২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একই দিনে রোজা ও ঈদ কিছু কথা

-

পৃথিবী একটি গ্রহ। চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ। পৃথিবী গোলাকার এবং নিজ মেরুদণ্ডের ওপর সূর্যের চারদিকে ২৪ ঘণ্টায় একপাক ঘোরে। এর ফলে দিন-রাত্রি হয়। পৃথিবী গোলাকার বলে ঘোরার সময়ে যে দিকটা সূর্যের দিকে থাকে, ওই দিকে তখন দিন এবং অপর দিকে রাত্রি। পৃথিবী নিজ মেরুদণ্ডের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘুরছে। সে জন্য সূর্যকে পূর্বদিক থেকে প্রথম দেখতে পাওয়া যায়।
চাঁদ নিজ কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী গোলাকার বলে এর এক অংশে চাঁদ দেখা গেলে অন্য অংশে চাঁদ দেখা যায় না। পৃথিবী যদি চ্যাপ্টা ও সমতল হতো তাহলে হয়তো একই দিনে সারা পৃথিবী থেকে চাঁদ দেখা সম্ভব হতো। একই দিনে সারা পৃথিবীতে কার্যত চাঁদ দেখা কখনো সম্ভব নয়।
আমাদের এখানে যখন দিন, তখন পৃথিবীর আর একটি অংশে রাত্রি। চাঁদ একাংশে যখন অস্ত যায়, তখন পৃথিবীর অন্য অংশে চাঁদের উদয় ঘটে। পৃথিবীর চারদিকে আবর্তনের ফলে চাঁদ প্রতিদিনই পৃথিবীর কোনো না কোনো অংশে দৃষ্টিগোচর হয়। ধরা যাক, সৌদি আরবে সন্ধ্যার সময় রোজার চাঁদ দেখা গেল। তাই তারা এশার সাথে তারাবির নামাজ পড়বেন। কিন্তু তখন আমাদের এখানে সময় হবে রাত সাড়ে ১০টা। কারণ সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সময়ের ব্যবধান সাড়ে তিন ঘণ্টা। এর অনেক আগেই আমাদের এখানে এশার জামাত শেষ হয়ে যাবে।
এক দেশের সাথে অন্য দেশের সময়ের ব্যবধান থাকে। যদি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে ঈদ হয়, তাহলে কানাডার মুসলমানরা কখন ঈদের নামাজ পড়বেন? আর দুপুরের আগ পর্যন্ত ঈদের নামাজের সময় থাকে। বৃহস্পতিবার দিন যখন বাংলাদেশে ঈদের নামাজ পড়া হবে, তখন কানাডায় রাত। রাতের বেলায় ঈদের নামাজ পড়া হয় না। আবার কানাডায় যখন বৃহস্পতিবার দিন হবে, তখন বাংলাদেশে শুক্রবার। কারণ হিজরি সনের নিয়ম অনুযায়ী, সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেই পরবর্তী তারিখ শুরু হয়ে যায়। আর ইংরেজি মাসের নিয়মে রাত ১২টা ১ সেকেন্ড থেকে পরবর্তী তারিখ বা বার শুরু হয়। বাংলা পঞ্জিকামাফিক, ঊষালগ্নে তারিখের পরিবর্তন ঘটে। তাহলে একই দিনে সারা বিশ্বে কিভাবে রোজা ও ঈদ পালন করা সম্ভব হবে? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই সময়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয় না। বাংলাদেশে সন্ধ্যা ৬টায় সূর্যাস্তের পরে চন্দ্রোদয় হলে তখন আমেরিকায় ভোর ৪টা। আবার আমেরিকায় সন্ধ্যা ৬টায় চন্দ্রোদয় হলে বাংলাদেশে তখন ভোর ৪টা। সময়ের এ ব্যবধানের জন্য সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন করা সম্ভব নয়।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তায়ালার ওহি বা বাণীর সঙ্কলন হচ্ছেÑ পবিত্র কুরআন মজিদ। পবিত্র কুরআন এমন একটি বহুলপঠিত ধর্মগ্রন্থ, যা বিশ্বে বিরতিহীনভাবে ২৪ ঘণ্টাই পঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে দিন ও রাতের সময় ভিন্ন হওয়ায় বিশ্বের কোথাও না কোথাও নামাজ, রোজা, জিকির, দোয়া, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল, তাবলিগ ইত্যাদির মাধ্যমে কুরআন অবিরাম পঠিত হচ্ছে (কুরআনের অলৌকিক তথ্য মোহ : দ্বীন-ই-ইসলাম, ইউনিভার্সাল বুক সাপ্লাই, ৭৮/এ কলুটোলা স্ট্রিট, কলকাতা ৭৩, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৭-পৃষ্ঠা ৯০)। যদি একই দিনে পৃথিবীর সর্বত্র রোজা ও ঈদ পালন করা হয়, তাহলে কি পবিত্র কুরআন বিরামহীনভাবে ২৪ ঘণ্টা পঠিত হতে পারত?
মহানবী সা: চাঁদ দেখে রোজা বা ঈদ পালন করতে বলেছেন। যদি একই দিনে পৃথিবীর সর্বত্র রোজা বা ঈদ পালন করা যায়, তাহলে চাঁদ দেখার গুরুত্ব থাকে না। যেখানে পৃথিবীর সর্বত্র একই দিনে চন্দ্রোদয় হয় না, সেখানে কিভাবে একই দিনে রোজা বা ঈদ পালন করা যাবে? আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বোঝার তওফিক দান করুন।হ


আরো সংবাদ



premium cement