২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অভিবাসী নারীরা শ্রমিক; ক্রীতদাসী নন

-

গৃহকর্মী নির্যাতন শুধু একটি দেশের সম্যসা তা কিন্তু নয়, এটি এখন বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। শ্রমজীবীদের যেসব অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে এর মধ্যে সর্বপ্রথম অধিকার তাকে শুধু পূর্ণ মজুরি দেয়াই যথেষ্ট নয়, বরং যতটা সম্ভব দ্রুত মজুরি পরিশোধ করা। শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি দিতে উৎসাহ দেয় ইসলাম। অথচ লক্ষ করলে দেখা যাবেÑ ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামি মূল্যবোধের অভাবে মানুষ তার ন্যায্য অধিকারটুকু পাচ্ছে না। যে সমাজ বা রাষ্ট্রে ইসলামের মৌলিক বিধান চালু আছে সেখানেও নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মানুষকে তার শ্রমের জন্য যথাযথ মর্যাদা ও পারিশ্রমিক না দেয়ার মানসিকতা থেকে মানুষ মানুষকে যেসব উপায়ে পণ্য করে তোলে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণ্য পথটি হলো মানুষকে ক্রীতদাসে পরিণত করা। যে নারীরা আরবে শ্রমিক হিসেবে গিয়েছে তারা শ্রমিক, তারা পতিতা কিংবা দাসী নয়! অথচ তাদেরকে পতিতার মতো ব্যবহার করা হলেও সরকার সংশ্লিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দ পর্যন্ত করছে না কেন, তা বোধগম্য নয়।
অত্যন্ত অমানবিক অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক নারীশ্রমিক সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছে। তাদের ওপর যে অমানুষিক নিষ্ঠুরতা ও যৌন নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা লিখলে সমাপ্তি টানা যাবে না। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে তখন এ দেশের হতভাগ্য দরিদ্র পরিবারের হাজারো নারী পোষা গরু-ছাগল কিংবা বসতভিটা বিক্রি করে উপার্জনের আশায় আরবে পাড়ি জমিয়েছে। তাদের আশা ছিল, কাজ করে পরিবারের জন্য টাকা পাঠাবে। কিন্তু তাদের সবাইকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। তাদের ফিরে আসার পথটাও সহজ ছিল না। অনেক নারী জীবন বাঁচানোর তাগিদে দেশে ফিরেও স্বস্তির নিঃশ্বাসটুকু নিতে পারছে না। সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে আত্মীয়-স্বজনও তাদের গ্রহণ করছে না। তাদের অনেককেই স্বামী তালাক দিয়েছে, যা পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এমনকি কলিজার টুকরা ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত আশ্রয় দেয়নি। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! যাদের মুখে হাসি ফোটাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দু’পয়সা রোজগার করতে গিয়েছিল তারা-ই আজ সংসারে ঠাঁই দিচ্ছে না। এর চেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা মানুষের জীবনের আর কী হতে পারে!
বিশ্বব্যাপী নারীরা নিষ্ঠুর নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। রয়টার্স ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের ভাষ্যমতে বিশ্বে নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ ভারত। নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো, বাধ্যতামূলক দাস হিসেবে ব্যবহার করাসহ বিভিন্ন কারণে নারীদের জন্য বিপজ্জনক দেশের তালিকায় সবার উপরে ভারতের অবস্থান। ভারতের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম, কারণ ভারত ধর্মনিরপেক্ষ একটি দেশ। মক্কা-মদিনাকে ভালোবাসেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেই পবিত্র মাটিতে নারী গৃহকর্মীরা যখন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়, তখন সত্যিই মনে দাগ কাটে। তবে এটাও ঠিক সেই পবিত্র মাটিতে মানবতার মহান শিক্ষক হজরত মুহাম্মদ সা:-এর যেমন জন্ম হয়েছে তেমনি শয়তানের পূজারি আবু জেহেল আবু লাহাবেরও জন্ম হয়েছে। সুতরাং আরবের সব মানুষই খারাপ তা বলছি না। তবে আরবের একশ্রেণী অমানুষ আমাদের নারী শ্রমিকের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে বিতাড়িত করেছে, তার সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত।
গৃহকর্মীর অভাবে যখন সৌদিতে হাহাকার চলছিল তখন সৌদি সরকার বাংলাদেশকে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী নেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দিলে তৎকালীন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী মারহাবা মারহাবা বলে সে প্রস্তাব লুফে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সাফ জানিয়ে দেন, সৌদি শ্রমবাজার খুলে গেছেÑ এখন থেকে প্রতি মাসে হাজার দশেক গৃহকর্মী নেবে সৌদি আরব। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সৌদিতে বাংলাদেশী শ্রমিক নেয়া বন্ধ ছিল। অনেক চেষ্টা তদবির করেও সরকার যখন সৌদিতে আরবে শ্রমবাজার খুলতে পারেনি তখন গৃহকর্মী পাঠানোর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। আর বাজারে রটিয়ে দেয়া হয় সৌদিতে আরবের শ্রমবাজার খুলে গেছে। অথচ গৃহকর্মীরা এখন শরীরে ক্ষত আর মনে আতঙ্ক নিয়ে পালিয়ে দেশে ফিরছেন। ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো যখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারীকর্মী পাঠান কমিয়ে দিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ থেকে অতি উৎসাহিত হয়ে গৃহকর্মী পাঠানো হলো; কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে কেন নিশ্চিত করা হলো নাÑ এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। আমাদের নারী গৃহকর্মীরা শুধু আরবেই নির্মম নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা কিন্তু নয়, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশেই কমবেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অথচ একটি ঘটনারও সুষ্ঠু বিচারের নজির দেখা যায়নি। বিশ্বব্যাপী মানুষের মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত। ক্ষমতাসীন শাসকেরা মুখে মানবতার কল্যাণের কথা বললেও বাস্তবে তারা মানবতা লঙ্ঘন করতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। অথচ মানবতার মহান শিক্ষক হজরত মুহাম্মদ সা: দাসদাসীর সাথে উত্তম আচরণ করার তাগিদ দিয়েছে। ১৯৯৬ সালে সৌদি আরবে ফিলিপাইনের এক নারী গৃহকর্মীর ওপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। ফিলিপাইন সরকার তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি সরকারের নজরে দিলে সৌদি সরকার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করে। আমরা আশা করব, সরকার গৃহকর্মীর জীবন ও ইজ্জত লুণ্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কারণ অভিবাসী নারীরা শ্রমিক-ক্রীতদাসী নন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত এগিয়ে নিয়ে গিয়েও জেতাতে পারলেন না ত্রিস্তান

সকল