২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গ্রামে বসেই দাদা জানলেন জায়ান আর নেই

গ্রামে বসেই দাদা জানলেন জায়ান আর নেই - সংগৃহীত

দাদার বাড়িতে যাবে জায়ান চৌধুরী (৮)। এই খুশিতে ২০দিন আগেই গ্রামে চলে গিয়েছিলেন দাদা। সেখানে বসেই তিনি শোনলেন প্রিয় নাতি আর দুনিয়াতে নেই। শ্রীলঙ্কায় ভঙ্কর এক হামলায় প্রাণ গেছে তার।
অথচ শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে এসেই মা-বাবার সাথে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে যাওয়ার কথা জায়ানের। কারণ ওখানেই তার দাদাবাড়ি।

নাতি বাড়ি আসবে, সেই খুশিতে দাদা মতিনুল হক (এম এইচ) চৌধুরী ঢাকা থেকে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। শুরু করেন বাড়ির সংস্কারকাজ। গাড়ি যাতে সহজে বাড়িতে আসতে পারে, সে জন্য রাস্তায় নতুন মাটি ভরাট করেন। গ্রামের একে-ওকে নাতির আসার খবরটি দিয়েছেন। কিন্তু রোববার বিকেলে পাওয়া দুঃসংবাদে সব এলোমেলো হয়ে যায়।

শ্রীলঙ্কায় গত রোববার একযোগে তিনটি হোটেল ও তিন গির্জায় বোমা হামলা হয়। পরে আরও দুটি স্থানে বিস্ফোরণ হয়। এতে এখন পর্যন্ত ৩১০ জন নিহত হয়েছে। ওই হামলায় জায়ান চৌধুরীও নিহত হয়। জায়ান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মেয়ের ছেলে। হামলায় আহত জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।

ভাটিপাড়া গ্রামে জায়ানের দাদা এম এইচ চৌধুরীর বাড়িটি এলাকায় ‘জমিদার বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত। তাদের পূর্বপুরুষ এলাকার জমিদার ছিলেন। বিশাল বাড়িটি বেশ পুরোনো। বাড়ির বেশির ভাগ ঘর খালি পড়ে আছে। পরিবারের সদস্যদের বেশির ভাগ থাকেন ঢাকায়। মাঝেমধ্যে কেউ বেড়াতে আসেন ।

মঙ্গলবার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে প্রথমে দেখা হয় বৃদ্ধ আবু নোমান চৌধুরীর সাথে। ঘরের বারান্দায় মনমরা হয়ে বসে ছিলেন। তিনি এম এইচ চৌধুরীর চাচাতো ভাই, শিশু জায়ানের সম্পর্কে আরেক দাদা। জায়ানের প্রসঙ্গ তুলতেই কেদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘বড় ভালো ছেলে ছিল জায়ান।’

আবু নোমান চৌধুরী বলেন, এবার মা-বাবাকে নিয়ে গ্রামে আসবে। সেই সাথে তার নানা শেখ সেলিম সাহেবেরও আসার কথা ছিল। সে জন্য জায়ানের দাদা ২০ দিন আগে গ্রামে আসেন। বাড়িঘরের টুকটাক কাজ করান। বাড়ির সমানের রাস্তায় নতুন মাটি ফেলেছেন।

আবু নোমান চৌধুরী বলেন, ‘জায়ান এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে গেল, এটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। তারা কেন আমার নিষ্পাপ নাতিকে মারল। তার কী দোষ ছিল। প্রধানমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো দল নাই, দেশ নাই।’

এম এইচ চৌধুরীর আরেক চাচাতো ভাই কাইজার চৌধুরী থাকেন যুক্তরাজ্যে। তিনি সম্প্রতি দেশে ফিরে সুনামগঞ্জে নিজ বাড়িতে এসেছেন। কাইজার চৌধুরী বলেন, রোববার বিকেলে বড় ভাই এম এইচ চৌধুরীর সঙ্গে ঘরের বারান্দায় বসে গল্প করছিলেন। এমন সময় তারা খবরটি পান। সঙ্গে সাথে ভাইকে ঢাকা পাঠান। কাইজার চৌধুরী বলেন, তার ভাতিজা মশিউল হক চৌধুরী (প্রিন্স), তার স্ত্রী শেখ আমিনা সুলতানা সোনিয়া এবং তাদের দুই ছেলে জায়ান চৌধুরী ও জোহান চৌধুরী শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে জায়ান বড়। সে কখনো দিরাইয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেনি। দাদার বাড়ি আর দেখা হলো না তার।

ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সৈদুর রহমান তালুকদার বলেন, নাতি জায়ান চৌধুরী এবার গ্রামে আসবে, এই খবর দাদা এম এইচ চৌধুরী সবাইকে জানিয়েছিলেন। তিনি বেশ খোশমেজাজে ছিলেন। রাস্তাঘাটের কাজ করিয়েছেন। কিন্তু দাদার সেই আশা আর পূরণ হলো না। জায়ান চৌধুরীর মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকার মানুষ কষ্ট পেয়েছে।

মঙ্গলবার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছোট ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফ গণমাধ্যমকে বলেছেন, বুধবার বেলা একটায় লাশ দেশে পৌঁছাবে। আসরের নামাজের পর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি মাঠে জানাজা হবে। জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে জায়ানকে দাফন করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement