২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
লালবাগে আগুন নিভাতে এগিয়ে আসে কয়েক যুবক

জীবন বাঁচাতে জীবন বাজি

লালবাগে আগুন নিভাতে এগিয়ে আসে কয়েক যুবক - ছবি : নয়া দিগন্ত

সংখ্যায় ওরা ১০/১২ জন। বুধবার রাতে লালবাগের পোস্তা এলাকার ৬৯ নং ঢালের কয়েকটি প্লাস্টিক গুদামে যেখানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ঠিক তার উল্টো পাশেই বাসা ওদের। রাত পৌনে ১১ টায় যখন আগুনের সূত্রপাত হয় সেই সময়টাতে ঈদের আনন্দে বন্ধুরা মিলে মাতোয়ারা ছিল তারা। আগুন লাগার পরপরই নিজ পরিবার ও প্রতিবেশীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জীবন বাজি রেখেই আগুন নেভাতে এগিয়ে আসেন তারা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসার আগেই আশপাশের আবাসিক এলাকায় যাতে আগুন ছড়িয়ে পরতে না পারে সেজন্য পানির পাইপ হাতে নিয়ে আগুনের তীব্রতা কমাতে প্রাণপন চেষ্টা করে তারা। সফলও হয়েছে। তিনটি গুদাম ঘরের বাইরে আগুন ছড়াতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় আগুন নেভানোর কাজে সহায়তাকারী এই যুবকদের সাথে। বাসা থেকে বের হওয়ার একমাত্র সরু রাস্তাটি দেখিয়ে হেলাল নামের এক যুবক জানালেন, কোন দুর্ঘটনা হলে এখানকার প্রায় দুই শতাধিক পরিবারই ভেতরে আটকে পড়েন। সরু রাস্তার কারণে গতকালও কেউই বের হতে পারেননি। হেলাল আরো জানায়, আমরা ১০/১২ জন যুবক জীবন বাজি রেখেই আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিয়েছি। আমরা মনে করেছি আগুন যদি কোনক্রমে আমাদের আবাসিক ভবনের দিকে চলে যায় তাহলে কোন লোকজনই বাইরে রেব হতে পারবেন না। একে’তো রাত তারপর আবার বিদ্যুৎও ছিল না। এখানকার সরু এই রাস্তাটি দিয়ে একসাথে দু’জনের বেশি লোক বের হওয়াই যায় না।

বুধবার রাতে হেলালের সাথে আগুন নেভাতে আরো অংশ নেয় রবিন, বোরহান, সোহেল রানা, লোকমান,মনসুরসহ আরো বেশ কয়েকজন যুবক। নয়া দিগন্তকে তারা জানান, আগুন লাগার প্রথম খবর পেয়েই আমরা ঘর থেকে বাইরে এসে দেখি ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। লোকজনের হৈ,চৈ আর দৌড়াদৌড়ি। আমরা প্রথমে চিন্তা করলাম আগুন যদি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে আমাদের আশপাশের আবাসিক ভবনের কোনো লোকজনই বাইরে বের হতে পারবে না। বিশেষ করে নারী এবং শিশুদের কথা মাথায় আসার পরেই আমরা সিন্ধান্ত নিলাম যে করেই হোক, আগুনের তীব্রতাকে রুখতে হবে। আগুন যাতে আবাসিক ভবনের দিকে এগিয়ে আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আমরা পূর্ব দিকের স্থানীয় বাবে জান্নাত মসজিদের গেট ভেঙ্গে বড় পাইপ লাগিয়ে আবাসিক ভবনের ছাদ থেকে পানি ছিঁটাতে থাকি। তাতে আগুন প্রথমে কিছুটা স্তিমিত হয়। এর পর ফায়ার সার্ভিস এসে তারাও একই পদ্ধতিতে আবাসিক ভবনের দিকে আগুন যাতে এগুতে না পারে সেই পদক্ষেপ নেন।

যুবকরা আরো জানান, আগুনের যেখানে সূত্রপাত সেই ৫/৬ টি গুদাম ঘরের পুর্ব দক্ষিণ দিকেই বাসা তাদের। সরু রাস্তা। একসাথে দুজনের বেশি লোক বের হওয়ারও জোঁ নেই। এই সরু রাস্তার শেষ প্রান্তে পর পর গা লাগোয়া ৭/৮ টি চার পাঁচটি ভবন। প্রত্যেকটি ভবনেই লোকজনে ঠাঁসা। চারদিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হওয়ার পরে জীবন বাজি রেখেই তারা সেই আগুন নেভাতে এগিয়ে আসে। মানবিক দায়বোধ আর প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ব থেকেই বুধবার রাতে আগুন নেভাতে অংশ নেয় তারা।


আরো সংবাদ



premium cement