২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজধানী জুড়ে তল্লাশি অভিযান

রাজধানী জুড়ে তল্লাশি অভিযান - সংগৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় ঘনিয়ে আসায় সারাদেশের পাশাপাশি ঢাকাতেও নির্বাচনি উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে উত্তাপ যেন সংঘর্ষ বা সহিংসতায় রূপ না নেয় সেজন্য রাজধানীর ৫০টি থানার মাধ্যমে অভিযান শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ আগেই। ২৩ ডিসেম্বর রাত থেকে রাজধানীতে নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা মোড়ে মোড়ে চলছে তল্লাশি আর পেট্টোলিং ডিউটি। সড়কগুলোতে আগের চেয়ে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোটের ১৫ দিন আগে থেকেই নাশকতাসহ বিভিন্ন প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিলো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তরা নাশকতা চালাতে পারে। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পাশাপাশি পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখা ও নাশকতা প্রতিরোধে মাঠে রয়েছে পুলিশ। এজন্য কয়েক স্তরে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান পরিচালনা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, কালো টাকার অনুসন্ধান, নাশকতাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতারের মতো কাজ করা হচ্ছে বলে জানান মাসুদুর রহমান।

এরইমধ্যে গত ১৫ ডিসেম্বর ওয়ারী থানাধীন গোয়ালঘাট লেনের একটি মোটরপার্টসের দোকানে ডেটনেটর যুক্ত আধুনিক দু’টি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। ওয়ারী বিভাগের উপ কমিশনার ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বোমা দুটি উদ্ধারের পর ডিবির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে নিস্ক্রিয় করে। নাহলে যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতো।’ ওই ঘটনার পর ডিএমপির প্রত্যেক এলাকায় পুলিশ আরও বেশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। একই দিন গুলশান এলাকা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ৪টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অস্ত্র উদ্ধার টিমের সহকারী কমিশনার সুমন কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘রাজধানীর প্রত্যেক এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের খোঁজে মাঠে নেমেছে পুলিশ। একটি তালিকা হাতে রয়েছে, ওই তালিকা ধরে খোঁজা হচ্ছে।’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ উপ-কমিশনার (ডিবি উত্তর) মশিউর রহমান বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বিস্ফোরক, নাশকতাকারী, গুজব সৃষ্টিকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। সাইবার টিম কাজ করছে। আগের চেয়ে কাজের চাপ বেড়েছে। সবকিছুই করা হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে যাতে কেউ নাশকতা করতে না পারে। এরইমধ্যে সম্ভাব্য নাশকতা হতে পারে এমন স্থানের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওইসব স্থানে নজরদারি বৃদ্ধিসহ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। নাশকতাকারী যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

কালো টাকার বিষয়ে মশিউর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে কালো টাকা ব্যবহার হতে পারে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছে। ওই তালিকা ধরে কাজ করা হচ্ছে। ব্যাংক থেকে কারা বেশি বেশি নগদ টাকা উত্তোলন করছে, ওই টাকা কোথায় যাচ্ছে, তার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান কোন ব্যাংক থেকে টাকা তুলছে ওইসব টাকা আবার কোথায় যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাড়তি নজরদারি রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে বিকাশের মাধ্যমে টাকা কোথায় পাঠানো হচ্ছে আর কারা পাঠাচ্ছে তা কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।’ এছাড়া ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ থাকবে বলে জানান মশিউর রহমান।

ডিএমপির একজন অতিরিক্ত কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২০১৪-১৫ সালে দেখা গেছে, ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ব্যাগ থেকে বোমা বের করে রাস্তায় মারা হয়েছে, উঁচু ভবন থেকে বোমা মারা হয়েছে, গাড়ি থেকে, মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় ককটেল মারা হয়েছে। হঠাৎ করে বাসে, ট্রাকে, মাইক্রোবাসে, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। যাত্রীবাহী চলন্ত গাড়িতে পেট্টোল বোমা ছুঁড়ে মারা হয়েছে। ওইসব বিষয় মাথায় রেখে এবারে নিরাপত্তা ছক সাজানো হয়েছে। ভোট গ্রহণের আগে ও পরে নাশকতা মোকাবিলার মতো সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জনবল বাড়ানো হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দ্রুত রেসপন্স করতে আলাদা আলাদা টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব সড়কে সিসিটিভি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহা-পরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘ডিএমপি ছাড়াও সারাদেশে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। তবে এটি ম্যাসিভ কোনো অভিযান নয়। নিয়মিত অভিযানগুলো আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে মাত্র। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে সেজন্য পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরাও কাজ করছে।’

প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণের আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সেজন্য নির্বাচন কমিশন র‌্যাব, পুলিশ, আনসার মোতায়েনের পাশাপাশি বিজিবি নামানো হয়েছে। এরপরও অধিক নিরাপত্তার স্বার্থে ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে নির্বাচন কমিশন।


আরো সংবাদ



premium cement