২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভোলায় ফেসবুক আইডি হ্যাকের কথা পরিকল্পিত : আল্লামা কাসেমী

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী - ছবি : সংগৃহীত

ভোলায় হিন্দু তরুণ বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অন্য কেউ মহানবী সা:-এর নামে কটূক্তির পোস্ট দিয়েছে- মর্মে যে কথা বলা হচ্ছে তাকে পরিকল্পিত কথা মনে করছেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। তার মতে, যদি সত্যিই তার আইডি হ্যাক হতো তাহলে সাথে সাথেই তিনি থানাকে জানাতেন। যখন মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে তখন তিনি আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে থানায় জিডি করেছেন। চক্রান্তের অংশ হিসেবেই সেই পোস্ট দেয়া হয়েছে। নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে গতকাল হেফাজতের শীর্ষ নেতা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে মনে করছি, তিনি নিজেই এই চক্রান্ত করেছে, নিজেই পোস্ট দিয়েছে।

গত রোববার বোরহান উদ্দিন ঈদগাহ মাঠে হতাহতের ঘটনার জন্য প্রশাসন ও পুলিশকে দায়ী করে আল্লামা কাসেমী বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ছিল জনগণকে তাদের আবেগ প্রকাশ করার সুযোগ দেয়া। তা না করে তারা বিঘœ সৃষ্টি করে গণ্ডগোল লাগিয়েছে। বাধা দিয়ে জনগণকে উত্তেজিত করেছে। উত্তেজিত করার পরেই পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটেছে। এই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি তো ছিল।
সাক্ষাৎকারটি নিম্নরূপ:

নয়া দিগন্ত : ভোলায় মহানবী সা: সম্পর্কে অবমাননাকর পোস্টের ঘটনাটি ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অন্য কেউ পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে বলে বলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?

আল্লামা কাসেমী : ওই হিন্দু তরুণের ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার যে কথা এখন বলা হচ্ছে তা বাস্তবসম্মত নয়। এটা অবান্তর কথা। তিনি থানায় তো জিডি করেছেন যখন আন্দোলন শুরু হয়েছে তারপর। তখন তিনি আত্মরক্ষার জন্য জিডি করেছেন।

নয়া দিগন্ত : আইডি হ্যাকের অভিযোগে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। আপনারা কিভাবে নিশ্চিত হলেন আইডি হ্যাক হয়নি?
আল্লামা কাসেমী : স্থানীয়ভাবে খোঁজখবর নিয়ে আমরা যা জেনেছি তাতে আমরা মনে করি সে নিজেই এই চক্রান্ত করেছে। নিজেই পোস্ট দিয়েছে। এখন আইডি পরিকল্পিতভাবে হ্যাকের যে কথা বলা হচ্ছে-সেটিই সুপরিকল্পিত কথা। আমরা বিশ^াস করি না যে তার আইডি হ্যাক হয়েছে। যদি সত্যিই হ্যাক হয়ে থাকে তাহলে তিনি সাথে সাথেই থানাকে জানালেন না কেন? যখন মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে তখন তিনি থানাকে জানিয়েছেন। এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার পর থানায় জানিয়েছেন। তারপরও আমাদের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন তদন্ত করার জন্য ভোলা যাচ্ছে।

নয়া দিগন্ত : সে দিন বোরহান উদ্দিন উপজেলা ঈদগাহ মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশকে কেন্দ্র করে এমন ভয়াবহ ঘটনা কেন?
আল্লামা কাসেমী : বোরহান উদ্দিনে রোববার তৌহিদি জনতার যে সমাবেশ হয়েছে সেটা জনগণ ঈমানী দাবিতে উজ্জীবিত হয়ে সমবেত হয়েছিল। কিন্তু তারা ঈমানী দাবি জানাতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ছিল জনগণকে তাদের আবেগ প্রকাশ করার সুযোগ দেয়া। তা না করে তারা বিঘœ সৃষ্টি করে গণ্ডগোল লাগিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হলো শান্তি রক্ষা করা। তারা শান্তি রক্ষা না করে জনগণকে বাধা দিয়েছে, জনগণকে উত্তেজিত করেছে। উত্তেজিত করার পরেই পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটেছে। আমি মনে করি, সেই ঘটনার জন্য প্রশাসন দায়ী, পুলিশ দায়ী।

নয়া দিগন্ত : বিক্ষোভকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আত্মরক্ষায় গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে বলে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
আল্লামা কাসেমী : আমি তো বললামই, পুলিশ বাধা না দিলে জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে চলে যেত। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাই ঘটত না। এমন অনেক প্রতিবাদ সমাবেশই হয়। কয়টিতে পুলিশকে এভাবে গুলি চালাতে হয়েছে। পুলিশ তো তৌহিদি জনতার প্রতিপক্ষ নয়। পুলিশকে মানুষ অযথা আক্রমণ করতে যাবে কেন? নিশ্চয়ই সেখানে উসকানিমূলক কিছু হয়েছে। জনগণ তাতে ক্ষুব্ধ হয়েছে।

নয়া দিগন্ত : পুলিশ তাহলে কী কারণে বাধা বা উসকানি দিয়ে থাকতে পারে?
আল্লামা কাসেমী : এ ক্ষেত্রে পুলিশের বড় ধরনের গাফিলতি ছিল এটা পরিষ্কার। এই ধরনের ঘটনায় শান্তি রক্ষার জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়ার দরকার ছিল পুলিশ তা নিতে ব্যর্থ হয়েছে; চক্রান্তও বলা যেতে পারে এটাকে।

নয়া দিগন্ত : পুলিশের বিরুদ্ধে চক্রান্তের আশঙ্কা কেন করছেন? কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে- দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার জন্য তৃতীয় কোনো পক্ষ এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
আল্লামা কাসেমী : তাহলে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে? সেটা প্রশাসন খুঁজে বের করুক। সাধারণ মানুষ তো প্রতিবাদ ও দাবি জানাতেই সমাবেশ ডেকেছিল। প্রশাসন যদি জনগণকে শাস্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার সুযোগ দিত, বাধা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দিতো তাহলে সমাবেশ শেষ হলে মানুষ ঘরে ফিরে যেত। কোনো অঘটনই ঘটত না। বরং এখন ঘটনার পর আইডি হ্যাকের যে কথা বলা হচ্ছে তাতে আমাদের সন্দেহ আরো বাড়ছে।

নয়া দিগন্ত : পুলিশ রোববারের ঘটনার জন্য প্রতিবাদকারীদের দায়ী করছে এবং মামলাও করেছে।
আল্লামা কাসেমী : এখানে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের কোনো দোষ ছিল না। আল্লাহর হাবিব সা:-এর প্রতি মহব্বত ঈমানের অংশ। সেখানে ঈমানের ওপর আঘাত হেনেছে। ঈমানের ওপর আঘাত আসার কারণে ঈমানী চেতনাসম্পন্ন একজন মানুষ উত্তেজিত হতেই পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল জনগণকে শান্ত রাখার জন্য তাদের আবেগ প্রকাশ করার সুযোগ দেয়া। তা না করে তারা বাধা দিয়েছে। সে জন্য এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার যে হ্যাকের কথা বলা হচ্ছে সেটা আমরা সত্য মনে করছি না।

নয়া দিগন্ত : রোববারের ঘটনার পর পরই ভোলায় মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে এবং এমন অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
আল্লামা কাসেমী : ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য এগুলো কৌশলও হতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো- আমরা সম্প্রীতিতে বিশ^াসী; সাম্প্রদায়িকতায় না। মন্দির বা অমুসলমানদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা কোনো মুমিন-মুসলমানের কাজ হতে পারে না। আমরা এটা বিশ^াস করি না। বরং এমন ঘটনা কেউ ঘটিয়ে থাকলে তাহলে দেশে সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য ঘটানো হয়েছে।

নয়া দিগন্ত : হেফাজত তো সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে? দাবি মানার কোনো আশ^াস পেয়েছেন কি?
আল্লামা কাসেমী : আল্লাহর হাবিব সা:-এর ইজ্জত রক্ষা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আমাদের প্রধানমন্ত্রী; উনারও ঈমানী দায়িত্ব। আমরা অপেক্ষা করব। আমাদের দাবি পূরণ না হলে আমরা আবার আন্দোলনে নামবো। মাঠে নামতে, কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।


আরো সংবাদ



premium cement