২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

নির্বাচনে তরুণ ভোটারেরা কোন পথে?

-

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে তরুণেরাই হবে মূল শক্তি। কারণ, তাদের হাতেই রয়েছে একটি ভোটব্যাংক। চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যেই একাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচন কমিশন আগামী ৩০ ডিসেম্বরই এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটার হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেল, নবম জাতীয় নির্বাচন থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে মোট ভোটার সংখ্যা (সম্ভাব্য) ১০ কোটি ৪৬ লাখের বেশি। সে হিসাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুই আমলে নতুন ভোটার হচ্ছে দুই কোটি ৩৫ লাখ ১২ হাজার ৯৯৭ জন। এর মধ্যে ২৭ বছর বয়সী ভোটার রয়েছে এক কোটি আট লাখ ৮৪ হাজার ১৪৬ জন। আর ২১ থেকে ২২ বছর বয়সী ভোটার রয়েছে ৮০ লাখ ২৮ হাজার ৮৩৩ জন। অন্য দিকে একেবারে নতুন অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সী ভোটার হচ্ছে প্রায় ৪৬ লাখের মতো। নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া এসব সম্ভাব্য হিসাব হলেও চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারিতে তাদের চূড়ান্ত হিসাব জানা যায়। ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ভোটার সংখ্যা ছিল মোট ১০ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৬০১ জন। এর সাথে নতুন করে যুক্ত ভোটার হয়েছিল ৩৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৩ জন। যেখানে নতুন পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৯৭১ আর নারী ভোটার ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬২২ জন যুক্ত হয়েছেন। অন্য দিকে, সেখান থেকে মৃত ভোটারের সংখ্যা ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৪ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে। সবশেষে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার রয়েছে ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। সংখ্যার দিক দিয়ে নতুন ভোটারদের মধ্যে তরুণেরাই কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে নতুন নেতৃত্ব ও বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান সে অনুযায়ী তারা নির্বাচন করবেন। তাদের ওপরই নির্বাচনের ফলাফলের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের দুটো দিক নির্ভর করবে বলে ধারণা করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকেরাও। অর্থাৎ তরুণেরাই যেমন একদিকে যেকোনো নতুন সরকার গঠনে ব্যাপক পজিটিভ ভূমিকা রাখবে, তেমনি কোনো সরকারের ভরাডুবিতেও নেগেটিভ ভূমিকা পালন করবে। তা হলে এই তরুণেরা নিশ্চয়ই কোনো দলের ক্ষেত্রে নতুন সরকার গঠনে বাধা হয়েও দাঁড়াতে পারে! এরা নিশ্চয়ই চাইবে তাদেরও কিছু চাওয়া-পাওয়া বা দাবি-দাওয়া সরকার পূরণ করুক। তেমনি সারা দেশের এসব তরুণ ভোটার ও উচ্চশিক্ষিত বেকারদেরও সরকার বরাবর দাবি, কোটার সঠিক সংস্কার করা ও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমার বর্তমান পুরাতন শৃঙ্খল ভেঙে সেটা ন্যূনতম ৩৫ বা তার বেশিতে বর্ধিত করা। বেকারত্ব দূরীকরণে বা বিভিন্ন আনুষঙ্গিক ও আভ্যন্তরীণ কারণের তাদের এসব চাওয়া নিশ্চয়ই অযৌক্তিক বা অনিয়মতান্ত্রিক নয়।
আওয়ামী লীগ এখনো তরুণদের এই দাবিকে সামান্যতম আমলে নেয়নি। চাইলে তারাই ছোট্ট এই দাবি মেনে নিয়ে তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে তরুণদের ভাগে নিতে পারত। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মিডিয়া ও সরকার সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তি মারফত জানা গিয়েছিল, সরকার চাকরির বয়স ৩৫ করা নিয়ে রীতিমতো দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। ক্ষমতাসীন সরকার কৌশলগতভাবেই বিষয়টিকে নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করে আগামীতে ক্ষমতায় এসে সেটা বাস্তবায়নের কথা ভাবছিল। নির্বাচনের আগে তরুণদের এই দাবি মেনে নিলে ভোটের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। আবার কেউ কেউ রয়েছেন এর বিপরীত অবস্থানে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছেÑ এসব তরুণেরা নির্বাচনের আগেই এর বাস্তবায়ন চায়। তরুণদের দখলে যে ভোটব্যাংক রয়েছে, সেটা স্বাভাবিকভাবেই দুই কোটি ৩০ লাখ থেকে বেড়ে অনেক বড় হয়ে যাবে।
গত ১০ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি প্রতিষ্ঠান কলরেডির তরুণ ভোটারের ওপর গবেষণা ও জরিপের ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানা যায়, দেশের ৬৮.০৩ শতাংশ শিক্ষিত তরুণ ভোটার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি সন্তুষ্ট এবং ৩০.০২ শতাংশ তরুণ নেতৃত্বের পরিবর্তন চায়। এদের মধ্যে ৫৩.০৫ শতাংশ ভোটার মনে করেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তবে এই জরিপের কোনো নির্ভরযোগ্য সত্যতা পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি দেশে কোটাসংস্কার আন্দোলন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধিতদের আন্দোলনে সরকার কর্তৃক যে সাড়া তরুণেরা পেয়েছে, তাতে তারা রীতিমতো সরকারের প্রতি হতাশ ও অসন্তুষ্ট। তাই এমন জরিপে নিঃসন্দেহে বাস্তবিক কোনো স্বার্থকতা থাকতে পারে না।
অন্য দিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইতোমধ্যে তরুণদের সেই দাবিকে আমলে নিয়েই চাকরিতে প্রবেশের বয়স ন্যূনতম ৩৫ বছর করার মতো বিষয়টিকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করেছে। ক্ষমতায় গেলে এই বয়সসীমা অভিন্ন বা ৩৫-এর বেশিও করে দিতে পারে বলে জানা যায়। অতীতেও বিএনপি সরকার ১৯৯১ সালে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বিদ্যমান ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করেছিল। তাই যৌক্তিকতার বিচারে তরুণদের শতভাগ আস্থা তাদের উপরে থাকতেই পারে।
২০১৫ সালে জাতিসঙ্ঘ যে এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিল, তার ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে অন্তত ১০টির সাথে যুবশক্তি সরাসরি জড়িত। কিন্তু তিন বছর পার হলেও যুবক বা তরুণদের ভাগ্যোন্নয়নে বাংলাদেশ বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে সে কথা বলা যাবে না। এখনো আমাদের যুবকদের একাংশ দারিদ্র্যের নিগড়ে বন্দী, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। আবার নানা বাধাবিঘœ পেরিয়ে যেসব তরুণ উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন, তারাও চাকরি পাচ্ছেন না। অথচ তাদের পেছনে রাষ্ট্র ও পরিবার বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা দাবি করেন, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এক কোটির বেশি যুবকের চাকরির পরিকল্পনা আছে। কিন্তু এ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে যে বিরাট দূরত্ব রয়েছে; সেটিই যুবকদের দুঃসহ বেকারত্ব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। হ
লেখক : প্রকৌশলী
nazmulhussen@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল