২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

‘টেবিলের অন্য পাশ’ থেকে কিছু ভাবনা

-

এ দেশে সরকারি অফিসে সাধারণ মানুষের হয়রানির শেষ নেই। অফিস এবং এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সরকার পরিকল্পনা অনুসারে অফিস স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার কাজ করে থাকে। অপর পক্ষে, আমরা হলাম সেবা গ্রহণকারী (যাদের করের টাকায় এবং যাদের সেবা করার জন্য সরকারি অফিসগুলো স্থাপন করা ও পরিচালিত হয়) অর্থাৎ যারা টেবিলের অপর প্রান্ত থেকে সেবা পাওয়ার কথা। কিন্তু হচ্ছে এর উল্টো। সরকারের সব অফিস স্থাপন, এর ব্যবস্থাপনা ও তার পদ্ধতি সবই নির্ধারণ করে থাকে তা টেবিলের ড্রয়ারের পাশের লোকজন। এর কিছুটা তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য, কিছুটা ক্ষমতার দম্ভ দেখানোর জন্য, কিছুটা অজ্ঞতার কারণে, কিছুটা বিদ্যমান ঔপনিবেশিক আইন-কানুন এবং ধ্যান-ধারণার প্রভাবে, কিছুটা সেবা গ্রহণকারীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় না নেয়ার এবং অন্যান্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে। এরাই যখন অবসর গ্রহণ করে অথবা চাকরিচ্যুত হয় তখন নিজেরাও এসব অব্যবস্থাপনার শিকার বা ভুক্তভোগী। তখন তাদের এ ধরনের অব্যবস্থা, অনিয়ম এবং অযৌক্তিক ও হয়রানিমূলক পদ্ধতির সংশোধনকল্পে কিছুই করার থাকে না। যাদের সে ক্ষমতা থাকে তাদের কথাই এখানে বলা হচ্ছে।
সেবা গ্রহণকারী হিসেবে নিজেদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরছি। এসব প্রস্তাব শুধুই সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ কমানোর কথা ভেবেই লেখা। বাংলাদেশের ভূমি সীমিত। সে তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। সরকারি অফিসের স্থাপনাগুলো একেকটি একেক জায়গায়, অর্থাৎ বিভিন্ন স্থানে ছড়ানো-ছিটানো এবং প্রচুর জায়গা নিয়ে বিশাল বাউন্ডারির মধ্যে একপাশে বা এক কোণায় অথবা শুধু মাঝখানে অবস্থিত। বাকি বিশাল জায়গা দীর্ঘকাল অব্যবহৃতই থাকে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও অপ্রতুল ভূমির দেশে বেশির ভাগ সরকারি অফিসের জন্য অপ্রয়োজনীয় জায়গা বরাদ্দ বা অধিগ্রহণ শুধু সরকারি অর্থের অপচয়ই নয়, বিশাল জায়গায় এবং বিচ্ছিন্নভাবে ছড়ানো এসব সরকারি অফিস জনসাধারণের হয়রানি এবং আর্থিক ও কর্মঘণ্টা অপচয়েরও কারণ।
বিদ্যমান পদ্ধতি বা নিয়ম অনুসারে, শুধু একটি কাজের জন্যই কয়েকটি অফিসে যেতে হয়। কোনো অফিসে গিয়ে একদিনে একটি অথবা একটি কাজের আংশিক করতে পারলেও যানজটের কারণে অথবা এক অফিস থেকে অন্য অফিসে যাতায়াতে বেশি সময় লাগায় অন্য অফিসের বাকি কাজ বেশির ভাগ সময়ে আর শেষ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। সরকার যদি একই ধরনের নির্দিষ্ট কাজের জন্য যে যে সরকারি অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন সেগুলো অথবা বেশির ভাগ সরকারি অফিস এক জায়গায় একটি বহুতল ভবনে পরিকল্পনা মাফিক স্থাপন করে; জনগণ কম সময়ে বিভিন্ন অফিসে কম খরচে যাতায়াত করতে পারত এবং যানজটের বিড়ম্বনা থেকেও রক্ষা পেত।
জনগণের কাছ থেকে এসব অফিসের নিচের তলায় এবং সব অফিসেই একটি ওয়ানস্টপ সার্ভিস বা অভ্যর্থনা ডেস্ক অথবা পাশাপাশি স্থাপিত সব অফিসের ভিন্ন ভিন্ন অভ্যর্থনা ডেস্কে সিরিয়াল নম্বর অনুসারে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গ্রহণ করলে এবং শুধু জটিল কাজগুলোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একজন কর্মকর্তার সাথে দেখা করার ব্যবস্থা থাকলে ভালো হবে। কাজের পরিমাণ ও গুরুত্ব অনুসারে ডেলিভারির সময়সীমা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাদানের সময়ই লিখিতভাবে সিরিয়ালের কাগজে নির্ধারণ করে দিলে ভালো হয়। জরুরি ও স্বল্প সময়ে সম্পাদনযোগ্য সরকারি সেবাগুলো স্বল্প সময়ে অথবা একই দিনে দেয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত।
কাজের গুরুত্ব বা জটিলতা ভেদে এবং পদস্থ কর্মকর্তাদের কাজের ক্ষমতা ও পরিধি আনুসারে অফিসগুলো ইউনিট-১, ২, ৩Ñ এভাবে বিভিন্ন জায়গায় থাকতে পারে। প্রত্যেকটি ইউনিটে প্রায় সব সরকারি অফিসের শাখা থাকবে। আর একটি হেল্প ডেস্ক থাকলে ভালো হয়, যেখান থেকে সাধারণ নাগরিকেরা কোন কাজের জন্য কোন অফিসে যেতে হবে বা কাজের ক্রম পদ্ধতি জানতে পারবে।
লেখক : সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন


আরো সংবাদ



premium cement