২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টোল আদায়কে কেন্দ্র পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ : নিহত ১

টোল আদায়কে কেন্দ্র পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ : নিহত ১ - নয়া দিগন্ত

ঢাকার কেরাণীগঞ্জে পুলিশের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষে একজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। নিহত সোহেল(২০) একজন পরিবহন শ্রমিক। তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আহতের মধ্যে থানার ওসিসহ অন্তত ৩০ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আহতদের মধ্যে অন্তত ১০ জন রয়েছেন গুলিবিদ্ধ।

পোস্তগোলা-হাসনাবাদের বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুতে টোল আদায়কে কেন্দ্র করে বেশকিছুদিন ধরেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকের সঙ্গে টোল আদায়কারীদের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা দাবি করে আসছিলেন টোলমুক্ত ব্রীজ পারাপার। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি অগ্রাহ্য করে টোল আদায় অব্যাহত রাখেন। তিনদিন হয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে ব্রীজটি টোল আদায়ের জন্য ইজারা দেয়া হয়। এই ইজারা নিয়েছেন খোরশেদ নামের এক ব্যবসায়ী। ইজারা প্রদানের দিন থেকেই এখানে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

তিনদিন ধরেই পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা যানবাহন চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে আসছিলেন। শুক্রবার সকাল থেকে তারা হাসনাবাদ এলাকায় ব্রীজের ঢালে অবস্থান নেন এবং যানবাহন চলাচলে বাধার সৃষ্টি করেন। সকাল ১০ টার দিকে ব্রীজে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সেখানে পুলিশ প্রেরণ করা হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে উত্তেজিত হয়ে পড়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এর পর থেকে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বেলা ১২ টার দিকে ব্রীজের ঢালের দু’পাশ দিয়ে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।

এসময় শ্রমিকদের হামলায় একের পর এক পুলিশ সদস্য আহত হতে শুরু করলে পুলিশ প্রথমে ফাঁকা গুলি ছুঁেড়। কিন্তু তাতেও শ্রমিকরা নিবৃত না হলে হামলাকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এই গুলিতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহতদের হাসপাতালে নেয়া হলে পুলিশ সোহেলকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিহত সোহেলের পিতার নাম মউদ্দিন। বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে বুলবুলিয়ার চর গ্রামে। তিনি একজন ট্রাক হেলপার। এসময় পথচারীদের মধ্যেও অনেকে আহত হয়েছেন।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুনয়া দিগন্তকে জানায়, বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু টোল মুক্ত রাখার দাবিতে এলাকার ট্রাক মালিক শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। তাদের হামলায় থানার ওসি শাহ জামান, ইন্সপেক্টর তদন্ত কামাল হোসেনসহ ৩০ পুলিশ সদস্য আহত হন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।পরে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

স্থানীয় ট্রাক শ্রমিক নেতা মোসলেম জানান, তারা টোলমুক্ত ব্রীজ দাবি করে আসছিলেন। একসিন্ডিকেটের কারনে টোল মুক্ত হয়নি এ সেতুটি। অথচ বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু টোলমুক্ত। তাছাড়া ট্রাকে মালামাল বোঝাই দেখলে ডিউপুদিয়ে হয়রাকরানো হয়। সুযোগ পেলেই পুলিশ শ্রমিকদের উপর নির্যাতন করে।

তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে আমরা রাস্তায় অবস্থান নিলে পুমারপিট ছাড়াও গুলি করে। এ সময় সোহেলসহ অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে পুলিশ সোহেলকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অন্যান্যদের মধ্যে ট্রাক চালক আকাশ, হেলপার মাসুদ, আলামিন, মানিক, তাসলিমা, লাইজুল ইসলাম, সিদ্দিক, সাজু, বাকুম ও এক প্রতিবন্ধি ভিক্ষুককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, পুলিশের গুলিতে আহতের সংখ্যা ২০ জনের মতো হবে। গুলিবিদ্ধ ট্রাক চালক আকাশ ও হেলপার মাসুদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা যায়।

ব্রীজের ইজারাদার খোরশেদ আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ২০ অক্টোবর তারা এই ব্রীজের টোল আদায়ের ইজারা পান। পরদিন থেকে তারা টোল আদায় শুরু করলে একটি চক্র তাতে বাধার সৃষ্টি করে। খোরশেদ আলম বলেন, দীর্ঘদিন একটি অসাধু চক্র এখানে বিনা টোলে গাড়ী চালাতো। সরকারীভাবে যখন টোল আদায় হতো তখন একটি সিন্ডিকেট টোলের টাকা মেরে দিতো। ইজারা দেয়ায় ওই অসাধু চক্রের অবৈধ উপার্জন থেমে গেছে। যে কারণে তারা শ্রমিকদেরকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। খোরশেদ আলম বলেন, গতকাল সকাল থেকে যানবাহন আসতে বাধার সৃষ্টি করে শ্রমিক নামধারী সন্ত্রাসীরা। তারা যানবাহন ভাংচুর করে। এর আগে তারা টোল ঘরে হামলা ও ভাংচুর করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই ব্রীজের টোল নিয়ে কোটি কোটি টাকার নয়ছয় হয়েছে। সরকারীভাবে যারা টোল আদায় করতো তারা কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে। এই টাকা দিয়ে তারা একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরী করে। এখন ইজারা দেয়ায় ওই টাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। যে কারণে তারা সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে। এই অর্থ তছরুপের ব্যাপারে সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, শ্রমিকরা ওই এলাকায় অনেক দোকানপাট ও বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে। শ্রমিকদের সাথে অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসীও এই হামলায় অংশ নেয়। এই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে ব্রীজের উপর দিয়ে পারাপারের জন্য সিএনজি অটোরিকশার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। পুলিশের সাথে তারাও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

এদিকে, শুক্রবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকাল ১০ টা থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত ব্রীজ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এমনকি হেটেও ব্রীজ পার হতে পারেনি মানুষ। এতে বুড়িগঙ্গার উভয়পারে হাজার হাজার গাড়ী আটকে যায়। ওইসব গাড়ীর যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। অনেকে ব্রীজের নিচে নেমে নৌকায় বুড়িগঙ্গা পার হন।

শুক্রবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement