২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
প্রসঙ্গ : ব্লু-ইকোনমি

সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

-

ব্লু-ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্র সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সাগরের অজস্র জলরাশি ও এর তলদেশের বিশাল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের স্বপ্ন পূরণে এক অর্থনৈতিক বিপ্লব। পৃথিবীর তিন ভাগ জল। পৃথিবীর দেশগুলো তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতে তাকিয়ে আছে সমুদ্র বক্ষে সঞ্চিত সম্পদের দিকে। ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে প্রায় ৯০০ কোটি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাবার জোগান দিতে বাধ্য হয়েই তখন সমুদ্রের মুখাপেক্ষী হতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সমুদ্র অর্থনীতি বহুবিধ অবদান রেখে চলেছে। বিভিন্ন তথ্য মতে, বিশ্বের ৪৩০ কোটিরও বেশি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। পৃথিবীর ৩০ ভাগ গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে সমুদ্র তলের বিভিন্ন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে। সমগ্র বিশ্বে ক্রমেই ব্লু-ইকোনমি জনপ্রিয় হচ্ছে। অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে সমুদ্র অর্থনীতি ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছে দেশ। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অর্থনীতির বেশির ভাগ সমুদ্রনির্ভর। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি এমনকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা গেলে সমুদ্র থেকে আহরিত সম্পদের মূল্যমান জাতীয় বাজেটের ১০ গুণ হবে। অপর দিকে অস্ট্রেলিয়া সমুদ্র সম্পদ থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে থাকে। আর ২০২৫ সাল নাগাদ এই আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে সমুদ্রনির্ভর ব্লু-ইকোনমির বদৌলতে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই মূল্যবান সম্পদকে কতটুকু কাজে লাগাতে পারবে আর এসব সম্পদ আহরণে কতটা সক্ষম বাংলাদেশ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রে শুধু মাছই রয়েছে প্রায় ৫০০ প্রজাতির। এ ছাড়াও শামুক, ঝিনুক, শ্যালফিস, কাঁকড়া, অক্টোপাস, হাঙ্গরসহ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী। যেগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অর্থকরি ফসল হিসেবে চিহ্নিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রাণিসম্পদ ছাড়াও ১৩টি জায়গায় আছে মূল্যবান বালু, ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম। এগুলোতে মিশে আছে ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমেনাইট, জিরকন, রুটাইল ও ম্যাগনেটাইট। এসব সম্পদ অতি মূল্যবান। তা ছাড়া সিমেন্ট বানানোর উপযোগী প্রচুর ক্লে রয়েছে বাংলাদেশের সমুদ্র তলদেশে। ক্রমাগত সম্পদ আহরণের ফলে বিশ্বে স্থলভাগের সম্পদের পরিমাণ কমে গেছে। তাই নতুন সম্পদের খোঁজে রয়েছে সারা বিশ্ব। সমুদ্র নিয়ে গবেষণা করা বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেভ আওয়ার সি’র তথ্যানুযায়ী, সমুদ্র থেকে মাছ ধরে শুধু বিদেশে রফতানি করেই শত শত কোটি ডলার আয় সম্ভব। গভীর সমুদ্র থেকে আহরিত টুনা মাছ সারা বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়। সুস্বাদু ও দামি এই মাছটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের হোটেলগুলোতে আমদানি করা হয়ে থাকে। এই মাছগুলো সঠিকভাবে আহরণ করতে পারলে নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশে রফতানি করাও সম্ভব। এ ছাড়া মাছ থেকে খাবার, মাছের তেল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, সস, চিটোসান তৈরি করা সম্ভব, যাতে নতুন ধরনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তা বিদেশে রফতানি করেও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব যা জাতীয় অর্থনীতিতে কল্পনাতীত অবদান রাখবে। সরকারের এসডিজির ১৪ নম্বর ধারায় টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক সম্পদের অনুসন্ধান ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। আর তাই ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণের জন্য এই সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমান সরকার ব্লু-ইকোনমির মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এই সমুদ্র সম্পদ আহরণের দায়িত্বে রয়েছে। সমুদ্র অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করতে সরকার সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যকে ব্যবহার করে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন এবং কুয়াকাটার পর্যটন শিল্পকে আরো বিকশিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য কক্সবাজার ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টর্মাটিনকে আর্কষণীয় করে তুলতে পারলে এ অঞ্চলে বিদেশী পর্যটকদের ঢল নামবে। বাংলাদেশে রয়েছে ১২০ কিলোমিটারের পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। এই সমুদ্রসৈকতকে ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে পারলে গোটা বাংলাদেশই বদলে যেতে পারে। এ ছাড়া কৃত্রিমভাবে বাঁধ তৈরি করে পলি মাটি জমাট/চর জাগানোর মাধ্যমে সৃষ্ট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে মালদ্বীপের মতো দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলাও সম্ভব। এতে দেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিকতা পাবে। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও-এর হিসাবে ২০১৬ সালে বঙ্গোপসাগর থেকে ৮০ লাখ টন মাছ ধরা হলেও বাংলাদেশ ধরতে পেরেছে মাত্র ৯৫ হাজার টন। কারণ, দেশের ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসীমার মধ্যে মাছ ধরার সীমা ৩৭০ কিলোমিটার। অথচ বাংলাদেশের জেলেরা যেতে পারেন কেবল ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত। সমুদ্রের তলদেশের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদ ব্যবহার করতে হলে যে পরিমাণ দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তির দরকার, এখনো আমাদের সেই পরিমাণ জনশক্তি ও প্রযুক্তি নেই। তবে ব্লু-ইকোনমিকে কাজে লাগাতে হলে সরকারকে দ্রুতই আরো মনোযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে এরই মধ্যে ভারতের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও হয়েছে। সমঝোতা চুক্তি করতে প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আগ্রহ রয়েছে জাপানেরও। এ ছাড়া হাতে নেয়া হয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজ। এর বাইরে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। সব মিলিয়ে আশা করা যাচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে ব্লু-ওসান ইকোনমি বা নীল সমুদ্র অর্থনীতি। হ
লেখক : প্রকৌশলী ও লেখক
ই-মেইল : nazmulhussen@yahoo.com

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধান বিরোধী নয় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুরের ইন্তেকাল থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সাথেপ্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে : নসরুল হামিদ গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের

সকল