২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ধূমপান আইন বাস্তবায়ন কতটুকু জরুরি?

-

হাটে-মাঠে, পথে-প্রান্তরে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আর গণপরিবহনে অবাধে চলছে প্রকাশ্য ধূমপান। কিন্তু বাংলাদেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) অনুসারে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওই আইনে পাবলিক প্লেস বলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, গ্রন্থাগার, কর্মক্ষেত্র, হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভবন, রেস্টুরেন্ট, শিশুপার্ক, মেলা, এবং জনসাধারণ কর্তৃক সম্মিলিতভাবে ব্যবহার্য স্থানসহ ২৪ ধরনের স্থানকে পাবলিক প্লেস বলা হয়েছে। আর গণপরিবহন বলতে বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ আট ধরনের পরিবহনকে বোঝানো হয়েছে। কেউ এ আইন লঙ্ঘন করলে সে তিন শ’ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবে এবং ওই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার এ অপরাধ করলে সে পর্যায়ক্রমে ওই দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডিত হইবে। কিন্তু জনসাধারণ এই আইন সম্পর্কে কি অবগত? কিংবা এই আইনের বাস্তবায়ন কতটুকু? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য পরিসংখ্যান লাগবে না, আপনাদের চারপাশে তাকালেই উত্তর পেয়ে যাবেন। পুরো দেশ বাদ দিয়ে যদি শুধু ঢাকার সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকান তাহলে এমন কোনো চত্বর কিংবা হল খুঁজে পাবেন না যেখানে প্রকাশ্য ধূমপান হয় না। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ আইন বাস্তবায়নের ন্যূনতম প্রচেষ্টাও আপনার চোখে পড়বে না। বরং এ আইন ভঙ্গে তাদের পাওয়া যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাব নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবে প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ছয় লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই শিশু। বাংলাদেশের শিশুদের বিরাট অংশ ধূমপানের বিষক্রিয়ার শিকার হচ্ছে। ২০১৭ সালে অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা সিটি করপোরেশন ও আশপাশ এলাকার ৯৫ শতাংশ শিশুর শরীরে ক্ষতিকর নিকোটিন আছে। পরোক্ষ ধূমপানই নিকোটিন উপস্থিতির কারণ। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো জরিপ-২০০৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি নারী পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। যার মধ্যে ৩০ শতাংশই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় কর্মস্থলে এবং ২১ শতাংশ জনসমাগমস্থলে। ২০০৪ সালে পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাব সংক্রান্ত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরোক্ষ ধূমপানে শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ শতাংশ শিশু, ৩৫ শতাংশ অধূমপায়ী নারী ও ৩৩ শতাংশ অধূমপায়ী পুরুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাকের কারণে বিশ্বে প্রতি ছয় সেকেন্ডে একজন মানুষ মারা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ তামাকের কারণে বিশ্বে এক কোটি মানুষ মারা যাবে প্রতি বছর! যার ৭০ লাখই ঘটবে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে। এ বিপুল ক্ষতি এড়ানোর জন্য ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের প্রায় ১৭৩টি দেশে প্রকাশ্য ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বেশির ভাগ দেশেই প্রকাশ্য ধূমপান কড়াকড়িভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ধূমপান শুধু জনস্বাস্থ্যই নয়, বরং পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে চলছে। কয়েক দিন আগে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতি বছর যত মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখ-বিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। গবেষকেরা বলেছেন, বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রায় সাত হাজারের বেশি ক্ষতিকর পদার্থ আছে। তাই ধূমপান অবশ্যই পরিবেশের বিপুল ক্ষতি করছে। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য আইনটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং জনগণকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে হবে। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement
সংবাদ-রাজনৈতিক বিষয়বস্তু কমিয়ে দেয়ায় ফেসবুক নিউজ ট্যাব থাকছে না জুনের মধ্যে তৃতীয় ধাপে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে : প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন সাকিবের প্রশংসায় পোথাস আদমদীঘিতে ২৩০ চালকল বন্ধ : বেকার ৭ হাজার শ্রমিক সাকিবে উজ্জীবিত বাংলাদেশের লক্ষ্য সিরিজে সমতা কুলাউড়ায় জঙ্গল থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধার ঈদগাঁওতে মাদককারবারি গ্রেফতার শিক্ষায় ব্যাঘাত : ফেসবুক-টিকটক-ইনস্টাগ্রাম-স্ন্যাপচ্যাটের বিরুদ্ধে ২৯০ কোটি ডলারের মামলা আমতলীতে কিশোরীকে অপহরণ শেষে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩ মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে লালমোহনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সকল