১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভোলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন ও পুলিশের বক্তব্য

- ফাইল ছবি

‘ফেসবুক পোস্টকে’ কেন্দ্র করে ভোলার বোরহানউদ্দিনে পুলিশ ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু ও অসংখ্য নিহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।

ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য ওই কমিটিতে পুলিশ সদরদপ্তর, এসবি, পিবিআই এবং জেলা পুলিশ হতে একজন করে কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিকে আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

রোবরার রাতে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে পুলিশ শুরু থেকে তৎপর থাকা সত্ত্বেও এবং আলেম সমাজ পুলিশ কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে কর্মসূচী স্থগিত করলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মকে পুঁজি করে অস্থিরতা তৈরির অপপ্রয়াস চালিয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলসহ সারাদেশে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট না করতে ও কোন অবস্থাতেই ধর্মীয় উপাসনালয়ে আক্রমণ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এর আগে হতাহতের ঘটনায় সমবেদনা প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ বলছে, ‘ফেসবুক আইডি হ্যাকের প্রেক্ষিতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য (২৫) নামে এক যুবক গত শুক্রবার রাতে বোরহান উদ্দিন থানায় জিডি করেন। জিডির সময় থানায় অবস্থানকালেই বিপ্লবের নম্বরে আসা কলে চাঁদা দাবি করা হয়।
প্রযুক্তির সাহায্যে সেদিন রাতেই বিপ্লবের ফেসবুক হ্যাককারী ও তার মোবাইলে কলকারী শরীফ এবং ইমন নামে দুই মুসলিম যুবককে যথাক্রমে পটুয়াখালী এবং বোরহানউদ্দিন থেকে আটক করা হয়।’

এদিকে বিপ্লবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কথিত কমেন্টের জেরে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমান উত্তেজিত হয়ে মন্তব্যকারীর ফাঁসি দাবি করেন এবং পরদিন শনিবার সকাল ১১টায় ঈদগাহ মাঠ ময়দানে প্রতিবাদ সভার ঘোষণা দেন।

এমন প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক, ইউএনও, থানার ওসি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আলেম সমাজের প্রতিনিধিগণের উপস্থিতিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে শনিবার সন্ধ্যায় বোরহান উদ্দিন থানায় দীর্ঘ সময় বিষয়টি আলোচনা হয়। সেখানে আলেম সমাজের অভিযোগের ভিত্তিতে বিপ্লবকে আটক দেখানো হয়। উপযুক্ত আইনী ব্যবস্থার নিশ্চয়তা পেয়ে প্রতিনিধিত্বকারী আলেম সমাজ তাদের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচী বাতিল ঘোষণা করেন। তবে তারপরও পুলিশ বিষয়টিতে সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকে।

আজ (রোববার) সকাল থেকেই কিছু লোক ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হতে থাকে। ময়দানের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানোর জন্য ১৭টি মাইক আনে একটি মহল। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সমবেত লোকজনকে সরিয়ে নিতে বললে উপস্থিত আলেমগণ নিশ্চিত করেন, লোকজন কোনো রকম বিশৃঙ্খলা করবে না।

তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় ও যে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা দিতে সকালেই বরিশাল থেকে রেঞ্জ পুলিশের অতি. ডিআইজি ভোলায় আসেন। তিনি (অতি. ডিআইজি) ইউএনও এবং পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত জনগনের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করে প্রয়োজনীয় সকল আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে উপস্থিত জনতাকে বার বার আশ্বস্ত করলে তারা ঈদগাহ ময়দান ত্যাগ করেন। পরে পুলিশ সুপার ও অতি. ডিআইজিসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ মাদরাসার একটি কক্ষে অবস্থান নেন। এরমধ্যে, অন্য একটি গ্রুপ ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশ করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উত্তেজিত করতে থাকেন।

তারপর, সহসাই একদল লোক বিনা উস্কানিতে মাদরাসার অফিস কক্ষে অবস্থানরত কর্মকর্তাদের উপর আক্রমন করে। আক্রমনকারীদের একদল আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশ ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপর আক্রমন চালায়। আক্রমনকারীদের গুলিতে পুলিশের একজন মারাত্মক জখম এবং অপরজন গুরুতর আহত হয়। বরিশাল রেঞ্জের অতিঃ ডিআইজিও আহত হন।

এ পরিস্থিতিতে, ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আত্মরক্ষার্থে, সরকারি জানমাল রক্ষার্থে ও উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করতে প্রথমে টিয়ার শেল ও পরে শটগান চালায় পুলিশ। পরবর্তীতে, পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে এক পর্যায়ে গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ। ইউএনবি।


আরো সংবাদ



premium cement