১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইভিএম ব্যবহার সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক

-

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগামী ৩০ ডিসেম্বর হওয়ার কথা আছে। সে মোতাবেক নির্বাচন কমিশন তাদের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত আছে। নির্বাচন আয়োজনের প্রাক্কালে ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বেশ গরজ লক্ষ করা গেছে। ইভিএম নিয়ে এরা একটি প্রস্তাব সংসদে পাঠানোর সময় বলেছিল একটা একটা আইন তৈরি করে রাখা হচ্ছে, এটার অর্থ এ নয় যে ইভিএম ব্যবহার করা হবেই। আইন তৈরি হয়ে গেল। আইন তৈরি হওয়ার আগে ইভিএম ব্যবহার করতে জনমত উপেক্ষা করে তা কেনা হলো অতি উচ্চমূল্যে। এখন কমিশন বলছে, ইভিএম থেকে ফিরে আসার এখন আর সম্ভব নয়। তাদের গোঁ ধরে রাখার জন্য তারা এখন ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চাচ্ছে। শুরু থেকেই কমিশন সম্পর্কে জনধারণা অত্যন্ত নেতিবাচক। নির্বাচনী মাঠে সমতার কোনো বালাই নেই।
সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেÑ ‘একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাগুলো থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিন শ’ সদস্য নিয়ে এবং এই অনুচ্ছেদের (৩) দফার কার্যকারিতাকালে উক্ত দফার বর্ণিত সদস্য দিগকে নিয়ে সংসদ গঠিত হবে।’ এখানে ‘প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে’ বলা আছে। সেমতে ইভিএম একটি মাধ্যম যেটা সরাসরি ভোট প্রদানকে সমর্থন করে না। এই অনুচ্ছেদ বলবৎ থাকা অবস্থায় কোনোভাবেই ইভিএম ব্যবহার সংবিধান সমর্থন করে না। যদি নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহার করে তবে সেটা সংবিধান লঙ্ঘন বলে শামিল হবে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সংবিধানের তৃতীয় তফসিলের ১৪৮ অনুচ্ছেদে শপথ ও ঘোষণা অধ্যায়ের (৭) উপ-অনুচ্ছেদ মতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার শপথ করেন যে ‘আমি ... প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ক্ষেত্র মতে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার) নিযুক্ত হয়ে সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করছি যে, আমি আইন অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সাথে আমার পদের কর্তব্য পালন করব; আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করব।’
সুতরাং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার ওই শপথের আলোকে কোনোভাবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের অধিকারকে পরোক্ষ ব্যবস্থায় নিতে পারে না। আর ইভিএম নিয়ে ইতোমধ্যে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ বিশ্বের শক্ত ভিতের গণতান্ত্রিক দেশে এর ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে। যেখানে আমাদের গণতন্ত্র হিমাঙ্কের নিচে সেখানে এ কথা ভাবাই মতলবি বিষয়। তা ছাড়া আমাদের সংবিধান অনুসারে এ ব্যবস্থা অগ্রহণযোগ্য।
নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রমে জন মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করছে। প্রথমে তারা ইভিএমের জন্য কেবলমাত্র একটা আইন তৈরির কথা বলল, এখন বলছে ইভিএম থেকে পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, গত ১০ নভেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুর আওয়ামী লীগের সংসদ নির্বাচনী দ্বন্দ্বে সুজন ও আরিফ নামে দুইজন লোক খুন হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের কোনো বোধদয় হয়নি। যেই ১৩ তারিখ বিএনপি অফিসের সামনে গোলমাল হলো এবং গাড়ি ভাঙচুর হলো সেই ঢাকার মহানগর পুলিশ কমিশনারকে প্রতিবেদন দিতে বলা হলো। কিন্তু মোহাম্মদপুরের ঘটনায় প্রতিবেদন চাওয়া হলো না। ১৩ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকার উপলক্ষে বিরাট আয়োজন এবং রাস্তার এক পাশ বন্ধ হলো। একই দিনে পল্টনে বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময় রাস্তা ছেড়ে দেয়া নিয়ে পুলিশ বিএনপির কর্মীদের ওপর হামলা করল। নির্বাচন কমিশনের চোখের সামনে এক বিষয়ে দুই দলের প্রতি পুলিশের দ্বৈত আচরণ।
আওয়ামী লীগের অভিপ্রায় অনুসারে কমিশন ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে। কারণ ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের নির্বাচনের নামে প্রহসনের নির্বাচন করা হয়। বিরোধীদলগুলো যাতে ওই দিনের বক্তব্যে নির্বাচনী কাজে প্রভাব ফেলতে না পারে সেজন্য ডিসেম্বরে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। ২৭ জানুয়ারির আগে যেকোনো দিন নির্বাচন হতে পারে। তবে নির্বাচনে স্থগিত কেন্দ্রের বিষয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনাকালে যেকোনো স্থগিত নির্বাচন পরে যেকোনো সময় হতে পারে এমন মতামত দেন এবং বলেন, এজন্য কোনো বার নেই। কিন্তু ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের মতো বাঘা আইনজীবীকে ‘মার কাছে মামাবাড়ির চাটাম’ দেয়ার মতো ‘নির্বাচন কমিশন’ সংবিধানের ব্যাখ্যা শেখায়। গণগ্রেফতারের বিষয় এখনো তেমন ফল দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মানছে এমন কথা বলার মতো সময় এখনো আসেনি, তবে কমছে বলা যায় কিছুটা। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement