২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মানুষ গড়ার আঙিনায় হামলা

-

প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ আজ কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে বিশ^ মানচিত্রে তার অবস্থান জানান দিচ্ছে, তা বোধের অগম্য। জীবন এখানে কেমনÑ প্রশ্নের জবাব পাওয়ার আগে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্য চরিত্র এবং নৈতিকতার ব্যারোমিটারে আমাদের মান নির্ধারণের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পৈশাচিক আক্রমণে ভূলুণ্ঠিত মানসম্মান, ইজ্জত-আব্রু আর মর্যাদা। মানুষ গড়ার আঙিনায় হায়েনার অট্টহাসি।
গরিব বাবার মেধাবী সন্তান একটি চাকরির জন্য হয়তো আন্দোলনের সারিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিল। সতীর্থদের আক্রমণে আহত হওয়ার পর তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, চিকিৎসা লাভের মৌলিক অধিকারও তার জন্য সঙ্কুচিত। ‘তুমি এখনি হাসপাতাল থেকে বিদায় নাও’- এটাই ওপরের নির্দেশ। রাত ১২টা নাকি ৩টা সেটা মুখ্য বিষয় নয়, এখনি হাসপাতাল থেকে পালাও। অনেকে এখন পালিয়েই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এক কবি কি এ জন্য লিখেছিলেন ‘ওটা ডাকাতদের গ্রাম..।’ কবি এখনো বেঁচে আছেন। হে প্রিয় কবি আপনি কি আর একটি কবিতা লিখবেন?
উত্তর জনপদের আরেক বিশ^বিদ্যালয়ে হাতুড়ি বাহিনীর আক্রমণে কোমর এবং পায়ের হাড্ডি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে এক ছাত্রের। পত্রিকায় তার এক্স-রে রিপোর্ট ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশের চিত্রই যেন তুলে ধরেছে। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রের ওপর আক্রমণ চালিয়ে পায়ের মূল হাড় টুকরো টুকরো করে হামলাকারীরা তাকে পঙ্গু করেনি, বরং যেন বাংলাদেশকেই পঙ্গু করে দিয়েছে।
হামলা এবং নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট। এ কারণে এত বড় অপরাধ করার পরও তারা ‘ধরাছোঁয়ার বাইরে’। পুলিশের সামনেই তারা কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করেছে। রাষ্ট্র এবং রাজনীতির যে একদলীয় করণ তাতে পরমত সহ্য করার মতো কোনো অবকাশ রাখা হয়নি। এর প্রভাব সর্বত্র। ভিন্ন মতের কারো কোথাও জায়গা নেই। এমনকি সরকারি চাকরির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো রাজনৈতিক পরিচয় আর কোটা পদ্ধতির বেড়াজালে যোগ্য ও মেধাবীদের পরিবর্তে অন্যদের দখলে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে সরকারি নিয়োগে কোটা পদ্ধতি এক আজব ব্যবস্থা। উন্নত দেশেও কোটা পদ্ধতি চালু আছেÑ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং দেশের জন্য বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের সন্তানদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু থাকলেও বাংলাদেশের মতো এমন উদ্ভট সিস্টেম পৃথিবীর আর কোনো দেশে পাওয়া যায় না। পাশের দেশ ভারতেও কোটা পদ্ধতি চালু আছে। ভারতে একবার যাকে কোনো পর্যায়ে কোটার সুযোগ দেয়া হয়, তিনি জীবনে আর এ বিষয়ে কোটার সুযোগ পান না; কিন্তু আমাদের দেশে কোটা সিস্টেমকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সরকারি নিয়োগের বেশির ভাগ কোটায় পূরণ হওয়ার পর খুব সামান্য সংখ্যক পদই মেধাবীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এ পদগুলো মামা-খালু ও তথাকথিত তদবির বাণিজ্যের জন্য মেধাবীদের কপালে জোটাও খুব মুশকিল হয়ে যায়। তাই কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি দীর্ঘ দিনের। এ বিষয়ে মাঝে মধ্যে বাদ-প্রতিবাদ এবং পত্রপত্রিকায় লেখা হলেও প্রকাশ্য আন্দোলন শুরু হয় ২০০৬ সালে। তবে কোটা সংস্কার নিয়ে এবারের আন্দোলনে ভিন্নমাত্রা দেখা গেছে। গোটা দেশের ছাত্রছাত্রীরা একযোগে যেভাবে রাজপথে নেমে এসেছে, এভাবে আর কখনো হয়নি। ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর তরফে যখন বলা হলো, কোটা পদ্ধতিই থাকবে না, আন্দোলনকারীরা এ কথায় বিশ^াস করে পড়ার টেবিলে ফিরে গিয়েছিল; কিন্তু দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য মৌখিক ঘোষণা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিছু দিন ধরে শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনের ময়দানে। এ দফায় নতুন করে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সারা দেশেই তাদের ওপর বিভিন্নভাবে হামলা হয়েছে। এই ন্যক্কারজনক আক্রমণের সংবাদ প্রায় সব জাতীয় দৈনিক এবং টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে ছবিসহ।
মানুষের কথা বলার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, সভা-সমাবেশ করার মতো সংবিধান স্বীকৃত অধিকারগুলো রহিত করে একদলীয় কুশাসন জারি রাখার কারণেই এসব দানবীয় কর্মকাণ্ডের সৃষ্টি। সংবিধান স্বীকৃত অধিকারগুলো উন্মুুক্ত করে দেয়াই বাস্তবতার দাবি। জুলুমতন্ত্রের ছায়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তাদের লাগাম টেনে ধরতে হবে এ মুহূর্তেই। জনগণের জন্য জনগণের দ্বারা শাসনের পথকে প্রশস্ত করতে হবে। হ


আরো সংবাদ



premium cement