তিউনিসিয়ায় সাগরে ভেসে থাকা ৬৪ বাংলাদেশীর ১৭ জন দেশে ফিরেছেন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২১ জুন ২০১৯, ১৯:২৮, আপডেট: ২১ জুন ২০১৯, ২০:২২
তিন সপ্তাহ ধরে তিউনিসিয়ার সাগরে ভেসে থাকা ৬৪ বাংলাদেশির মধ্যে ১৭ জন দেশে ফিরেছেন। কাতার এয়ারওয়েজের কিউআর-৬৩৪-এর বিমান যোগে শুক্রবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে তিউনেশিয়া থেকে তারা ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
শহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারি পরিচালক তানভীর আহমেদ সন্ধা পৌনে ৮টার দিকে নয়াদিগন্তকে বলেন, তারা এখনো ইমিগ্রেশনের ভেতরেই আছেন। তারা কখন বের হবেন এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে ফেরাদের নাগরিত্ব যাচাই বাছাইসহ বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ইমিগ্রেশন পার হতে দেয়া হবে।
জানা গেছে, ৬৪ জনের মধ্যে আজকে দেশে ফেরার জন্য ২০ জনের বিমানের টিকিট কাটা হলেও ৩ জন দেশে ফিরতে রাজি হননি। বাকী ১৭ জন এসেছেন। বাকীদেরও দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তবে, তাদের মধ্যে যদি কেউ দেশে ফিরতে না চান বিপাকে পড়বে বাংলাদেশ দূতাবাস। কারণ, তারা সবাই বাংলাদেশে ফিরবে, এমন প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরই তিউনিসিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদেরকে গত ১৮ জুন সন্ধ্যায় জারজিস বন্দরে নামার অনুমতি দেয়।
জানা গেছে, তিউনিসিয়া থেকে দেশে ফেরা এই ১৭ জনের মধ্যে ৮ জনই মাদারপুরের। বাকি নয়জনের মধ্যে চারজন চারজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এবং পাঁচজনের বাড়ি শরীয়তপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ জেলার।
রেডক্রিসেন্ট সূত্র ধরে আান্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে তিউনিসিয়ার সাগরে একটি নৌকায় ভাসছিলেন ৭৫ জন শরণার্থী, যাদের মধ্যে ৬৪ জনই বাংলাদেশি। নৌকাটি তিউনিয়ার উপকূলের কাছে পৌঁছালেও কর্তৃপক্ষ তীরে নামার অনুমতি দেয়নি।
তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের শরণার্থী কেন্দ্রে আনার জায়গা দেয়া সম্ভব নয়। ফলে ওই নৌকাটি উপকূলীয় জারজিস শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সাগরে ভাসতে থাকে। পরে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা সেখানে যান।
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, আটকে পড়া বাংলাদেশীরা দেশে ফিরে যাবেন, দূতাবাসের পক্ষ থেকে তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষকে এমন নিশচয়তা প্রদানের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ১৮ জুন সন্ধ্যায় জারজিস বন্দরে নামার অনুমতি দেয়। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কোনক্রমেই তাদেরকে জারজিস বা মেডেনিনে থাকার অনুমতি প্রদান করেনি। এমতাবস্থায় উদ্ধারকৃত বাংলাদেশীদের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তিউনিসে এনে রেড ক্রিসেন্ট ও আইওএম এর যৌথভাবে পরিচালিত শেল্টার হাউজে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেশে পাঠানো হচ্ছে।
এর মধ্যে প্রথম দফায় ২০ জনকে টিকিট দিলেও তিনজন আসতে রাজি হননি। বাকি ১৭ জন আজ বিকেলে ঢাকায় এসেছেন।
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, তিনজন দেশে আসতে রাজি না হওয়ার বিষয়টি নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। একইভাবে শেল্টার হাউজে অবস্থানরত আরো কিছু বাংলাদেশী এই মুহুর্তে দেশে যেতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। বিষয়টি অত্যন্ত চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কেননা তাদের সকলকে দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রাজি করানোর পরই তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষের নিকট নিশ্চয়তা দেয়া হয়। দূতাবাসের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, কাপড়চোপড় এবং তিউনিসে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও তাদের সকলের আত্মীয়স্বজনের সাথে দেশে কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত সবাই দেশে ফিরে না গেলে পরবর্তীতে এই রকম দুর্ঘটনায় তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
ব্রাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরীফুল হাসান এই প্রতিবেদককে বলেন, অনেক ধরেই ইউরোপে এভাবে মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে। সেটা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের ভাবমুর্তি রক্ষার জন্য হলেও মানবপাচার রোধ করা জরুরি। কেন বাংলাদেশ থেকে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে (অবৈধপথে) ইউরোপে যাবে। জীবনের চেয়ে বড় কিছু তো নেই। যেসব জেলা থেকে বেশি বেশি ইউরোপমুখী সেসব জেলায় কমপক্ষে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। যারা পাচারকারী আছে, তাদের ব্যাপারে কঠোর হওয়া উচিত। তা না হলে আমরা আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশ্নবিদ্ধ হবো।
তিনি বলেন, তারা এতো কিছুর পরেও দেশে ফিরতে চাচ্ছে না। তারা কেন ওই দেশে (ইউরোপ) নাগরিক হওয়ার জন্য মরিয়া, কেন এই দেশে ফিরতে চায় না। এগুলো বাজে অর্থবহন করে। দেশের স্বার্থেই আমাদের এ ব্যাপারে কঠোর হওয়া জরুরি।