১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডেঙ্গু রোগীর খাবার নিয়ে রমরমা বাণিজ্য

ডেঙ্গু রোগীর খাবার নিয়ে রমরমা বাণিজ্য - ছবি : সংগৃহীত

গোপালগঞ্জ থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত বোনকে নিয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে উঠেছেন আশিকুজ্জামান। চার দিকে ডেঙ্গু রোগীর প্রকোপ ও মৃত্যুর খবর শুনে বিচলিত আশিকের পুরো পরিবার। হাসপাতালে ভর্তির পরই চিকিৎসকেরা রোগীকে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি তরল খাবার ও প্রচুর পানীয় পানের পরামর্শ দেন। কারণ এই রোগের প্রধান ওষুধই নাকি পানীয়, তরল, খাবার ও ফলমূল। চিকিৎসকের কাছে এ কথা শুনেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পড়েন আশিক। প্রথমে হাসপাতালের সামনে থাকা কয়েকটি ডাবের দোকানে ছুটে যান তিনি। তড়িঘড়ি করে ডাব কিনে টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠে যায় তার। প্রতিটি ডাবের দাম চাওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। এত দাম কেন জানতে চাইলে বিক্রেতার সাফ জবাব, এক টাকাও কম হবে না। বোনের অসুস্থতার কথা ভেবে কোনো কথা না বলে টাকা পরিশোধ করে চলে গেলেন তিনি। একটু পরেই বাজারে গেলেন পাকা পেঁপে কিনতে। এবার আশিক দোকানির কাছে আগে থেকে পেঁপের দাম জিজ্ঞাস করলেন। দোকানি তাকে জানালেন ‘প্রতি কেজি পেঁপের দাম ১৫০ টাকা। যার মাঝারি সাইজের একটি পেঁপের দাম এসেছে ২১০ টাকা। আশিকের প্রশ্নÑ ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীদের খাবারের এত দাম কেন?
আশিকের অভিযোগ ও প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গত কয়েক দিন বিভিন্ন বাজার ও ফলের দোকানে গিয়ে দেখা যায় ডেঙ্গু রোগীর খাবার নিয়ে রমরমা বাণিজ্যে নেমেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তারা রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এসব ব্যবসায়ীর কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন ডেঙ্গু রোগী, তাদের স্বজন এমনকি সাধারণ ক্রেতারাও। 

সম্প্রতি দেশব্যপী ডেঙ্গু রোগ মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সরকারি হিসাব অনুযয়ী রাজধানী ঢাকাতে বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১৭৯ জন। বিভিন্ন বাসায় রয়েছে আরো অসংখ্য রোগী। এসব রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে ডাবের পানি, পাকা পেঁপে, মাল্টার রস, লেবুর শরবত পান করছেন। আর এই সুযোগটা ব্যবহার করছেন কিছু ব্যবসায়ী। 

মিরপুর শেওড়াপাড়ার কয়েকটি ফলের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ১০০ থেকে ১১০ টাকার মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়। ৪০ থেকে ৮০ টাকার পাকা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা প্রতি কেজি। আনার ৩৫০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। আর ডাবের অবস্থা তো আরো ভয়াবহ। একটু কচি ডাব হলেও প্রতিটি ১০০ টাকা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। আর একটু শক্ত হলেও তা নেয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা। অথচ অন্য বছরের এই সময়ে মাল্টার দাম নেয়া হতো ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। প্রতিটি ডাব বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এসব ফলের এত দাম কেন নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে শেওড়াপাড়া ফল বাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশব্যাপী ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব ফলের চাহিদা বেড়ে গেছে। যার কারণে দামও একটু বাড়তি। তবে তার দাবি- এই দাম তারা বৃদ্ধি করেননি। ফল আমদানিকারকরাই খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছেন। বাধ্য হয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরাও ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দাম নিচ্ছেন। এমনকি দেশীয় ফল ডাব বিক্রিতেও সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ডাব আড়ৎদারেরা মজুদ করে তার দাম বৃদ্ধি করে বিক্রি করছেন। 

একই বাজারে আল আমিন নামে এক ক্রেতা জানান, ডেঙ্গু রোগীর কারণে ফলের চাহিদা বেড়ে গেছে। এই সুযোগে আমদানিকারক ও মুজদদার, খুচরা বিক্রেতা সবাই অন্যায়ভাবে রোগীদের জিম্মি করে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তার অভিযোগ প্রথম ধাপে আমদানিকারক ও মজুদদারা ফলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। তারা যতটুকু বৃদ্ধি করছে তার থেকে আরো বেশি বৃদ্ধি করে বিক্রি করছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তাদের দোহাই দিয়ে আরো কয়েক গুণ দাম বেশি নিয়ে বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। এর প্রমাণ একই ফল একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে। দোকানদারেরা কার কাছ থেকে কত টাকা হাতিয়ে নিতে পারছে তার যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement