না থাকলেও বস্তিবাসীদের প্রতি মাসে গুনতে হয় ভাড়া। মাথা গোঁজার যেটুকু জায়গা এবং অপ্রতুল যে নাগরিক সুবিধা, তার বিনিময়ে তাদের যে টাকা গুনতে হয়; চট্টগ্রামের অনেক বাসিন্দার তুলনায় তা বেশি।
সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা বস্তিগুলো নানা সময় হাতবদল হয়। বস্তি ঘিরে দখলদার সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে হানাহানির কারণে অনেক সময় ঘটে সঙ্ঘাত-রক্তপাত। এসব হিংসার আগুন গিয়ে পড়ে বস্তির ওপর। আগুন দেয়া হয় বস্তিতে। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম নগরীতে তিনটি বস্তি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বস্তির ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, ঠাণ্ডা মাথায় আগুন লাগানো হয়েছে। তাদের তাড়াতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এ আগুন নাশকতার। ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন মির্জাপুল এলাকায় ডেকোরেশন গলির একটি বস্তিতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও আগুন বাবু কলোনি, খোকন কলোনি, শওকত নেওয়াজ কলোনি এবং মো: হোসেন কলোনিতে ছড়িয়ে পড়ে। এসব কলোনির ১৬৫টি টিনশেড ঘর পুড়ে যায়। ৭০০ মানুষকে আশ্রয়হীন করে দেয়। আগুনের সূত্রপাত কিভাবে ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিক তদন্তে তা বলতে না পারলেও বস্তিবাসীর অভিযোগ, সেখানে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। একই সাথে দুই দিকে আগুন জ্বলে ওঠার কথা বলছেন তারা। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এ অভিযোগ অমূলক নয় বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
গত ১ জানুয়ারি সেই মির্জাপুলসংলগ্ন ডেকোরেশন গলির ওই বস্তিতে আগুন লাগে। এতে ২০০ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুনে হতাহত না হলেও পুড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে তিলে তিলে টাকা বাঁচিয়ে গড়ে তোলা সম্বলটুকু। বস্তিগুলো নিয়ে দু’টি পক্ষের মধ্যে মামলা চলছে বলে দাবি করেন বস্তিবাসী। তারা বলছেন, অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে পাশাপাশি দু’টি বস্তিতে যে ভয়াবহ আগুন লেগেছে; এর পেছনে নাশকতা থাকতে পারে। এসব সন্দেহের পেছনে বস্তিবাসীদের মাঝে অবশ্য আগের অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। চট্টগ্রামের বস্তি উচ্ছেদে ‘আগুন থেরাপির’ ব্যবহার অনেক পুরনো।
গত ৩ জানুয়ারি নগরীর মাদারবাড়ির মাঝির ঘাট এলাকায় সিআরবি বস্তিতে আগুন লেগে বিরানভূমিতে পরিণত হয়। সেখানে আনুমানিক ২৫০-৩০০ ঘর ছিল। প্রাণহানি না হলেও প্রাণ সচল রাখতে বস্তিবাসীর যে সহায়-সম্বল, আগুনে পুড়ে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। অগ্নিকাণ্ডে ছাই হয়ে টিনের নিচে চাপা পড়ে আছে ৩০০ পরিবারের স্বপ্ন। বস্তির অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে বস্তিবাসীদের কেউ কেউ বলছেনÑ বস্তি উচ্ছেদে কেরোসিন ঢেলে লাগিয়ে দেয়া হয় আগুন। এর আগে গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর বাকলিয়া থানার চাক্তাই ভেড়া মার্কেট এলাকার একটি বস্তিতে আগুনে আটজন নিহত হন। পুড়ে যায় ভেড়ামার্কেট বস্তির অন্তত ২০০ কাঁচা ঘর। সেবারও অভিযোগ ওঠে ঠাণ্ডা মাথায় আগুন লাগিয়ে দেয়ার। এর সপ্তাহ না যেতেই পাশের আরেকটি বস্তি আগুনে পুড়ে যায়। একই বছর সদরঘাটে সাহেবপাড়া বস্তি পুড়ে যায়। একের পর এক বস্তি পুড়ে যওয়ার নেপথ্যে ‘পোড়ানো থেরাপি’ কাজ করেছে। তবে বস্তিবাসীদের নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের অভিযোগ, পরিকল্পিত উচ্ছেদের অংশ হিসেবে বস্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
বস্তিগুলোতে যে ঘন ঘন আগুন লাগছে এসব ঘটনার একটা বড় অংশের পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে; এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক বস্তিতেই দেখা যায় পুড়ে যাওয়ার পর সেখানে অন্য কোনো স্থাপনা উঠেছে। আবার অনেক জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের পর বস্তিতে নতুন ঘর উঠলেও মালিকানা বদলে যায়। আগের দখলদারদের স্থলে নতুন দখলদার চলে আসে। একইভাবে পুরনো বস্তিবাসীরাও উচ্ছেদ হন।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনবিদদের মতে, বস্তিবাসীদের আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তারপর উচ্ছেদের ব্যাপারে আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ না মানে তাহলে আদালতের আদেশ অমান্য করার জন্য আদালত অবমাননার আবেদন করা যায়।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সর্বশেষ নির্বাচনের আগে বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের কথাও বলা হয়েছে। বস্তিতে থাকা বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য সম্মানজনক আবাসন তৈরিতে সরকারকে ভাবতে হবে। হ
লেখক : সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement
কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে : কৃষিমন্ত্রী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৪ ভান্ডারিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু

সকল