২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিসিএসের পেছনে জীবনপাত

-

মানবজীবনে একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ হলো অর্থ উপার্জন করা। এর জন্য প্রয়োজন পেশার, যার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। পেশা হতে পারেÑ চাকরি, ব্যবসায়, কৃষিকাজসহ অনেক কিছু।
দেশে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ ধরনের চাকরি পেতে শিক্ষিত প্রায় সবাই মরিয়া হয়ে উঠেপড়ে লাগেন। সেই সোনার হরিণটি আর কিছু নয়Ñ বিসিএস। আমাদের ভাবনা এমনÑ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে সব দুঃখ-কষ্ট দূর এবং সব মুশকিল আছান করবে। অনেকের কাছে জীবনের একমাত্র ইচ্ছায় পরিণত হয় বিসিএস। এর জন্য জীবনপাত করেন বহু শিক্ষিত তরুণ।
ভোগবাদী সমাজে মানুষ স্বভাবতই আর্থিক সচ্ছলতা চায় বেশি। এখন টিকে থাকতে হলে তার দরকার সম্মান, অর্থ, সামাজিক মর্যাদা, ক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি। এসব করতে একজন শিক্ষার্থী চান বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে। কিন্তু যথাসাধ্য চেষ্টার পরও অনেকে পারছেন না লক্ষ্যে পৌঁছাতে। এতে বাকিটা জীবন হতাশায় কাটে। ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’ নামের বিসিএসের পেছনে শুধু ছুটে চলার কোনো অর্থ আছে কী না, তা ভাবার সময় এসেছে দেশের ছাত্রসমাজের। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে, করপোরেট দুনিয়ায়। এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে দরকার সৃজনশীল কিছু করা।
আমাদের ছাত্রসমাজের শুধু চাকরির প্রতিযোগিতায় ‘ইঁদুর দৌড়ের’ ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নির্ধারিত শিক্ষাগ্রহণে অনাগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী সম্মান প্রথম বর্ষে এসেই লাইব্রেরির দিকে ছোটে বিসিএসের পড়াশোনা করার জন্য। উদ্দেশ্য থাকে, ক্যাডার সার্ভিসে নিজের নাম লেখানো। অনেক সময় তার আচরণে প্রকৃত শিক্ষার ছাপ পাওয়া যায় না। শিক্ষা তার কাছে হয়ে ওঠে চাকরি পাওয়ার একমাত্র হাতিয়ার। তাই তো শিক্ষা ‘সার্টিফিকেট’ হয়ে বের হয়ে আসছে, ‘জ্ঞান’ হয়ে নয়।
মন্দ বিষয় হলোÑ আমরা শুধু একটি ক্ষেত্রের প্রতি অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। বিসিএস ছাড়াও যে আরো অনেক কিছু করার আছে; তা অর্জনে তেমন চেষ্টা করছি না। এ থেকে উত্তরণের পথ হচ্ছে, কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে বিসিএসের চাপটি কমিয়ে আনা। দরকার মানসিকতার পরিবর্তন। দরকার চাকরিভিত্তিক পড়াশোনা না করে জীবনভিত্তিক পড়াশোনা করা। যেকোনো পেশাকে সমান শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখা। মনে রাখা জরুরিÑ জীবনের প্রয়োজনে চাকরি, চাকরির জন্য জীবন নয়। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement