২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই - নয়া দিগন্ত

রিয়া ও রিফাত। দুই বছর আগে বিয়ে হয় তাদের। থাকতেন পুরান ঢাকার চকবাজারের নন্দ কুমার দত্ত রোডের ‘ওয়াহিদ ম্যানশন’ ভবনের তৃতীয় তলায়। বুধবার রাতে যখন ওই ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে তখন নামতে পারেননি অন্তঃসত্ত্বা রিয়া। এমতাবস্থায় স্ত্রীকে ফেলে জীবন বাঁচাতে পালাতে চাননি রিফাত। তাই নামেননি তিনি। ফলে আগুনে গর্ভের সন্তানসহ দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গের সামনে রিয়া ও রিফাতের লাশ শনাক্ত করতে না পেরে অপেক্ষারত বন্ধুরা গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

রিয়া ও রিফাতের বন্ধু সাজিদ জানান, রিয়া ও রিফাত দুই বছর আগে বিয়ে করেন। আমার এই দুই বন্ধুর কোনো খোঁজ-খবর পাচ্ছি না। চেহারা দেখে লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। রিয়া অন্তঃসত্ত্বা ছিল।

সাজিদ জানান, আগুন লাগার পর রিফাতের পরিবারের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। কিন্তু রিয়াকে নিয়ে নামতে পারছিল না বলেই সে নিজেও নামেনি। ফলে দু’জনই পুড়ে মারা গেছেন।

রিয়া ও রিফাতের মৃত্যুর খবরে ওদের পরিবারের কয়েকজন ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই তারাও ঘটনাস্থলে আসতে পারছেন না বলে জানান তিনি।

সাজিদ বলেন, তাদের পরিবার থেকে কেউ আসতে না পারায় আমরাই ছবি-তথ্য নিয়ে এসেছি। তবে এখন পর্যন্ত লাশ শনাক্ত করতে পারিনি।

ঢামেকের মর্গ থেকে সবশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৪১ জনকে শনাক্ত করা গেছে। এদের মধ্যে অনেকের মুখ পোড়েনি বলেই শনাক্ত করা গেছে। আর যাদের চেনা যাচ্ছে না তাদের শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষাই একমাত্র উপায় বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া রেডক্রসের প্রতিনিধিরাও মরদেহ শনাক্তকরণে তথ্য সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

যেভাবে লাশ পাবেন স্বজনরা?
বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা ফারহানা পারভীন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা: সোহেল মাহমুদের ব্রিফিংয়ে ছিলেন।

মিস্টার মাহমুদ বলছেন, যেসব লাশ তাদের স্বজনরা সহজেই সনাক্ত করতে পারছেন সেগুলো আজই যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে হস্তান্তর করা হবে।

কিন্তু যাদের সনাক্ত করা যাচ্ছে না তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে সনাক্ত করার চেষ্টা করা হবে। যদি সেটিতে সনাক্ত হয়ে যায় তাহলে সেগুলোও স্বজনরা গ্রহণ করতে পারবেন।

কিন্তু যেসব লাশ একেবারেই সনাক্ত করা যাচ্ছে না সেগুলো ডিএনএ পরীক্ষার পর দেয়া হবে এবং এজন্য কিছুটা সময় লাগবে।

গত রাত সাড়ে ১০টার পরে পুরনো ঢাকার চকবাজারে শাহী মসজিদের কাছে ‘ওয়াহিদ ম্যানসন’ নামের একটি ভবনে আগুন লাগার পর তা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

পরে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট একযোগে কাজ শুরু করে। তবে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত কিছু বলেনি কর্তৃপক্ষ।

অনুমতি নেই রাসায়নিক রাখার
২০১০ সালের জুনে পুরানো ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের কারখানায় আগুন ধরে ১২৪ জন নিহত হয়েছিলেন।

এরপর পুরানো ঢাকার আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের কারখানা বা সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

তাহলে কিভাবে চকবাজারে রাসায়নিকের গুদাম থাকতে পারে?

বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে মি. খান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার পরেও অনেকে হয়তো চোরাইভাবে রেখে ব্যবসাবাণিজ্য করে। কর্তৃপক্ষের অগোচরে কাজ করে তারা। কিন্তু এর পরিণতি হচ্ছে এ ধরণের ঘটনা।’

সরু রাস্তা ও পানির সংকট
চকবাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়েছে, এর কারণ হিসেবে মি. খান সরু রাস্তা ও পানির সংকটকে প্রধান সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছেন।

‘অনেক দূর ঘুরিয়ে গাড়ি ভেতরে আনতে হয়েছে। সেই সাথে এটা একটা জনবহুল এলাকা, তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে বেশি।’

এছাড়া এখানে পানির অভাবও রয়েছে। এখন পুকুর থেকে পানি এনে কাজ চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তবে তিনি জানিয়েছেন আগুন এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।

ফায়ার সার্ভিসের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশে ৮৮ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

প্রাণহানি হয়েছে ১৪০০ জন, আহত হয়েছে অন্তত ৫০০০ মানুষ।

 


আরো সংবাদ



premium cement