২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বেকারত্ব মোচনে চাই দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ

-

আগ্রহ ও সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোনো কর্মক্ষম ব্যক্তির কাজ খুঁজে না পাওয়ার পরিস্থিতিকে বলা হয় বেকারত্ব। সাত বছরে এ হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি।
ধরন অনুসারে বেকারত্বকে বেশ কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ স্থায়ী বেকারত্ব, অস্থায়ী বেকারত্ব, সাময়িক বেকারত্ব, মওসুমি বেকারত্ব প্রভৃতি। যে ধরনের বেকারত্বই হোক, এ পরিস্থিতি ব্যক্তি তো বটেই, পরিবার, দেশ, জাতির জন্য গুরুতর সমস্যা। অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এ সমস্যা প্রকট। আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ। কোনো দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে কাজে না লাগালে অর্জিত উন্নয়ন টেকসই হয় না। গত দশকে দেশের মানুষের জীবন মানে উন্নয়ন হয়েছে। কয়েকটি সূচকেও উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু বেকারত্ব দূরীকরণে অগ্রগতি কাক্সিক্ষত না হওয়ায় তা উদ্বেগজনক হারে দিন দিন বাড়ছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আঞ্চলিক কর্মসংস্থান নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশে এ হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গত বছর প্রকাশিত বিবিএসের (২০১৬-১৭) জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা চার কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার। ৭৮ লাখ বাংলাদেশী বর্তমানে বিদেশে কর্মরত। অন্য আরেকটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ বেকার। আর এমন বেকারত্বের দেশে তিন লাখ বিদেশী নাগরিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। প্রতি বছর তারা প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে। এক দিকে বাংলাদেশী শ্রমিক বিদেশে কঠোর শ্রম আর ঘাম ঝরিয়ে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। অন্য দিকে তাদের পাঠানো প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণ অর্থ প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন এখানে কর্মরত বিদেশীরা। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল এবং বেকারত্বে জর্জরিত দেশে এ বিপরীত চিত্র সত্যিই পীড়াদায়ক।
গার্মেন্ট, টেক্সটাইল ও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাজারো ভারতীয় বাংলাদেশে কর্মরত আছেন। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ভারত এ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে প্রতি বছর।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের কর্মক্ষেত্রে বাড়ছে বিদেশী কর্মকর্তার সংখ্যা। কারণ একটাই, নিয়োগকারীরা দক্ষ জনশক্তি দেশে পাচ্ছেন না। ভারতীয়সহ বিদেশীরা কর্মরত থাকলেও এ অবস্থা থেকে উত্তরণ তথা দক্ষ জনবল গড়ে তোলার বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া উচ্চশিক্ষার সাথে বাস্তবতার সমন্বয়হীনতা ও শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি কয়েক বছর ধরে বহুল আলোচিত একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দেশে বেকারত্বের মূল কারণ জনসংখ্যা বাড়ার অনুপাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়া। তবে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাড়ছে এ সংখ্যা।
বিনিয়োগের অভাব, আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি না হওয়া, কাক্সিক্ষত হারে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি না হওয়া, জাতীয় অর্থনীতির বিকাশে ধীর গতি, দক্ষ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার অভাব, দুর্বল ভূমিব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, কায়িক শ্রমে অনীহা, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা কারণে বাড়ছে বেকারত্ব। কাজ না পেয়ে শিক্ষিত অনেক যুবক আইনবিরোধী নানা ধরনের অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া দেশের নানা প্রান্তে প্রায়ই আত্মহত্যার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কথা শোনা যায়। বেশির ভাগ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী ঠিক সময়ে বিয়ে করতে পারছেন না।
আমাদের দেশে চাকরির ক্ষেত্র একেবারেই কম তা বলা যাবে না। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই এখনো যে পরিমাণ পদ খালি রয়েছে; তা পূরণ করতে পারলে দ্রুত বেকারত্ব সমস্যা কিছুটা সমাধান হয়। এ সমস্যা সহনীয় পর্যায়ে আসতে পারে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সরকারি ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দফতরে এখনো তিন লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৬টি পদ খালি রয়েছে। আর শিল্পায়নের কারণে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অনেক পদ খালি। এখানেও অসংখ্য পদে দক্ষ লোক দরকার। অথচ আমাদের দেশে নেই একটি গ্রহণযোগ্য নিয়োগবিধি। বেকারত্বের আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছেÑ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সীমা ৩০ বছর পর্যন্ত থাকা। উচ্চশিক্ষিত তরুণেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার পরই হাতে থাকা দুই-তিন বছর। চাকরি পেতে পেতে বা চাকরির প্রস্তুতি নিতে সেই সময় ফুরিয়ে যায়। ফলে তারা না অর্জন করতে পারে অভিজ্ঞতা, না পায় দক্ষতা অর্জনের সুযোগ। তাই এসব সমস্যা দূর করতে চাকরিতে প্রবেশের সীমা না থাকাটাই যৌক্তিক বলে মনে করি।
দেশের বিপুল জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে না পারার দায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও সরকার এড়াতে পারে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ৬০ শতাংশও কর্মমুখী নয়। কাজের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এমন শিক্ষাব্যবস্থা কখনোই বেকারত্ব দূর করতে অনুকূলে নয়। দেশে শিক্ষা ও কর্ম এ দুইয়ের মধ্যে রয়েছে বিরাট ফারাক। গতানুগতিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত হয়ে আমাদের তরুণেরা যেখানে মাত্র ১০ হাজার টাকায় চাকরিতে যোগদান করেন। বিপরীতে একজন রিকশাচালক কমপক্ষে মাসে ১৫ হাজার টাকা রোজগার করতে পারেন। বেকারত্বের লাগামহীন ঘোড়াকে এখনই টেনে ধরতে হবে। হ
লেখক : প্রকৌশলী
ই-মেইল : nazmulhussen@yahoo.com

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সকল