১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা

-

সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঢুকলে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র মনে হয় না। একটি ছোট কেবিনের মধ্যে ১০-১৫ জন রোগী, তাদের সাথে ১০-১৫ জন আত্মীয়স্বজন। অনেকের জায়গা হয় হাসপাতালের মেঝেতে অথবা বারান্দায়। হাসপাতালের অন্দরমহল যে কতটা নোংরা, অপরিচ্ছন্ন, পূতিগন্ধময় তা হাসপাতালের রন্ধনশালায় ঢুকলেই দেখা যায়। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে নোংরা বাসন-পেয়ালা, ট্রে। হাঁড়ি-পাতিল ধোয়ামোছার নামে ফেলে রাখা হয় খোলা ড্রেনের পাশে। রান্নাঘরের নোংরা মেঝেতেই পড়ে থাকে তরিতরকারির কাটাকুটি, বাসি-পচা খাদ্যপণ্য। ছাদের অংশে লেগে আছে কালিঝুলি। বাতাসে সেসব ময়লা ঝুলি উড়ে এসে পড়ছে রান্নার হাঁড়ি-পাতিলে। বড় কড়াইয়ের চার পাশে লেগে থাকে আগের ডাল-তরকারির ঝোল। এর মধ্যেই নতুনভাবে তরকারি রান্না চলে।
যেসব ট্রেতে খাবার দেয়া হয় সেগুলো ধোয়ার নামে শুধু ড্রামভর্তি পানিতে চুবিয়ে নেয়া হয়। সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের ট্রে আলাদা রাখারও ব্যবস্থা নেই। শুধু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা মুগদা জেনারেল হাসপাতাল নয়, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়া সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, কিডনি ও মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, পঙ্গু হাসপাতাল, মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ক্যান্সার ইনস্টিটিটিউট ও বক্ষব্যাধি হাসপাতালে অভিন্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রোগীর মলমূত্র, পুজ আর রক্তমাখা এসব কাপড়চোপড়, চাদর, বালিশের কাভার কোনোমতে ধুয়ে শুকানোও হচ্ছে নোংরা পরিবেশেই।
হাসপাতাল আছে, যন্ত্রপাতি ওষুধপথ্যের সরবরাহ যাচ্ছে নিয়মিত, আছে চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী; অনেক ক্ষেত্রে নেই কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা। সরকারি হাসপাতালে অনেক দামি ও দরকারি যন্ত্রপাতি পড়ে থাকে, অনেক দিন পর্যন্ত সেগুলো আলোর মুখই দেখতে পায় না।
কোনো কোনো সরকারি হাসপাতালে ২১ শতাংশ চিকিৎসা যন্ত্রপাতির প্যাকেটই খোলা হয় না। ১১ শতাংশ ব্যবহারের আগেই নষ্ট হয়ে যায়, ১১ শতাংশ যন্ত্রপাতি ঠিক থাকলেও ব্যবহারই করা হয় না, ১০ শতাংশের ব্যবহার হয় আংশিক। বাকি রইল ৪৭ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে এসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির গুরুতর তথ্য উঠে এসেছে। মফস্বলের অবস্থা আরো খারাপ। অনেক সময় ওয়ার্ড বয়-আয়ার ‘ডাক্তার সাজা’র ঘটনা ঘটছে। আছে বহিরাগত দালালদের উৎপাত। দালালেরা নানা কায়দা-কৌশলে অসহায় রোগীদের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। এসব দেখার যেন কেউ নেই। হাসপাতালে ভর্তি করতে দালাল, ওয়ার্ডে বেড পাওয়া নিশ্চিত করতে দালাল, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেও দালাল। পঙ্গু ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রোগীর জন্য ট্রলি ব্যবহার করতেও গুনতে হয় টাকা। রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকা ট্রলি নিয়ন্ত্রণে রেখে হাসপাতালে বাড়তি টাকা কামায় বহিরাগতরা। দেশের প্রধান হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সর্বত্রই শুধু ভিড় আর লাইনের ছড়াছড়ি। সকালে আউটডোরে ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব বিভাগে, এমনকি ভর্তি হওয়া রোগীদের টয়লেটের জন্যও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না। এক্স-রেসহ জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কিডনি ডায়ালাইসিস, অপারেশনের জন্যও সিরিয়াল ধরে অপেক্ষায় থাকতে হয় রোগীদের।
জরুরি বিভাগ চালু ২৪ ঘণ্টা। তবে টাকা ছাড়া সেবার কথা কল্পনাও করা যায় না। হাসপাতালের লোকবল কম থাকার অজুহাতে নার্স ও আয়াদের সাথে কাজ করেন দালালেরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রবেশমুখে রয়েছে দালালদের বিশাল সিন্ডিকেট। এরা কোনো রোগী আসার সাথে সাথেই সেখানে ভিড় জমিয়ে লুফে নিচ্ছে রোগীদের।
এ ধরনের আরো অনেক সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলো, যার ফলে সাধারণ রোগীদের পোহাতে হচ্ছে নানারকমের দুর্ভোগ এবং রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুষ্ঠু নজরদারিই পারে রোগীদের উন্নতমানের চিকিৎসসেবার নিশ্চয়তা বিধান করতে। তাই আমরা চাইব যে, মন্ত্রণালয়ের সুষ্ঠু নজরদারির মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালের সমস্যাগুলোর সমাধান হবে রোগীদের উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হবে। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement