২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গেস্টরুম কালচারের ভালো-মন্দ

-

আমরা গেস্টরুম বলতে সাধারণত অতিথিকক্ষ বুঝি, যেখানে অতিথিদের বসা, বিশ্রাম নেয়া, আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। আসলে আমি এখন যে গেস্টরুমের কথা বলব, সেটি আসলে এটি নয়, সেটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টরুম। অনেক অসফলতা পেছনে ফেলে, অনেক মেধাবীকে পেছনে ফেলে প্রতিটি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাক্ষর রেখে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। আর তখনই সে পরিচিত হয় এ গেস্টরুম নামক কালচারের সাথে। বিশেষ করে যারা প্রথম বর্ষে হলে ওঠে।
গেস্টরুমের মাধ্যমে একটি সম্পর্ক তৈরি হয় সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে। বিপদে পাশে দাঁড়ায় সিনিয়ররা, টিউশনের ব্যবস্থা করে দেন বা অন্য কোনো উপায় বের করে দেন যাতে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।
বাস্তবিক জীবন সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া যায়, আমরা কোথায় আছি, কী করছি সে সম্পর্কে সবকিছু জানা এবং সতর্কতা অবলম্বন করার একটি শিক্ষা পাওয়া যায়। শৃঙ্খলা বোধের শিক্ষা তৈরি হয়। জুনিয়র সিনিয়রের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয়, সে শিক্ষা লাভ করা সম্ভব হয়। সালাম বিনিময়ের শিক্ষা তৈরি হয়। ইতিহাসের চর্চা করতে জোর করা হয়। বন্ধুদের ভেতরে সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রাখার, কারো সাথে শত্রুতা না করার শিক্ষা দেয়া হয়। কোনো সমস্যা হলে সবাই একত্রে পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়া হয়। কোনো বন্ধু অসুস্থ হলে তার পাশে থাকার শিক্ষা দেয়া হয়। কথা বলার সময় কিভাবে কথা বলতে হয়, কিভাবে তাকাতে হয় শিক্ষক থেকে শুরু করে সবার সাথে এ শিক্ষা দেয়া হয়। চোখের ইশারায় কী ইঙ্গিত দেয়া হয়, কী বলা হয় এগুলো বোঝার শিক্ষা দেয়া হয়। সর্বোপরি, যেকোনো জায়গায় যেকোনো পরিবেশে মানিয়ে চলার শিক্ষা লাভ করা সম্ভব হয় গেস্টরুমের মাধ্যমে।
আবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যত রকম খারাপ আচরণ করা হয়, তা এ গেস্টরুমে। মা-বাবাকে তুলে যেসব অশ্লীল ভাষায় গালি দেয়া হয়, তা না শুনলে কেউ বুঝবেন না। তারপরে কথা না শুনলে গায়ে হাত তোলা, কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও কথা না শুনলেÑ কোনো সমস্যার কারণে শুনতে না পারলে কিংবা বড়ভাইদের স্বার্থের বিরুদ্ধে হলে যেকোনো ধরনের ট্যাগ লাগাতে দ্বিধাবোধ করা হয় না। হল থেকে বের করে দেয়, আর প্রায় সময়ই প্রশাসন তাদের সাপোর্ট দেয়। একে তো ৩০ থেকে ৪০ জন এক রুমে থাকতে হয়, তারপর আবার সবসময় মানসিক চাপে রাখা হয়। সালাম না দিলে গায়ে হাত তোলা হয়। সবসময় ফরমাল এবং ভালো পোশাক পরতে বাধ্য করা হয়। অনেক সময় প্রোগ্রাম থাকায় ক্লাস না করতে বাধ্য করা হয়। ওদিকে উপস্থিতি কম হলে শিক্ষকেরা পরীক্ষা দিতে দেন না ৬০ শতাংশের নিচে উপস্থিতি হলে, আর ৭৫ শতাংশের উপরে না হলে উপস্থিতির ওপর যে নম্বর থাকে, তা দেয়া হয় না। অনেক সুযোগ-সুবিধা সীমিত করে দেয়া হয়, সিনিয়ররা যে সুযোগ-সুবিধাগুলো ব্যবহার করেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা সেগুলো ভোগ করতে পারে না। পড়াশোনা বাদ রেখে যে সময়-যেখানে বেঁধে দেয়া থাকে, সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের আগে উপস্থিত থাকা প্রতিদিনের রুটিন। না যেতে পারলে ট্যাগ-মারধর খেতে হয়। প্রতিদিন গেস্টরুমে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় দিতে হয়। তারপর আরো অন্যান্য বিষয়ে সময় দিতে গিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময়ই বড়ভাইদের পেছনে চলে যায়। ফলে পড়াশোনা হয় না। রেজাল্টও তেমন ভালো হয় না। ডিপার্টমেন্টের পড়াই পড়া হয় না, অন্যান্য জ্ঞানচর্চার কথা তো বাদই দিলাম। বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ এটি ঘটছে। বিশেষ করে যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে হল রয়েছে। যে ছেলেটি শুভ্র মন নিয়ে, শুভ্র চিন্তা, শুভ্র স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, হলে ওঠা মাত্রই তার সেসব স্বপ্ন নিমেষেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। সিনিয়ররাও ধূমপান করতে সবসময় উৎসাহিত করে। যদিও প্রথম কয়েকদিন নিষেধ করে। কিন্তু মাসখানেকের ভেতরেই তারাই জোর করে ধূমপানের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, জ্ঞানচর্চার জায়গা, সেটি হয়ে পড়ে মাদকের কারখানা, সেটি হয়ে পড়ে মারামারি-গ্যাঞ্জাম বাঁধানো শেখার জায়গা। ছেলে-মেয়ে কেউ-ই এ ক্ষেত্রে বাদ পড়ে না। আর প্রশাসন এ ক্ষেত্রে অনেকটাই নিস্তেজ, মুমূর্ষু রোগীর মতো, যেন তাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই।
আমার মনে হয় না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীকে এভাবে জেলখানার মাধ্যমে ম্যানার শেখানো দরকার হয়। গেস্টরুমের উপকারিতা খুবই সামান্য। তাই ম্যানার শিখানোর নামে এসব আচরণ দ্রুত বন্ধ করা উচিত। গেস্টরুম বহু শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন পঙ্গু করে দিচ্ছে মানসিকভাবে, মেধা-প্রতিভা নষ্ট করে, শারীরিক প্রহার করে, ভীতি ঢুকিয়ে দিয়ে। দিন দিন মেধাবী স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে। কেউ আত্মহত্যা করছে, কেউ বা আবার পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে, কিংবা চোখ হারিয়ে বিদেশ চলে যাচ্ছে।
যে সব শিক্ষার্থী অসচ্ছল; বাধ্য হয়ে হলে থাকে, তাদের দিয়ে জাতির কোনো উপকার হবে না ক্ষতি ছাড়া। কারণ তারা তাদের এ কষ্টগুলোর পুষিয়ে নিতে ভবিষ্যতে যে সময় তারা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দায়িত্ব পালন করবে, সুযোগ পেলেই দুর্নীতি করবে এটি স্বাভাবিক। দেশের স্বার্থে মেধাবীদের স্বার্থে দেশকে এগিয়ে নিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, হলের আবাসিক শিক্ষক-শিক্ষিকা আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা সবাই দৃঢ় পদক্ষেপ নিন। একটু জেগে উঠুন, দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে। কেন না একটি জাতির উন্নতি শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হয়। একটি দেশকে পঙ্গু করতে, পিছিয়ে দিতে শিক্ষিত (যারা জ্ঞানচর্চা করে) তাদের হত্যা করেই সম্ভব হয়। যেটা গেস্টরুম করছে। মেধাচর্চার সুযোগ দিন। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 


আরো সংবাদ



premium cement
জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ জিম্বাবুয়ে সিরিজে অনিশ্চিত সৌম্য

সকল