২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজধানীতে ২ বাসের সংঘর্ষের পর আক্রান্ত আরো ৪ বাহন : নিহত ২

সড়ক দুর্ঘটনা
রাজধানীতে ২ বাসের সংঘর্ষের পর আক্রান্ত আরো ৪ বাহন : নিহত ২ - ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর রমনায় মৎস্য ভবন মোড়ে দুই বাসের সংঘর্ষের পর আরো চারটি বাহন দুর্ঘটনায় পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো দুইজন।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, ওই দুর্ঘটনার পর চারজনকে হাসপাতালে নেয়া হলে তাদের মধ্যে দুজনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতদের মধ্যে একজনের বয়স আনুমানিক বিশের কোঠায়, অন্যজন পঞ্চাশোর্ধ। তাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ।

মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) মুহাম্মদ মুরাদ আলী জানান, স্বাধীন পরিবহনের একটি বাস শাহবাগ থেকে প্রেসক্লাবের দিকে যাওয়ার সময় মৎস্য ভবনে মোড়ে পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি স্টাফ বাসকে ধাক্কা দেয়। স্টাফ বাসটি তখন একজন রিকশা চালককে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সংঘর্ষের পর নিয়ন্ত্রণহীন বাস দুটো রাস্তায় থাকা আরো দুটো প্রাইভেটকার ও একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়। মূলত দুই বাসের সংঘর্ষের ফলেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্বাধীন পরিবহনের ওই বাসের চালককে পুলিশ আটক করেছে।

আরো পড়ুন :
২০২০ সালে মৃত্যুর তৃতীয় কারণ হবে সড়ক দুর্ঘটনা
মেহেদী হাসান, ১১ আগস্ট ২০১৮
জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ লাখ মানুষ মারা গেছেন। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৪৭ হাজার। ২০০০ সালে বিশ্বে মৃত্যুর শীর্ষ ১০টি কারণের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার স্থান ছিল দশম। ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু অষ্টম স্থানে চলে এসেছে। ২০৩০ সাল নাগাদ এটা সপ্তম স্থানে আসবে।

অন্য দিকে পপুলেশন রেফারেন্স ব্যুরোসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর এ ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০২০ সাল নাগাদই সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর কারণ হিসেবে তৃতীয় স্থানে চলে আসবে ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন হৃদরোগে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্ট্রোক। ২০১৬ সালে বিশ্বে ৫ কোটি ৬৯ লাখ লোক মারা যান, তার মধ্যে হৃদরোগ ও স্ট্রোকে মারা গেছেন এক কোটি ৫২ লাখ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। এ ছাড়া সারা বিশ্বে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সে যারা মারা যান তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। অর্থাৎ ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। অন্য দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর আহত হন ২ থেকে ৫ কোটি মানুষ। গরিব এবং মধ্যম আয়ের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং আহত হওয়া পরিবারের জন্য দুর্বিষহ বোঝা হিসেবে আবির্ভূত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন চীনে, অনুমান ২ লাখ ৬১ হাজার। এর পর রয়েছে ভারত ২ লাখ সাত হাজার, ইন্দোনেশিয়া ৩৮ হাজার, নাইজেরিয়া ৩৫ হাজার, যুক্তরাষ্ট্র ৩৪ হাজার, পাকিস্তান ২৫ হাজার, ইথিওপিয়ায় ২৩ হাজার ৮০০, কঙ্গোয় ২২ হাজার লোক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিদিন বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন তিন হাজার ৪০০ মানুষ। এ সংস্থার ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যু হয় এমন দুর্ঘটনার ৯০ ভাগই ঘটে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশে, যদিও এসব দেশে বিশ্বের ৫৪ ভাগ যানবাহন চলাচল করছে। বছরে গড়ে বিশ্বে ১২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায়। গরিব এবং মধ্যম আয়ের দেশের মোট দেশীয় উৎপাদনের ৩ শতাংশ নস্যাৎ হয়ে যায় সড়ক দুর্ঘটনার কারণে।

সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে বিশ্বে ৫১৮ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন=১০০ কোটি) ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়।

সড়ক দুর্ঘটনায় ২০১৩ সালে দেশে মারা গেছেন ২১ হাজার মানুষ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে অনুমান ২১ হাজার ৩১৬ জন মানুষ মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। সংস্থার মতে এ সংখ্যা কমপক্ষে ১৭ হাজার এবং সর্বোচ্চ ২৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।

অপর দিকে সরকারি হিসাবে বলা হয়, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ২৯৬ জন মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায়।

মৃত্যুর সংখ্যার এ তারতম্যের কারণ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ সেন্টার জানায়, সড়ক দুর্ঘটনার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ তথ্য সংগ্রহ করা হয় না। থানায় সড়ক দুর্ঘটনার যে খবর আসে তারও প্রায় অর্ধেক রেকর্ড হয় না ।

এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার অনেক পরে যারা বাসায় বা হাসপাতালে মারা যান তাদের নাম সাধারণত দুর্ঘটনায় মৃত্যু হিসেবে রেকর্ড হয় না। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তি হলো পুলিশ প্রতিবেদন। অনেক সংস্থার মতে বহু সড়ক দুর্ঘটনার খবর পুলিশের কাছেই আসে না। অনেক সড়ক দুর্ঘটনার খবর রেকর্ড করা হয় না। অনেক দুর্ঘটনার খবর দুই পক্ষই চেপে যায় সমঝোতার মাধ্যমে। দুর্ঘটনার খবর কেউ থানায় না জানালে অনেক ক্ষেত্রে তা পুলিশেরও অগোচরে থেকে যায়। ফলে বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় কত লোক মারা যান, কত লোক আহত হন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার কাছেই।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ন্যাশনাল রোড সেফটি সেলের (এনআরএসসি) তথ্য মতে, ২০০৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩ হাজার ৭৯৪ জন। ২০০৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৪ হাজার ৪২৭ জন। বেসরকারি তথ্য মতে এ মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। বছরে আহত হন এক লাখের বেশি।

জাতিসঙ্ঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ হাজার ২০০ লোক মারা গেছেন।

গত ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্যাসেঞ্জারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৩৯৭ জন মানুষ মারা গেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা গরিব এবং মধ্যম আয়ের দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে গরিব পরিবারের জন্য এটা অসহনীয় বোঝা হিসেবে নেমে আসে কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে। যেহেতু ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। তাই এটি একটি দেশ ও পরিবারের জন্য মানবসম্পদের বিরাট ক্ষতির কারণ। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক চাপ পড়ে স্বাস্থ্য খাতে। রোড সেফটি সেলের তথ্য মতে, দেশের হাসপাতালগুলোতে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বেড সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দখলে থাকে।

সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা গেলে বা পঙ্গু হলে ওই পরিবারের ওপর যে দুঃসহ অবস্থা নেমে আসে এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়, তার ক্ষতি কোনোভাবেই পরিমাপযোগ্য নয় ।


আরো সংবাদ



premium cement