‘পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছ?’
- মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন
- ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
সম্প্রতি ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে হতবাক করে অভাবিতভাবে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস সনদকে মাস্টার্সের সমমানের ডিগ্রি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কওমি মাদরাসা মূলত আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় হাদিস, কুরআন, ফেকাহ, উসুল প্রভৃতি বিষয়ক এবং প্রধানত পরকালমুখী জ্ঞান চর্চা করে থাকে। নিচের দিকে নাজিরা নুরানি, হেফজ, ইবতেদায়ি পর্যায়ে কিছু প্রাথমিক বাংলা, ইংরেজির পাঠ দান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপে ধর্মনিরপেক্ষ ঘরানার সবাইকে হতবুদ্ধি করেছে এবং হেফাজতে ইসলামের মধ্যে আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়। খুশির আবেগ-অনুভূতি প্রকাশে তারা সীমা ছাড়িয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রীকে এই স্বীকৃতি প্রদানের জন্য কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাতে পারে হেফাজত নেতারা। তবে সীমা ছাড়িয়ে গেলে এবং আবেগবশত কোনো দলকে আসন্ন নির্বাচনে ভোট দেয়ার আকুতি জানলে তখন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। হায়রে হেফাজত ১৯১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের প্রতি যে বর্বর নির্মমতা দেখানো হয়। সুন্নতধারী শিক্ষার্থীদের কানে ধরানো হয়। কুরআন পুড়িয়ে, ইলেকট্রিক করাতে সড়ক দ্বীপের গাছ কেটে তাণ্ডব সৃষ্টি করার দায় আলেমদের ওপর চাপানো হয় পুরোটা। বিটিভিতে টিপ্পনী কাটতে বারবার বলা হয়, ‘কুরআন পুড়িয়ে তারা কোন ইসলাম কায়েম করবেন?’ মানুষের রক্তে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে গেল। লাইভ প্রচার করতে গিয়ে দু’টি টিভি চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেল। এর দায় কে গ্রহণ করবে? রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কওমি ডিগ্রির স্বীকৃতির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা প্রদানের ঘটা করা হয়েছে। সেখানে সামরিক সচিব দাবি করেন শাপলা চত্বরে কোনো জীবনহানি হয়নি। অথচ বড় কোনো হেফাজত নেতা এর প্রতিবাদ করেননি। কারণ তাদের জোশ নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল। সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধ হেফাজত বিভক্ত হয়েছে। শত শত আলেম হেফাজত ত্যাগ করেছেন কারণ স্বীকৃতির বিনিময়ে তারা আদর্শ ত্যাগ করবেন না। আসলে পরকালমুখী শিক্ষা দুনিয়ার স্বীকৃতির ধার ধারে না। হেফাজতে দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব, প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তাদের নীতিপরায়ণতা! এ রকম অবস্থায় হেফাজতে নেতার কাছে তাজিম ও আদব সহকারে ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রের চরিত্র কপালকুণ্ডলার ভাষায় প্রশ্ন: ‘পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছ?’