ইসলাম ও বিজ্ঞান কি পরস্পরবিরোধী?
- হোসাইন এম আওলাদ
- ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামি শিক্ষার সাথে বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা তথা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ব্যবসায় শিক্ষার সুন্দর সমন্বয় না থাকায়, শিক্ষাব্যবস্থায় কয়েকটি ধারা চালু হয়েছে। একটি ধারা হলো পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান নির্ভর আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা নামমাত্র হিসেবে রাখা হয়েছে। অন্যটি হচ্ছে ইসলামি বিষয়ের ওপর ব্যাপক জ্ঞানার্জনের সুযোগসংবলিত আলিয়া মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা, সেখানে বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা তথা বিজ্ঞানের বিষয়গুলোও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু তুলনামূলক গুরুত্বের বিবেচনায় ইসলামি বিষয়ের চেয়ে কম প্রাধান্য পায়।
আরেক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাও আমাদের দেশে চালু আছে, যেখানে ছাত্ররা পবিত্র কুরআন, সহি হাদিস ও অন্যান্য ইসলামি বিষয় নিয়েই শুধু অধ্যয়ন করে থাকে। কিন্তু সেখানে বিজ্ঞাননির্ভর কোনো বিষয় সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না; এটাকে কওমি মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা বলা হয়ে থাকে। কুরআনের হাফেজরা সাধারণত এই শিক্ষাব্যবস্থার অধীনেই শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন।
বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন ধারা চালু থাকায় এসব ব্যবস্থার অধীনে যারা পড়াশোনা করে বড় হচ্ছে, তাদের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেও বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার অধীনেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে থাকে। এ শিক্ষাব্যবস্থা পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান নির্ভর, তাই অনেক শিক্ষার্থী এটাকে একটি আধুনিক ধারা হিসেবে বিবেচনা করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ে, যা তাকে ইসলামি সংস্কৃতিকে সেকেলে ভাবতে অনুপ্রাণিত করে।
অন্য দিকে, যারা আলিয়া মাদরাসা লাইনে পড়াশোনা করে, পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান নির্ভর শিক্ষার প্রতি তাদের নাক সিঁটকানো মনোভাব কাজ করে; যে কারণে অনেক সময় সিলেবাসে থাকার কারণে পড়তে বাধ্য হলেও তারা মন থেকে সেটিকে ততটা আপন করে নিতে পারে না। আর যারা কওমি মাদরাসার ছাত্র, তারা বিজ্ঞানের প্রাথমিক ধারণা থেকেও বঞ্চিত। তাই বিজ্ঞানের ব্যাপারে স্বচ্ছতার সাথে চিন্তা করা তাদের জন্য অনেক দুরূহ। এ ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত?
আমরা যারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছি, তারা জানি, বিজ্ঞান মূলত সত্যান্বেষণকারীদের দ্বারা আবিষ্কৃত এক বিশেষ শ্রেণীর জ্ঞানের নাম। বিভিন্ন যুগে যারা চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন, তারা যুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এ জগতের বিভিন্ন কার্যপ্রণালীর মধ্যকার কার্যকারণকে ব্যাখ্যা করতে অনেক হাইপোথিসিস ও সূত্রের অবতারণা করেছেন, যার কোনোটি সময়ের পরীক্ষায় টিকে সবার কাছে সত্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে, আবার কোনোটি অনেকের দ্বারা পরিমার্জিত হয়ে পরবর্তীকালে গ্রহণযোগ্য নীতি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
যারা এই বিজ্ঞানের উন্নতিতে অবদান রেখেছেন, তাদের মূল পরিচয় হলো তারা ছিলেন সত্যান্বেষী। সব যুগেই এই শ্রেণীর কিছু মনীষীর সন্ধান ইতিহাসে পাওয়া যায়। ইসলামি সভ্যতা যখন উন্নতির শিখরে উপনীত হয়েছিল তখন ইসলামি বিশ্বের অনেক মনীষীর হাতেও বিজ্ঞানের অনেক শাখার সূচনা হয়েছে; বিশেষ করে জ্যামিতি, রসায়ন, জ্যোতির্বিদ্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অনেক অবদানের কথা ইতিহাস থেকে জানা যায়। আর বর্তমানকালে দেশ-বিদেশে বহু মুসলিম বিজ্ঞানী মানবকল্যাণের কথা বিবেচনা করে বিজ্ঞানের উন্নয়নে তাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
এ কথা এখন সর্বজনস্বীকৃত যে, পবিত্র কুরআনই মূলত জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রধান উৎস। বিজ্ঞান যতই অগ্রসর হচ্ছে, পবিত্র কুরআনের সত্যতা ততই মানুষের কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্টরূপে ফুটে উঠছে। আর তাই বিজ্ঞান ও কুরআন কখনোই পরস্পরবিরোধী হতে পারে না। তবে বিজ্ঞানের কোনো কোনো মতবাদ যা পবিত্র কুরআনের বিপক্ষে যায়, তাকে মানার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ আসলে সেই মতবাদ এখনো সেখানে পৌঁছতে পারেনি, যা প্রকৃত সত্য।
আর তাই বর্তমান মুসলিম সমাজে প্রয়োজন এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা, যা একাধারে ইসলামি চেতনা এবং আধুনিক বিজ্ঞানের সফল সমন্বয় করতে সক্ষম হবে। হ
লেখক : ব্যাংকার