২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিহত পলাশের লাশ নেবে না পরিবার!

সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন নিহত পলাশের বাবা পিয়ার জাহান - নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা থেকে দুবাইগামী একটি বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন পলাশ আহমেদ। একদিনেই বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা এই ঘটনার মূল নায়ক অবশ্য নিরাপত্তাবাহিনীর কৌশলী ভূমিকা ও কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছেন। তবে নিহত পলাশের (২৩) লাশ বাড়িতে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তার বাবা পিয়ার জাহান। সোমবার সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর দুধঘাটা এলাকার নিজবাড়িতে তিনি দৈনিক নয়াদিগন্ত কে এই কথা বলেন।

নিহত পলাশের পিতা পিয়ার জাহান বলেন,‘পলাশ আমাদের অবাধ্য সন্তান। সে যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা খুবই দুঃখজনক এবং আমাদের জন্য মানহানিকর। অপকর্মের জন্য পলাশের লাশ আমরা বাড়িতে আনতে চাই না।’

তিনি আরো বলেন, আমরা পলাশের লাশ আনতে যাবো না। তবে প্রশাসন যদি লাশ পৌছে দেয় সে ক্ষেত্রে দাফনের ব্যবস্থা করবো। একথা বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি।

নিহত পলাশ চার ভাই ও বোনের মধ্যে সবার ছোট এবং পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়ায় পলাশের প্রতি সবারই একটু বেশি ভালোবাসা ছিল। সে জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে পলাশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

পিয়ার জাহান বলেন,‘পলাশের লাশ আমি দেখতে চাই না। তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

তিনি আরো বলেন,‘পলাশের নিহত হওয়ার খবর শোনার পর থেকে তার মা শয্যাশায়ী। তিনি কারও সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারছেন না।’

পিয়ার জাহান বলেন,‘ছেলের অবাধ্যতা গুছিয়ে দিতে আল্লাহর কাছে নামাজের পর দোয়া করতাম। আল্লাহর কাছে অনেক চেয়েছি। তাকেও অনেক বুঝিয়েছি। তবে সে কথা শোনেনি।’

পলাশের বাবা বলেন,‘গত ২২ ফেব্রুয়ারি ছেলে (পলাশ) আমাকে জানায় যে, সে আর বাংলাদেশে থাকবে না। দুবাই চলে যাবে। এ কারণে সে আমার কাছ থেকে ৫০০ দিরহাম দাবি করে এয়ারপোর্টে দেখানোর জন্য। আমি সেই টাকা জোগাড় করে দেই। এর ২০-২৫ দিন আগে পলাশ বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে, মসজিদে গিয়ে আজানও দিয়েছে।’

 

আরো পড়ুন : কমান্ডো অভিযানে বিমান ছিনতাইকারী নিহত
নয়া দিগন্ত অনলাইন, (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিমানের একজন যাত্রী ছিনতাই চেষ্টা করলেও, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেটি ব্যর্থ করে দিয়েছে। রাত সোয়া সাতটার দিকে বিশেষ বাহিনীর অভিযানে ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়। পরে সে মারা যায় বলে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিমানের ভেতরে অভিযান চালানোর সময় ঔ ব্যক্তিকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হলে সে অস্বীকৃতি জানালে গুলি চালানো হয়। পরে তার মৃত্যু হয়েছে। সকল যাত্রী ও ক্রু সুস্থ রয়েছেন বলে কর্মকর্তারা বলছেন।


এই ঘটনার পর একটি সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘কথিত ছিনতাইকারী ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। তার কাছে একটি অস্ত্র ছিল এবং বুকে বোমা বাঁধা থাকতে পারে। সেরকম তার বাধা রয়েছে।’

‘তিনি পাইলটের মাথায় অস্ত্র ধরে দাবি করেছিলেন যে, তার স্ত্রীর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন।’

বিকাল পাঁচটার দিকে ওই ঘটনা শুরুর পর থেকেই বিমানটি ঘিরে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাদের সাথে সেনা কমান্ডো ও বিমান বাহিনীর সদস্যরাও যোগ দেন। সাতটার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিমানে অভিযান শুরু করেন। রাত আটটা থেকে বিমানবন্দর আবার খুলে দেয়া হয়েছে।


এর আগে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মহিবুল হক বলেছিলেন, বিমানটি জরুরি অবতরণের পর পাইলট ও বেশিরভাগ যাত্রীকে বের করে আনা হয়েছে। তবে একজন ক্রু ও সন্দেহভাজন যাত্রী ভেতরে রয়েছে। তার সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে তাদের সাথে কী আলোচনা চলছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

ওই বিমানটির একজন যাত্রী, সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিমানে একজন যাত্রী অস্ত্র নিয়ে বিমানটি হাইজ্যাক করার চেষ্টা করেছিল। সে বাঙ্গালি। সে গুলী করেছে তবে সব যাত্রীকে নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়েছে। পাইলট আমার কাছে এসেছিল, সে বলেছে হাইজ্যাকার একজন, সে গুলি করেছে। পাইলট তাকে পারসুয়েট করার চেষ্টা করেছে। হাইজ্যাকার বলেছে, সে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে চায়।’

বিমানে থাকা একজন যাত্রী ওসমান গণি সাংবাদিকদের বলেছেন, ঢাকা থেকে বিমানটি রওনা হওয়ার একটু পরেই একজন যাত্রী ককপিটের দিকে যায়। এরপর আমরা কিছু গুলির শব্দ শুনতে পাই।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে থাকা একজন যাত্রী শিউলি রানী দে স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলছেন, ‘আমার বিমান ছিল ৬টা ২০ মিনিটে। তার আগেই আমি বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট অবতরণ করতে দেখি। তখন আমি দেখতে পাই, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র‍্যাবের গাড়িগুলো গিয়ে বিমানটি ঘিরে ফেলেছে।’


আরো সংবাদ



premium cement