২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিদেশে নির্যাতিত ঝর্ণাকে দেশে না ফেরালে আত্মহত্যার হুমকি

নারী
প্রতিকী ছবি - নয়া দিগন্ত

গৃহকর্মী ভিসায় সৌদি আরব, জর্ডান, কাতার, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানো নারী শ্রমিকেরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যায় থাকার কথা বলছেন দেশে তাদের স্বজনদের কাছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অতিষ্ঠ হয়ে দেশে ফিরতে আত্মহত্যা করার হুমকিও দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে অভিযোগগুলো উল্লেখ করে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোতে ধরনা দিচ্ছেন স্বজনেরা।

অভিযোগে বলা হচ্ছে, নিয়োগকর্তার হাতে গৃহকর্মীরা শারীরিক, মানসিক কখনো কখনো যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। চুক্তি মোতাবেক বেতন পাচ্ছেন না তারা। আরো অভিযোগ আছে যে, দালালেরা স্বজনদের কাছে স্বাস্থ্য পরীক্ষার তথ্য গোপন রাখছেন। তারা ভুয়া মেডিক্যালের মাধ্যমে আনফিট নারী কর্মীকে ‘ফিট’ দেখিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। পরে ওই নারীদের পড়তে হচ্ছে বড় বিপদে। কারো কারো মিলছে না স্বাধীনভাবে চলাচল করার আকামাও।

সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার রামনগর গ্রামের বাসিন্দা সজল মিয়া সৌদি আরবে অবস্থানরত তার স্ত্রী ঝর্ণা বেগমকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিখিত আবেদন দেন। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার স্ত্রীর ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। যদি তাকে দেশে ফেরত না আনা হয় তাহলে অতিশয় কষ্টে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন।

এর আগে ঢাকার ফকিরাপুলের ফ্যালকন ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সৌদি আরব যেতে ঝর্ণা বেগমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে তিনি আনফিট হন। তার পরও দালাল লতিফ বিষয়টি গোপন রেখে পরে নামসর্বস্ব অন্য একটি মেডিক্যাল সেন্টার থেকে আবারো তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করে ‘ফিট’ রিপোর্ট বের করায়।

শুধু ঝর্ণা বেগম নন, তার মতো শত শত নারী গৃহকর্মীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে আনফিট হলেও পরে নামসর্বস্ব অন্য মেডিক্যাল সেন্টার থেকে তাদের ফিট দেখিয়ে বিদেশে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। এভাবে ভুয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষায় পাড়ি জমিয়ে বর্তমানে সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে নানা ধরনের কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন নারী শ্রমিকেরা। কেউ কেউ তো ঘর থেকেই বের হতে পারছেন না।

সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থান করছেন ঝর্ণা বেগম তার স্বামী সজল মিয়া গত ৯ জুলাই প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে হাজির হয়ে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘আমার স্ত্রী ঝর্ণা বেগমকে চলতি বছরের ৫ মার্চ ফ্যানকন ইন্টারন্যাশনালের (আরএল-৬১৭) মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছে। সেখানে যাওয়ার পর ঝর্ণা বেগম বর্তমানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতিত অবস্থায় আছে। আমার স্ত্রী তাকে বাংলাদেশে ফেরত আনা না হলে তিনি অতিশয় কষ্টে আত্মহত্যা করবেন বলে আমাকে জানিয়েছে। অভিযোগের সাথে পাসপোর্ট, ভিসার ফটোকপিও সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গতকাল অভিযোগকারী সজলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয়ার আগে আমি ফকিরাপুলে রিক্রুটিং এজেন্সি ফ্যালকন ইন্টারন্যাশনালের মালিক নুর আলম সাহেবের অফিসে অনেকবার ধরনা দিয়েছি। তার পা পর্যন্ত ধরে বলেছি, আমার স্ত্রী সৌদি আরবে অনেক কষ্টের মধ্যে আছে। তাকে যে করেই হোক আপনে দেশে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু মালিক আমার কোনো কথাতেই কর্ণপাত করেননি। পরে আমি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী বিদেশ যাওয়ার আগে গ্রামের মহিলা দালাল আনোয়ারার মাধ্যমে দালাল লতিফের প্রলোভনে পড়ে। তখন আমার স্ত্রী নিজেই বলেছে, কাজ করে টাকা উপার্জন করবে।

এক ছেলে ও এক মেয়ের মা ঝর্ণার বিদেশ যেতে টাকা লাগেনি জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশ যাওয়ার আগে দালাল লতিফ আমার স্ত্রীকে প্রথমে ফকিরাপুলের যে মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়েছিল, সেখান থেকে আনফিট রিপোর্ট আসে। রক্তে সমস্যা থাকার পরও দালাল আমাকে ও আমার স্ত্রীকে জানায়নি। পরে সে অন্য একটি (নাম বলতে পারেননি) মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করায়। তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে স্বাস্থ্য রিপোর্টে ফিট দেখিয়ে আমার স্ত্রীকে তারা বিদেশে পাঠায়। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আনফিট হয়। যার কারণে তার এখন পর্যন্ত আকামা হয়নি।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সাত মাস হলেও গত মাসে মাত্র ১৮৫০ রিয়াল পাঠিয়েছে, যা বাংলাদেশী টাকায় ৪০ হাজার ৭৩৫ টাকা।

কি কারণে আপনার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে মালিক তার ওপর অনেক নির্যাতন করছেন। তাই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনাই হবে উত্তম।

তিনি বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠানোর পর মালিক নুর আলম তাকে বলেছেন, তাকে ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারের মাধ্যমে আনতে হবে। আমরা তাকে আনার জন্য সবধরনের কাগজপত্র পাঠিয়েছি।

গত রাতে রিক্রুটিং এজেন্সি ফ্যালকন ইন্টারন্যাশনালের মালিক নুর আলম ও তার অফিসের স্টাফ মামুনের সাথে যোগাযোগ করার পরও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (কর্মসংস্থান) মজিবর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের এখানে যেসব নারী কর্মীর স্বজনেরা লিখিত অভিযোগ জমা দিচ্ছেন সেগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ যুবলীগ কর্মীদের, নিন্দা গোলাম পরওয়ারের চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ

সকল