২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ

-

গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশে বেসরকারি শিক্ষা খাতে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। ২০০৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা খাতের মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগের জন্য ‘বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ কর্তৃপক্ষ বেসরকারি সেক্টরে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০০ নম্বরের পরীক্ষার আয়োজন করে; ১০০ নম্বর বিষয়ভিত্তিক আর ১০০ নম্বর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষাটি নৈর্ব্যক্তিক, অন্য দিকে, বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা হচ্ছে লিখিত। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সনদ দেয়া হয়। এ সনদ বেসরকারিপর্যায়ে শিক্ষক পদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার সনদ, চাকরি পাওয়ার নয়। এভাবে সনদ দেয়ার প্রক্রিয়া চলে ১২টি পরীক্ষার মাধ্যমে। শুরু থেকে এরূপ পরীক্ষা নিয়ে নানামুখী বিতর্ক চলে। ফলে একে আরো আধুনিকীকরণ করা হয়। মেধাবী শিক্ষক অনুসন্ধানে আবিষ্কৃত হয় নতুন পদ্ধতি। এ ব্যবস্থায় তিনটি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পাসের পর ১০০ নম্বরের বিষয়ভিত্তিক লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এখানে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা শিক্ষক হিসেবে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পায় গভর্নিংবডির মাধ্যমে। আগের পদ্ধতির সাথে এর পার্থক্য হলো আগে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার জন্য আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করত এই পরীক্ষা পাসের মাধ্যমে। আর বর্তমানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাই এ পরীক্ষা পাসের মাধ্যমে। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষককে বর্তমান পদ্ধতিতে নিয়োগ দেয়া যায়নি, তবে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু বিতর্ক শেষ হয় না বর্তমান বিতর্ক হলো এ নিয়োগপ্রক্রিয়া লেংদি প্রসেস এবং এখানে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় না। প্রকৃত পক্ষে তা-ই। কারণ ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছে। অথচ শিক্ষক নিয়োগ করা যায়নি। ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রায় এক বছর পর। এ প্রবন্ধ লেখা পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষার সময় নির্ধারণ হয়নি। সাম্যের কথাটি এভাবে আসে যে চূড়ান্ত নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কেউ তেজগাঁও কলেজে আর কেউ ঢাকা মহানগরের কোনো অখ্যাত কলেজে নিয়োগ পাবেন। একজনের অর্থনৈতিক সুবিধা বেশি হবে, অন্যজন সরকারের প্রদেয় বেতন ভাতাদি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। ফলে সঙ্কট থেকে যাবে। দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ অবদান রাখা অংশে শিক্ষক সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে। আপনি কোনো পণ্য ক্রয় করে তা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাজারে শো করলেই তাতে লাভ বা ক্ষতির হিসাব অল্প সময়ে পেতে পারেন। শিক্ষা ব্যবসায় বিনিয়োগ তেমনি বিনিয়োগের অব্যাহিত পরে লাভ-লোকসানের দেখা মেলে। কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রটি ভিন্ন। এখানে বিনিয়োগের লাভ-লোকসান পেতে যথেষ্ট সময়ের দরকার হয়। প্রকৃত পক্ষে শিক্ষায় বিনিয়োগে কোনো লোকসান নেই। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হচ্ছেÑ শিক্ষা ব্যবসায় বিনিয়োগ আর শিক্ষার বিনিয়োগ এই দু’টির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। শিক্ষক সঙ্কটে শিক্ষার কি যে ক্ষতি হচ্ছে তা বোঝার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে মানসম্মত শিক্ষক দূরে থাক, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়ার লোকের অভাব পড়েছে। এটা এমন অবস্থায় পতিত হয়েছে যে যাকে রূপক ভাষায় বর্ণনা করতে হয় এভাবে ‘থাক মোর ভিক্ষা, আগে তোর কুত্তা শামলা।’ এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং মানসম্মত শিক্ষক পাওয়ার জন্য নতুন কিছু ভাবতে হবে। কোনো কিছু থেমে থাকে না। চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছার পথে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তখন কাজ চালানোর জন্য বিকল্প পথে চলতে হয়। আর এটাকে বলা হয় কাজ চালানো প্রকল্প। কাজ চালানো প্রকল্প হলো একটা ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থা। শিক্ষক সঙ্কট দূর করার জন্য ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে নি¤েœর কয়েকটি প্রস্তাব বিবেচনা করা যেতে পারে;
প্রথমত : প্রথম থেকে দ্বাদশ শিক্ষক নিবন্ধন সনদধারী এবং ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধন এবং চতুর্দশ শিক্ষক নিবন্ধনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়পর্যায় অর্থাৎ প্রিলিমিনারি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সনদ প্রদান করে এসব সনদধারীদের আগের মতো গভর্নিংবডির মাধ্যমে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশ মোতাবেক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত : নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড মোট ১০০ নম্বরের একটি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার আয়োজন করে এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সনদগুলো ১২ নম্বর, প্রথম থেকে দ্বাদশ সনদধারীদের এবং ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রিলিমিনারি পর্যায় উত্তীর্ণদের ১ নম্বর, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার লিখিত পর্যায় উত্তীর্ণদের ২ নম্বর এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ৩ নম্বরসহ মোট ৬ নম্বর, মৌখিক পরীক্ষা ২২ নম্বর এবং লিখিত পরীক্ষা ৬০ নম্বর বিভাজন করতে পারে। লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে সর্বাধিক নম্বর প্রাপ্তরাই নিয়োগ পাবে। এ ক্ষেত্রে একই কলেজে একই বিষয়ে যতগুলো পদ শূন্য থাকবে তার বিপরীতে সর্বাধিক নম্বর প্রাপ্তদের ক্রমানুসারে নিয়োগ পাবে। যেমনÑ কোনো বিষয়ের পরীক্ষার্থীদের সর্বাধিক নম্বর যদি ৬২, ৬৩ ও ৬৪ নম্বর হয় তাহলে দুই পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে সর্বাধিক নম্বর ৬৩ ও ৬৪ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন।
তৃতীয়ত : সর্বক্ষেত্রে পাস নম্বর হবে ৪০ শতাংশ। এ হিসেবে মৌখিক পরীক্ষায় পাস নম্বর হবে ৯; আর লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর হবে ২৪।
চতুর্থত : লিখিত পরীক্ষা হবে বিষয়ভিত্তিক। অন্য দিকে, মৌখিক পরীক্ষা হবে বিষয়ভিত্তিক এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে।
এভাবে শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে বর্তমান শিক্ষক সঙ্কট দূর করার পর সারা দেশকে অন্তত দশটি অঞ্চলে বিভক্ত করে সরাসরি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। অথবা যেকোনো নতুন উপায় বের করে নিয়োগ করা যেতে পারে। দেশের ৬৪টি জেলাকে ৯টি অঞ্চলে ভাগ করলে প্রতি ভাগে ছয়টি জেলা এবং বাকি ১০টি ক্ষুদ্র জেলা নিয়ে আরো একটি অঞ্চল সৃষ্টি করে শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। হ
লেখক : কলেজ শিক্ষক এবং বাকশিস নেতা

 


আরো সংবাদ



premium cement
থামছে না পুঁজিবাজারে পতন বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোট শুরু: নাগাল্যান্ডে ভোটার উপস্থিতি প্রায় শূন্য কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপির হাল ধরার কেউ নেই : ওবায়দুল কাদের পাবনায় ভারতীয় চিনি বোঝাই ১২টি ট্রাকসহ ২৩ জন আটক স্বচ্ছতার সাথে সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র বাছাই হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী মিয়ানমার বিজিপির আরো ১৩ সদস্য পালিয়ে এলো বাংলাদেশে শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে ২ ভাইকে হত্যা ইরানে ইসরাইলি হামলার খবরে বাড়ল তেল সোনার দাম যতই বাধা আসুক ইকামাতে দ্বীনের কাজ চালিয়ে যাবো : ডা: শফিকুর রহমান

সকল