২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জার্সি দেখে নয়নকে চিনলেন মা

চকবাজারে অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া ভবন - সংগৃহীত

‘ও ভাই আমাকে মাটি দিবা না। আমারে ছাড়িয়া কই গেলা। ও ভাইরে তোরে আর দেখতে পাব না। ও ভাই তুমি কই গেলা। আমি ভাইরে দেখমু। আমারে ভাইয়ের কাছে নিয়া যাও।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গের সামনে নাতির (মেয়ের ছেলে) জন্য এভাবেই আহাজারি করছিলেন বৃদ্ধা মমতাজ বেগম(৯০)।

বুধবার পুরান ঢাকার চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন মমতাজ বেগমের নাতি নয়ন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে রাখা ছিল তার লাশ।

মর্গের সামনে নাতির জন্য আহাজারি করতে থাকা বৃদ্ধা মমতাজ বেগমের সাথে ছিলেন তার মেয়ে ও নয়নের মা কোহিনুর বেগম। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন নয়নের দুই বোন।

অগ্নিকান্ডে নিহত নয়নের মা কোহিনুর বেগম বলেন, নয়ন চকবাজারের একটি দোকানে কাজ করত। প্রতি মাসে বেতন পেত ৬ হাজার টাকা এবং প্রতিদিন ১০০ টাকা করে পেত। এ টাকা দিয়েই চলতো তাদের সংসার।

তিনি বলেন, নয়ন ফুটবল খেলতে ভালোবাসতো। বৃহস্পতিবার ওদের ফুটবল খেলা হওয়ার কথা ছিল। বুধবার নয়ন সেই ফুটবল খেলার জার্সি গায়ে দেয়। জার্সিতে নয়নের নাম লেখা রয়েছে। এই নাম দেখেই তারা মেডিকেলে নয়নের লাশ চিনতে পেরেছেন।

নয়নের মৃত্যুর খবর কীভাবে পেয়েছেন জানতে চাইলে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নয়নের এক বোন বলেন, আমরা দোকান মালিককে ফোন দিলে তিনি বলেছিলেন সাড়ে দশটায় দোকান বন্ধ করে ভাইয়া বের হয়ে গেছেন।

তিনি আরো বলেন,‘কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাইয়াকে না দেখতে পেয়ে আম্মাকে বলি ভাইয়া বাসায় ফেরেনি। তখনও আমরা জানি না চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরপর চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানতে পেরে ঢাকা মেডিকেলে ছুটে আসি। এখানে এসে ভাইয়ার গায়ের জার্সি দেখে আমরা ভাইয়াকে চিনতে পেরেছি।’

 

আগুন কেড়ে নিলো জমজ সন্তানের বাবা ঢাবি ছাত্রের প্রাণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের ছাত্র ছিলেন কাওসার আহমেদ। প্রথম বর্ষে স্বপ্ন দেখতেন আকাশ ছোঁয়ার। পারিপার্শ্বিক বাস্তবতায় প্রত্যাশার সাথে মিল ঘটেনি। পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে অধ্যায়নে কিছুটা ঘাটতি হলেও চেষ্টা করছিলেন সব কিছু কাটিয়ে ওঠে ব্যাংকার হতে।

কিন্তু বুধবার চকবাজারের ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছে তার সব স্বপ্ন। কাওসার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ছাত্র ছিলেন। সদা চঞ্চল এ শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষে হলের গণরুম (এক কক্ষে ২৫ জন থাকত, ১৮১) মাতিয়ে রাখতেন। যেমনটি বলছিলেন তার বন্ধু দর্শন বিভাগের ছাত্র সৈয়দ শরিফুল আলম শপু। পরবর্তীতে পরিবারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে চকবাজার শাহী জামে মসজিদ এলাকায় দেন আল-মদিনা ফার্মেসি।

সবকিছু সামলে উঠতে গিয়ে এক বছর বিরতি দিয়ে ২২তম ব্যাচের এ সেকশনে ক্লাস করতেন তিনি। তার স্মৃতি নিয়ে বিভাগের বন্ধু আসলাম হোসেন বলেন, কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কিছুতেই চোখের পানি ফেরাতে পারলাম না। খুব সুন্দর সাবলীল মনের মানুষ ছিল বন্ধু কাওসার। কালও (বুধবার) একসাথে মিডটার্ম পরীক্ষা দিয়েছি আমরা। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এভাবে কেড়ে নেবে আমার বন্ধুটাকে তা কল্পনারও বাইরে ছিল।

কুমিল্লার হোমনা উপজেলার এ শিক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন বিয়ে করেন। ছিল ১১ মাস বয়সী যমজ বাচ্চাও। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে লাশ শনাক্তের জন্য এলে কাওসারের ভাই হাফিজ আহমেদ, স্ত্রী ও মায়ের আহাজারিতে সৃষ্টি হয় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি।

দুপুর আড়াইটায় তার লাশ বিজনেস অনুষদে নিয়ে এলে তার সহপাঠীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কাওসারের বন্ধু সালেহীন সাহাদাত ফাহিম বলেন, সে খুব ভালো বন্ধু ছিল। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে সেভাবে হলে থাকত না। ব্যাংকার বা ভালো জব করার স্বপ্ন দেখত।

বিকেলে বিজনেস অনুষদে জানাজা শেষে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা।


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১ খাবারের সন্ধানে বসতবাড়িতে হরিণ, মহামায়ায় অবমুক্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী ফিরোজ মাহমুদের লাশ দেশে ফিরেছে ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃত্যু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে: ড. সুকোমল বড়ুয়া

সকল