১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজনীতিতে ‘ভাইতন্ত্র’

-

আধুনিক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন তন্ত্রের প্রভাব লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বিভিন্ন তন্ত্রের সয়লাব চলছে। তবে আমাদের প্রিয় স্বদেশের রাজনীতিতে সব তন্ত্রের সেরা তন্ত্র হিসেবে আধিপত্য বিস্তার করছে ‘ভাইতন্ত্র’। এই তন্ত্রের সুফল বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী পেতে পারে। রাজনৈতিক দল বা রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নে এর বিশেষ কোনো ভূমিকা পরিলক্ষিত হয় না। ভবিষ্যতেও হবে না। এই তন্ত্রীদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, মান জলাঞ্জলি দিয়ে নিজস্ব ফায়দা হাসিল করা। নিজ দলের লক্ষ্য ও কার্যাবলি সম্পর্কেও এরা ওয়াকিবহাল নয়। এরা শুধু বড় ভাইদের খুশি করার জন্য তৎপর থাকে। নিজ দলের বিষয়ে উদাসীন, উদাসীন জাতি ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো সম্পর্কেও।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রধান দু’টি দল আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। এই দু’টি দলের মধ্যে ভাইতন্ত্র প্রবলভাবে বিরাজমান। ফলে দল দু’টি সাংগঠনিকভাবে সব ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করতে পারছে না। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় আছে। এ জন্য এই তন্ত্রীদের দোর্দন্ড প্রভাব সত্ত্বেও দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে খুব কমই। ক্ষমতার পালা বদল হলে ‘ভাইতন্ত্রী’রা আওয়ামী লীগকে কোথায় নিয়ে যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। অন্য দিকে, বিএনপির মধ্যে ভাইতন্ত্রের প্রভাব এতটাই বেড়েছে যে দলীয় কর্মসূচি পালনের চেয়ে ভাইদের কর্মসূচি পালনে অনেকের তৎপরতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। অভিযোগ আছে, এ জন্যই বিএনপি সফল কোনো আন্দোলন পরিচালনা করতে পারছে না। ভাইতন্ত্রের ফলেই আন্দোলন সংগ্রামে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন না। যে যে ভাইয়ের অনুসারী, সেই ভাই যে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন, তিনিও সেই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তাহলে দলীয় কর্মসূচি সফল হবে কেমন করে?
ছাত্রদল হলো বিএনপির প্রধান উৎস। অর্থাৎ, এই ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য হয়। তাই সব ‘ভাই’র দৃষ্টি ছাত্রদলের প্রতি। তাদের পছন্দের লোক যদি কমিটিতে না আসে তাহলে কমিটি কার্যকর হয় না। এই নেতৃত্বের সাথে ক্যাম্পাসগুলোর নিয়মিত ছাত্রদের তেমন যোগাযোগ নেই। তাহলে আন্দোলন হবে কিভাবে? বিরাট কেন্দ্রীয় কমিটি থাকা সত্ত্বেও হাতেগোনা কিছু নেতা সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। বাকিরা ‘ভাই’দের পছন্দের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে। বেশির ভাগই রাজনীতিকে অতিরিক্ত হিসেবে নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিগুলো নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে গঠন করা যাচ্ছে না ভাইতন্ত্রের প্রভাবের ফলে। তাহলে দলের নেতা তৈরির উৎসে কি ভাটা পড়ছে না? ১০-১৫ বছরের এক বিরাট জেনারেশন শূন্যতা দেখা যাচ্ছে বিশেষত ছাত্রদলের রাজনীতিতে। বাংলাদেশের অন্যতম উচ্চ বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এর প্রতিষ্ঠার এক যুগ অতিক্রম করেছে ২০১৭ সালে, কিন্তু ছাত্রদলের কোনো কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাকি আজ পর্যন্ত আসেনি। ১৩ বছরে কমিটিও হয়েছে মাত্র চারটি। নিয়মিত ছাত্রদের কমিটিতে আসতে দেয়া হয়নি ভাইতন্ত্রীদের প্রভাবের ফলে। ছাত্রদলের সব কমিটির মেয়াদ এক বছর। কোনো পর্যায়েই এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। জেলা, উপজেলা ছাত্রদলের কমিটিগুলোর অবস্থা আরো শোচনীয়। কোনো কোনো উপজেলার কমিটি এক যুগ অতিবাহিত করার খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। আবার কোনো জেলা কমিটিও অর্ধযুগ অতিক্রম করেছে। এভাবে চলতে থাকলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বুঝতে হবে। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কোনো কমিটিতে নিয়মিত ছাত্র কম বরং কমিটিগুলোতে ‘বাবা’দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে অনেকে রসিকতা করে বলে থাকেন।
জাতীয়তাবাদী যুবদল বিএনপির ‘নেতা তৈরির কারখানা’। কিন্তু যুবদলের কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর নতুন কমিটি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জেলা, উপজেলা, মহানগর সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা বিরাজমান। স্বেচ্ছাসেবক দলও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রধান অঙ্গ সংগঠনগুলোর যদি এ অবস্থা হয় তাহলে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কিভাবে ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটানো যাবে? এখন সব চেয়ে কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন বিএনপি। বিএনপি জনগণের সমর্থনে সরকার গঠন করলে এই ভাইতন্ত্রীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেলে দলই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
ভাইতন্ত্রীরা দলের প্রকৃত অবস্থা দলীয় প্রধানকে জানায় না। কারণ, এতে তাদের অবস্থা বেহাল হবে। পক্ষান্তরে তারা নিজেদের দুর্বলতাকে আড়াল করার জন্য দলীয় অবস্থাকে দুর্বল করছে। নেতৃত্ব কি ভাইতন্ত্রীদের বলেছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কমিটি করতে। বরং ভাইতন্ত্রীরাই নেতৃত্বকে ভুল বুঝিয়ে নিজেদের লোক কমিটিতে রাখার জন্য নানা টালবাহানা শুরু করে দেয়। এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে দল ও দেশের জন্য ও জনসাধারণের জন্য বিরাট সঙ্কট ঘনীভূত হবে। এ অবস্থা যত দ্রুত সম্ভব অতিক্রম করা উচিত।
ভাইতন্ত্রের প্রভাব বজায় থাকলে নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ তাদের পছন্দের প্রার্থী যদি মনোনয়ন না পান তাহলে নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের হিসাব কঠিন হবে। সব ক্ষেত্রে যদি গোপন ভোটের মাধ্যমে নেতা-নির্বাচনের প্রক্রিয়া চালু থাকে, একটি ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা থাকে, তাহলে তাহলে হয়তো বা কমিটিগুলো গঠনের ক্ষেত্রে ভাইতন্ত্রের প্রভাবের মূলোৎপাটন করা যায়। দলের শীর্ষস্থানীয় পর্যায় থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে এদের ক্ষমতা হ্রাস করা সম্ভব।
মনে রাখতে হবে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিকে বাংলাদেশের জনসাধারণই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জনগণই বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছে। জনগণই দলটির শেষ আশ্রয়স্থল। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপি যেখানে নির্বাচন করছে, বিপুল জনসমর্থন পাচ্ছে। অবশ্য ভোটারবিহীন অনির্বাচিত সরকার বিএনপির বিজয় নিয়ে প্রহসন করছে। অর্থাৎ, অবৈধ পথ অবলম্বন করে বিএনপিকে পরাজিত করছে আওয়ামী লীগ। এটা মূলত বিজয় নয়। এটাকে বলে নির্বাচনের ফলাফল ছিনতাই। বিএনপির বিশাল জনসমর্থন ভাইতন্ত্রীদের অবদান নয়। এটা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা; তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্ব এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তারুণ্যের অহঙ্কার তারেক রহমানের সম্মোহনী নেতৃত্বের সুফল। ভাইতন্ত্রীদের জন্য কোনোভাবেই এই তিন মহান মানুষের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইমেজ বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া যায় না। হ
mahmuduljnu71@gmail.com

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’ ইরানের সাথে ‘উঁচু দরের জুয়া খেলছে’ ইসরাইল! অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে সালাম-মজনু গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু মসজিদের ভেতর থেকে খাদেমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার মোরেলগঞ্জে সৎভাইকে কুপিয়ে হত্যা দুবাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো?

সকল