২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বাকরুদ্ধ সূচির বাবা জ্ঞান হারাচ্ছেন মা

বাকরুদ্ধ সূচির বাবা জ্ঞান হারাচ্ছেন মা - নয়া দিগন্ত

চোখের সামনে একমাত্র মেয়ের মৃত্যু দেখে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা ফাইজুল ইসলাম। কথা বলতে গেলেই যেন কান্না বেরিয়ে আসছে। মা নারগিস ইসলাম মেয়ের জামা-কাপড় আর বই গুলো হাতে নিয়ে বিলাপ করে চলেছেন। একাই একাই জামা-কাপড়ের সাথে কথা বলছেন তিনি। কিছু সময় পর পর হাউ-মাউ করে কেদে উঠে জ্ঞান হারাচ্ছেন। তাদের স্বান্তনা দেবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনেরা। তাদের কান্নায় স্বজনদের চোখও ভারি হয়ে উঠছে। নতুন বাসায় উঠার কারনে মাত্র সাতদিন হলো উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে ভর্তি হয়েছিলো সুচি। রাস্তা পার হবার সময় বারবারই বাবাকে বলেছিলো সে একাই পার হতে পারবে। কিন্তু তা আর হলো ঘাতক মাইক্রোবাসের বাবার চোখের সামনে ছোট্ট মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তা ফেলে দিলো। শুধু তাই পড়ে যাওয়া সুচির উপর দিয়ে চাকা তুলে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলো।

মঙ্গলবার সকালে বাবার সাথে স্কুলে যাবার সময় উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর ব্রীজের কাছে একটি নাটকের শুটিংয়ের মাইক্রোবাস চাপায় প্রান হারানায় মাইলস্টোন স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী ফাইজিয়া তাহমিনা সুচি (১০)। বাবা ফাইজুল ইসলাম দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সহ-সম্পাদক।

ফাইজুল কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ে পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিল। সকালে ওর ব্যাগে বই খাতা গুছিয়ে দিয়েছি। কিন্তু মেয়ে আমার স্কুলে আর যেতে পারলো না।’ তিনি বলেন, আমার হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলো। এক সময় হাত ছেড়ে বললো ‘বাবা আমি একাই রাস্তা পার হতে পারবো। বলে একাই হাটতে শুরু করলো। হঠাৎ দানবের রুপ নিয়ে ঘাতক মাইক্রোবাস বাবার সামনেই মেয়েকে পিষ্ট করে চলে যায়। তিনি বলেন, সূচি মিরপুরের মনিপুরী স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা উত্তরায় রাজউকের একটি ফ্ল্যাট পাওয়ায় গত সপ্তাহে তারা উত্তরার বাসায় ওঠে। বাসার অল্প দূরে মাইলস্টোন স্কুলে ভর্তি করা হয় তাকে। রাজউক উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টর অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের সুরমা ভবনের ২০৫ নম্বর ফ্ল্যাটে বসবাস করে সূচির পরিবার।

ফাইজুল বলেন, নিজের ফ্ল্যাটে উঠবো বলে সন্তানদের মাইলস্টোন স্কুলের দিয়াবাড়ি শাখায় এ বছরের জানুয়ারিতে ভর্তি করেছি। সাতদিন হলো মেয়ে স্কুলে যাচ্ছিলো। এরমধ্যেই এই সড়কে প্রাণ হারালো আমার মেয়ে। সড়কে আমাদের কারও জীবনের নিশ্চয়তা নেই। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচলের জন্য আজ আমার মেয়ে লাশ হয়ে গেলে। ওর তো কোনও দোষ ছিল না।’ তুরাগ থানার ওসি নুরুল মুক্তাকিম বলেন, এই ঘটনায় তুরাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। মাইক্রোবাসটি আটক করা হয়েছে। চালককে আটকের চেষ্টা করছি। একই সাথে গাড়ির মালিকের খোঁজও নেওয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement