২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উজানের বাঁধে বাংলাদেশে বিরূপ প্রভাব

-

১৯৭৪ সালে পরীক্ষামূলক ফারাক্কা বাঁধ চালু করে ভারত একতরফা পদ্মার পানি প্রত্যাহার করায় ভাটির বাংলাদেশের অনেক শাখানদী পানিশূন্য। ১২-১৩টি নদী দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে আমাদের অর্থনীতিতে। অথচ নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী হচ্ছে প্রাণ। নদী বিপন্ন হলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। ভারতের নদী বিধ্বংসী উন্নয়ন যাত্রার কারণে গত চার দশকে বাংলাদেশের পদ্মার অনেক শাখানদী আজ মৃতপ্রায়।
ফারাক্কার কারণে পদ্মায় পড়েছে ধু ধু বালুচর। নদীর উল্লেখযোগ্য অংশ শুকিয়ে গেছে। ভারসাম্যহীন পানিপ্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরাঞ্চলের কৃষি। সেচের জন্য চাপ বাড়ছে ভূগর্ভস্ত পানির উপর। যা দীর্ঘমেয়াদে আরো জটিল প্রতিবেশগত সঙ্কট তৈরি করবে। ২০০৬Ñ১৭ সালে বিশ্বব্যাংক পরিচালিত বাংলাদেশ পরিবেশ সমীক্ষায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনক নিচে নেমে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফারাক্কার কারণে শুষ্ক মওসুুমে পানিশূন্যতা, অন্য দিকে বর্ষা ও অসময়ের বন্যা মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ। আর অতিরিক্ত পলি জমে নদীর নাব্যতা হারাচ্ছে বাংলাদেশ অংশে। শুধু আমাদের দেশে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব পড়ছে তাই নয়, ভারতেও ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে ফুঁসে উঠছে দেশটির অনেক রাজ্যের মানুষ। বিহারের মানুষ শাবল নিয়ে মিছিল করেছে ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দেয়ার দাবিতে। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতাও ভারতের বাঁধকেন্দ্রিক উন্নয়ন থামাতে পারছে না। ভারতের শাসকশ্রেণীর বিবেচনায় ভাটির দেশ বাংলাদেশের অধিকার একবারে অনুপস্থিত।
ভারত থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর ওপর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে একাধিক বাঁধ। তিস্তা নদীর উজানে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ। যা বাংলাদেশের বিস্তৃর্ণ এলাকার চাষাবাদ করছে মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আন্তর্জাতিক আইন না মেনেই ভারতের এমন নির্দয় কর্মকাণ্ড। গ্রীষ্মে তাই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পানির অভাবে খাঁ খাঁ করে। তিস্তার পানিপ্রবাহ এখন ১০ শতাংশ নেমে এসেছে। ফারাক্কা ও গজলডোবা ছাড়াও মনু নদীতে নলকাথা বাঁধ, যশোরের কোদলা নদীর ওপর বাঁধ, খোয়াই নদীর ওপর চামখাঘাচ বাঁধ, বাংলাবান্ধায় মহানন্দা নদীতে মহারানী বাঁধ এবং মাতামহুরি নদীর ওপর কালসি বাঁধসহ আরো ১৫-২০টির মতো বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত।
এখানেই শেষ নয়। ভারত বৃহৎ নদীসংযোগ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্প অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গার পানি ১৪টি খননকৃত খালের মাধ্যমে পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে প্রবাহিত করা হবে। এটি কার্যকর হলে অন্যান্য নদীর সাথে বাংলাদেশের আর একটি বৃহৎ নদী যমুনা আক্রান্ত হবে। শুকিয়ে যাবে এর শাখা ও উপনদী। এমনিতেই আমাদের দেশের নদ-নদী, খাল-বিলে এখন প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতের এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এটি হবে আমাদের দেশের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।
বড়াল বাংলাদেশের পদ্মা এবং যমুনার সংযোগ নদী। দৈর্ঘ্য ২০৪ কিলোমিটার। প্রস্ত ১২০ মিটার। এর অববাহিকা ৭৭২ বর্গকিলোমিটার। এরই সাথে চলন বিল। ১৯৮৫Ñ৯৫ সাল পর্যন্ত এর মুখে সøুইস গেট, ক্রস ড্যাম নির্মাণ করা হয়। ফারাক্কার কারণে পদ্মার পানিপ্রবাহ এমনিতেই কমে গেছে। তার ওপর বড়াল নদীর মুখে সøুইস গেট বসানোয় পদ্মা থেকে আসা পানিপ্রবাহ আরো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যমুনা যেখানে বড়ালে গিয়ে মিশেছে, সেখানে পানিপ্রবাহ নিম্নস্তরে নেমে যাওয়ায় এ নদীও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। তীব্র ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এই নদীর অববাহিকায় প্রায় এক কোটি লোকের জীবন ও জীবিকা এখন হুমকির মুখে।
বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর যোগাযোগের মাধ্যম নৌপথ। স্বাধীনতার পর বিআইডব্লিউটিএ যে জরিপ করে, তাতে দেশের নদীপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। অর্থাৎ দেশের মোট আয়তনের সাত শতাংশ। শুষ্ক মওসুমে তা আরো নিচে নেমে যেত। ইতোমধ্যে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে ২০ হাজার কিলোমিটার নদীপথ হারিয়ে গেছে। দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ১৩টি নদী। আরো সাতটি নদী মৃতপ্রায়। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে যেখানে দেশের মোট পরিবহন ক্ষেত্রে নৌপথে যাত্রী পরিবহন হতো ১৬ শতাংশ এবং মালামাল পরিবহন হতো ৩৭ শতাংশ। ২০০৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮ ও ১৬ শতাংশে। হ
লেখক : সাংবাদিক

 


আরো সংবাদ



premium cement