দুই সিটিতেই আবারো বেড়েছে মশার উপদ্রব
- খালিদ সাইফুল্লাহ
- ২৯ অক্টোবর ২০১৯, ১১:২৭
রাজধানীতে দুই সিটির ওষুধ ছিটানোর বিশেষ কর্মসূচিতে ভাটা পড়েছে। এ সুযোগে আবারো বেড়েছে মশার উপদ্রব। তবে সিটি কর্তৃপক্ষের দাবি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে গেলেও ওষুধ প্রয়োগের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
একই সাথে আসন্ন শুষ্ক মওসুমে মশার উপদ্রব কমাতে এবার আগেভাগেই মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে ধ্বংসের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এবার সারা বছরব্যাপী মশক নিধন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। সাথে লোকবল বাড়াতেও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
দেশে এ বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব মতে চলতি মওসুমে এ পর্যন্ত ৯৫ হাজার ৩৭২ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৪৮ জনের মৃত্যুর খবর থাকলেও সরকার ১৭১টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ১০৭ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বর্তমানে ডেঙ্গু ভয়াবহতা কমলেও এখনো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এই রোগে মৃত্যুও অব্যাহত রয়েছে। তবে রাজধানীতে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেছে। সম্প্রতি কয়েক দিন বৃষ্টিপাত হলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আবারো ডেঙ্গু বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।
এ কারণে এখনো জনমনে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গুর ভরা মওসুমে দুই সিটি করপোরেশন ওষুধ ছিটানোর বিশেষ কর্মসূচি পালন করলেও বর্তমানে সেটি কমে গেছে। আর এ সুযোগে আবারো বেড়েছে মশার উপদ্রব। সন্ধ্যা হলেই মানুষের ওপর হামলে পড়ছে মশা।
রাজধানীর প্রতিটি এলাকাতেই বর্তমানে এ অবস্থা চলছে। তবে ঢাকার দুই সিটি কর্তৃপক্ষ বলছে ডেঙ্গু মওসুমে জনসতর্কতায় অনেক আয়োজন থাকলেও এখন তেমনটি নেই। তবে সিটি করপোরেশন ঠিকই কাজ করে যাচ্ছে।
এ জন্য দুই সিটিই বিশেষজ্ঞ টিম নিয়োগ দিয়েছে। তারা রাজধানীর সর্বেসর্বা মশাপ্রবণ এলাকা তথা ‘হট স্পট’ খুঁজে বের করছেন। এরপর সেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
গত ২৩ অক্টোবর ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, এবার আগেভাগেই তারা মশা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছেন। এ জন্য ১২ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ টিম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন কনসালটেন্ট এবং ১০ জন শিক্ষানবিস কীটতত্ত্ববিদ রয়েছেন। যারা এরই মধ্যে গত ৭ অক্টোবর থেকে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন।
তারা বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৩৪২টি এলাকাকে মশাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে ড্রেনেই সবচেয়ে বেশি ৫৩ ভাগ কিউলেক্স মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এরপর ওই এলাকার ড্রেন পরিষ্কার করে সেখানে ওষুধও দেয়া হয়েছে। এ রকম তথ্য আসার পর গত ২০ অক্টোবর থেকে পুনঃসার্ভে শুরু করা হয়েছে। এতে মশার হট স্পটও কমে এসেছে।
মেয়র আরো জানান, ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে এখন থেকে সারা বছরই বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এর অংশ হিসেবে বর্তমানে দুই সপ্তাহের বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আর ওষুধ ঠিকমতো ছিটানো হচ্ছে কি না, তা তৃতীয় পক্ষ দিয়ে সার্ভে করা হচ্ছে। ঢাকা উত্তরের মতো দক্ষিণ সিটিও মশা নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা: শরীফ আহমেদ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ডেঙ্গু মওসুমে জনগণকে সচেতন করতে যেসব কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল, তা বর্তমানে কমে গেছে। কারণ এখন জনগণ নিজেরাই অনেক সচেতন। তবে এখনো বাড়ি বাড়ি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। একই সাথে ১১ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োজিত আছেন মশার প্রজননস্থল তথা হট স্পট শনাক্তকরণ কাজে। তারা আমাদের কোনো এলাকায় মশার বিস্তার বেশি তা জানানোর সাথে সাথে সেই এলাকার ড্রেন পরিষ্কারসহ ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সামনে নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শুষ্ক মওসুমে কিউলেক্স মশার উৎপত্তির সময়। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা ঘরের পরিষ্কার পানিতে জন্ম নিলেও কিউলেক্স মশা জন্ম নেয় ড্রেনের ময়লা পানিতে। এ জন্য ড্রেনের পানিতে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। একই সাথে উড়ন্ত মশা নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে ৪২৯ জন কর্মীর সাথে নতুন করে প্রতিটি ওয়ার্ডে নতুন লোক নিয়োগ দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
বর্তমানে প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঁচ-ছয়জন ওষুধ প্রয়োগ কর্মী রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০ জন করে কর্মী রাখতে চাচ্ছি। যাতে তারা প্রতিনিয়ত একটি এলাকায় ওষুধ প্রয়োগ করতে পারে। একেক জনের জন্য ছোট এলাকা হলে তারা নিয়মিত ওষুধ দিতে পারবে। এতে মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে। ওই কর্মী নিয়মিত একই এলাকায় ওষুধ দিলে এলাকার মানুষও তাকে চিনতে পারবে। এতে ওষুধ না দিলে এলাকাবাসীই তাকে ডেকে আনতে পারবে।
বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নিজেরাই সরাসরি ওষুধ আনছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চীন ও ভারত থেকে এখন মশার ওষুধ আনছি। বর্তমানে ওষুধের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে বলেও তিনি জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা