২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রসঙ্গ যখন ‘চিকিৎসাসেবা’

-

প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে কত মানুষ চিকিৎসার জন্য যান, তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। প্রতি বছর এই হিসাব বেড়েই যাচ্ছে। অনেকের প্রশ্ন, এ বিপুল সংখ্যক মানুষ সময়, অর্থ ও শ্রম খরচ করে কেন ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন? জবাব একটাই, ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্যই অতিরিক্ত টাকা খরচ আর কষ্ট করে যাচ্ছেন তারা।
চিকিৎসকদের সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়, ভালো আচরণ, প্রয়োজনের বাইরে টেস্ট না করানো, সর্বোপরি তুলনামূলকভাবে কম খরচে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার নিশ্চয়তা পাওয়াÑ এসব কারণে এই হিড়িক। রোগীর যত বড় লাইন হোক না কেন, একজন রোগীকে ভালো করে পর্যবেণ ও দেখার জন্য যতণ সময় লাগবে, ততণই সেখানে চিকিৎসকেরা সময় দিয়ে থাকেন। আমাদের দেশে এ ধরনের চিকিৎসাসেবা কম বলেই এ দেশের মানুষ ভারতে ছুটে যাচ্ছেন। রোগ নির্ণয়ের েেত্র আমাদের দেশে পরীার যেন শেষ নেই। একটা রোগ নিয়ে গেলে আপনাকে ৮-১০টা টেস্ট ধরিয়ে দেয়া হয়। ৮-১০টা টেস্ট দিয়ে নিচে আবার লিখে দেয়া হয়, কোথায় করাবেন তা-ও। ডাক্তারের পছন্দের জায়গা থেকে টেস্ট না করালে আপনার রিপোর্ট ভুল বলতে তার বাধবে না। তারা কমিশনও দেন। ৮-১০ টেস্ট দিয়ে হাসিমুখে বলেন, ‘এই ঠিকানায় যাবেন, এটা দেখালেই ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দেবে আপনাকে।’ শুনে আমরা গলে যাই, মনে মনে বলিÑ ‘ইস, ডাক্তার কত ভালো, কমিশন দিয়েছেন।’ ১০ শতাংশ কমিশন দিয়ে তিনি যে তিনটা টেস্ট বেশি করিয়ে নিলেন, তা কেউ টের পাই না।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা: কামরুল হাসান খান বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে বলেছেন, ‘ভারতের অন্তত ৩০০ হাসপাতালের এজেন্ট এ দেশে কাজ করছেন। যেসব রোগী ভারতে চিকিৎসা নিতে যান, তাদের ৮০ শতাংশকেই আমরা চিকিৎসা দিতে সম। অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এর মধ্য থেকেই আমরা আমাদের চিকিৎসাসেবার উন্নয়ন করছি।’ দেশের মানুষ সম্ভব হলে ভারতে চিকিৎসা করায়, কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা দেশে কোনো চিকিৎসাই করাতে চান না। কিছু হলেই তারা চলে যান অন্য দেশে। তাদের জন্য কি তাহলে দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার এত অভাব? এটা জনমনে প্রশ্ন।
বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব মনে করেন, ‘অনেক েেত্র এটা মানসিকতার বিষয়। তবে কখনো কখনো চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। কারণ, কিছু চিকিৎসার েেত্র বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি এখনো আসেনি। তবে বেশির ভাগ েেত্র বাংলাদেশের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব বলে তার অভিমত।’ অনেকের মতে, ভিনদেশে না গিয়ে, বাংলাদেশের রাষ্ট্র কিংবা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিলে বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার মান নি¤œগামী হতো না। তারা যদি দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেন, তা হলে এখানকার ডাক্তারেরা নিজেদের কর্মস্থলের প্রতি মনোযোগী হতেন; অনুপস্থিত থাকতেন না। তখন তারা হাসপাতালগুলোতে সেবার মান কেমন হচ্ছে তা-ও বুঝতে পারতেন।
এক হিসাবে বলা হয়, বাংলাদেশে যে ১৫ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল, কিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে, তার অর্ধেকই রাজধানী ঢাকায়। এত চিকিৎসাকেন্দ্র, তারপরও মানুষ কষ্ট করে বিদেশ চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বলতে দ্বিধা নেই, দেশের কিনিকগুলোর বেশির ভাগই চিকিৎসার নামে ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা গৌণ, ব্যবসা মুখ্য। সরকারি হাসপাতালগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি সবার জানা। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার হাসপাতালগুলোতেও বাংলাদেশী রোগীদের চিকিৎসায় বিপুল অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। এ দেশের চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রতি বছর অনেক রোগী চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান, এটা ঠিক। আর যেকোনো স্থানে ভালো চিকিৎসা পাওয়া প্রত্যেকের স্বাস্থ্যগত অধিকার।’ কিন্তু অবাক হতে হয় যখন শুনি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও চিকিৎসা নিতে ছুটে যান বিদেশে। শুধু ভারতেই ২০১৬ সালে মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে গেছেন এক লাখ ৬৫ হাজার বাংলাদেশী। পর্যটন ভিসা নিয়ে অনেকে চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন। থাইল্যান্ডের শুধু ব্যাংককের হাসপাতালেই প্রতি বছর কয়েক হাজার রোগী চিকিৎসা করাতে যান বাংলাদেশ থেকে। হ


আরো সংবাদ



premium cement