১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মিরপুরের বস্তিতে আগুন

ময়নার সেই মেশিনটিও আগুনে কয়লা

ময়নার সেই মেশিনটিও আগুনে কয়লা - ছবি : নয়া দিগন্ত

যেই সেলাই মেলিনের ওপর ভর করে চলতো ময়নার সংসার সেটিও পুড়ে কয়লা হয়েছে আগুনে। পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে এখন রাস্তায় দাঁড়াতে হবে শুক্রবার রাতে মিরপুরের ঝিলপারের পুড়ে যাওয়া বস্তির বাসিন্দা ময়না বেগমকে। ঈদের ছুটিতে ময়নার পরিবারের সবাই ছিলেন গ্রামের বাড়িতে। আগুনের খবর পেয়ে রাতেই ঢাকায় এসে দেখেন সব শেষ। পোড়া টিনের কিছু অংশ ছাড়া অবশিষ্ট আর কিছুই নেই। সংসারের চাকা ঘুরতো যে সেলাই মেশিনে সেটির কোন চিহ্নই নেই। সব হারিয়ে এখন শুধুই দু’চোখে অশ্রু ঝড়ছে ময়না বেগমের।

শুক্রবার রাতে মিরপুরের ৭ নং সেকশনের ঝিলপার বস্তিতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে প্রায় সাত হাজার ঘর। স্থানীয়রা জানান, এখানে বসবাস করতো প্রায় ১০ হাজার পরিবার। সবমিলিয়ে এই বস্তিতে ৩০ হাজার লোকের আবাসস্থল ছিল এই বস্তি। নগরীর বিভিন্ন এলাকার কম আয়ের লোকজনই এখানে এসে নিবাস গড়ে ছিলেন। কিন্তু অনেকের সারা জীবনের স্বপ্ন শুক্রবার রাতের দুই ঘন্টার আগুনেই যেন সব শেষ হয়ে গেছে।

ময়না বেগমও তার পরিবারসহ থাকতেন এই বস্তির পূর্বদিকের দ্বিতীয় গলির তিন নম্বর ঘরে। স্বামী আব্দুল মান্নান শরবত বিক্রেতা। বড় মেয়ে এবার মিরপুর বাংলা কলেজে একদাশ শ্রেণিতে সবে মাত্র ভর্তি হয়েছে। দ্বিতীয় মেয়ে স্থানীয় বঙ্গবন্ধু স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পরে। আর একমাত্র ছেলে ওই একই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

ময়নার আয় ছিল সেলাই মেশিনে অন্যদের পোশাক তৈরি বা টেইলারিং করে। এই আয় দিয়েই চলতো তার পুরো সংসার। কিন্তু আগুনে সেলাই মেশিন পুড়ে যাওয়ার পর এখন তার সামনে শুধুই অন্ধকার।

শনিবার দুপুরে নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে ময়না বেগম জানান, আমার সব শেষ। আমি এখন পথের ভিখারী হয়ে গেছি। ঘরবাড়ি আসবাপত্র যা ছিল এখন চোখের সামনে সবই কয়লা হয়ে পড়ে আছে। সংসার চালাতাম যেই সেলাই মেশিনের ওপর সেটিও কয়লা হয়ে গেছে। আমরা সবাই এখন এক কাপড়ে আছি।

ময়না বেগমের গ্রামের বাড়ি বি-বাড়িয়ার জেলার নবীনগর থানার কাইতলা গ্রামে। তিনি আরো জানান, দীর্ঘ দিন থেকেই আমরা থাকি এই বস্তিতে। বাচ্চাদের পড়াশোনা করাতেই এই বস্তির মাটি আঁকড়ে পড়ে ছিলাম। এখনতো পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না।


আরো সংবাদ



premium cement