২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কপোতাক্ষ নদের এ কী দশা

-

বাংলা সাহিত্যে অনন্য প্রতিভার অধিকারী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের এখন চরম দুর্দশা। মধুকবি বিদেশ বিভুঁইয়ে বসে এ নদের কথা ভেবে লিখেছিলেনÑ ‘সতত হে নদ, তুমি পড় মোর মনে /... বহু দেশ দেখিয়াছি, বহু নদ দলে/কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?’ কপোতাক্ষ নদ যশোর, সাতক্ষীরা আর খুলনার ২০টির বেশি উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে। ব্রিটিশ আমলে নদটির দৈর্ঘ্য ছিল ২৫০ কিলোমিটার। এক সময়ের প্রমত্তা কপোতাক্ষ ৭৫০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত ছিল। কিন্তু দখল, দূষণ আর ভরাটের কবলে পড়ে বর্তমানে কপোতাক্ষের প্রস্থ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার।
এক সময় এ নদের অববাহিকার অধিবাসীদের জীবন-জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস ছিল কপোতাক্ষ। কপোতাক্ষ দিয়ে নৌকা ও লঞ্চযোগে পণ্য আনা-নেয়া করা হতো। নদটি শুধু স্থানীয় জেলেদের জীবন-জীবিকার সাথে জড়িত ছিল না, এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম ভিত্তিও ছিল কপোতাক্ষ। এর দুই পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ স্থাপনা। নদের ওপর দিয়ে কয়েক কিলোমিটার পরপর তৈরি করা হয়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী সেতু। যশোরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদের অংশে বিভিন্ন স্থানে বাঁশের পাটাতানের বেড়া দেয়া হয়েছে। নদের কোনো কোনো অংশ কচুরিপানায় ভরে গেছে। নদে জমছে পলি। কোনো কোনো স্থান বিভক্ত করে ঘেরসহ ব্যাপকভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে। কেউ বা নদ দখল করে গড়ে তুলেছেন ঘরবাড়ি। অনেকে করছেন সবজির চাষ। নদের খাত দখল করে কেউ বানিয়ে ফেলেছেন পুকুর, যে যেভাবে পারছেন দখল করছেন। নামে-বেনামে নদ দখল চলছে!
এ নদের বেশির ভাগ অংশে পলি জমে চর পড়ে গেছে। গ্রীষ্মে নদের পানি শুকিয়ে গেলেও বর্ষায় পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় তা আশপাশের বসতবাড়ি ও ফসলের ক্ষেত প্লাবিত করছে। সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকেও মাটি লুট হচ্ছে। খুলনার পাইকগাছার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষের কোনো কোনো অংশ ভাঙনের কবলে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক পরিবার। এখনো ভাঙনের কবলে দুই পাড়ের মানুষের দুঃখের সীমা থাকে না। অনেক প্রতিষ্ঠান কপোতাক্ষের ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া নদে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। এতে করে নদটি যেমন ভরাট হচ্ছে; তেমনি দূষিত হয়ে পড়ছে।
নদটি খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খনন করা মাটি দুই পাড়ে রাখায় বর্ষাতে ফের তা কপোতাক্ষে এসে পড়ছে। পরিকল্পনা না থাকায় এমনটি হচ্ছে। যেখানে খনন করার কথা সেখানে না করে অন্য স্থানে খনন করা হচ্ছে। মূল কপোতাক্ষ ছিল অনেক প্রশস্ত। কিন্তু নদটি কম প্রশস্ত করে খনন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে কপোতাক্ষ অনেক সরু হয়ে গেছে।
নদটি রক্ষাসহ স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতে পরিকল্পিত খননের ওপর জোর দিতে হবে। এর ওপর দখল-দূষণ চলতে থাকলে তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হবে মারাত্মক। সবার আগে তীরবর্তী মানুষের নদবিধ্বংসী কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে নদ রক্ষা ও এর উপকারিতার কথা বলে মানুষের সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজে লাগাতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নদ রক্ষার ব্যাপারে আরো বেশি আন্তরিক হওয়ার বিকল্প নেই। হ
লেখক : পরিবেশকর্মী
sadonsarker2005@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement