২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

উদ্বোধনের ছয়দিনের মাথায় ভেঙ্গে পড়লো আকশবীণার জরুরি দরজা

উদ্বোধনের ছয়দিনের মাথায় ভেঙ্গে পড়লো আকশবীণার জরুরি দরজা - সংগৃহীত

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যুক্ত হওয়া নতুন উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৮৭ আকাশবীণার জরুরি দরজার একটি বিশেষ অংশ (র‌্যাফট) ভেঙে পড়েছে।

মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ কারণে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরগামী ফ্লাইটটিতে দেড় ঘণ্টা দেরি হয়।

সূত্র জানায়, এ ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশলী মোস্তাাফিজুর রহমানকে সঙ্গে সঙ্গে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেক আলী সারাবাংলাকে বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। মূলত তার অদক্ষতার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় ড্রিমলাইনার বোয়িং ৭৮৭-এর সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এসময় বোর্ডিং ব্রিজে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় বিএফসিসি থেকে যাত্রীদের জন্য খাবার তোলা হচ্ছিল। এসময় প্রকৌশল বিভাগের স্টাফ মোস্তাফিজুর রহমান দরজা অন করতে ভুল বাটনে চাপ দেন। আর তাতেই জরুরি দরজার র‌্যাফট নাম অংশটি খুলে ভেঙে পড়ে।

পরে খুলে যাওয়া অংশটি প্রকৌশল বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ফ্লাইট চালু রাখা হয়। যদিও এ কারণে দেড় ঘণ্টা দেরি হয় ফ্লাইটে।

ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আলী জানান, আকাশবীণার যে অংশটি খুলে পড়েছে, সেটি লন্ডন থেকে আনা হবে। আগামী তিন দিনের মধ্যে সেটি লন্ডন থেকে এনে আকাশবীণায় সংযুক্ত করা হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যুক্ত হওয়া নতুন উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৮৭ আকাশবীণার জরুরি দরজা

এর আগে, গত ৫ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয় বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার, যার নাম দেওয়া হয় আকাশবীণা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বলছে, এটিই সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত উড়োজাহাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। ওই দিনই সন্ধ্যায় ছিল আকাশবীণার প্রথম ফ্লাইট, গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়া।

বহুল কাঙ্ক্ষিত বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭ ‘আকাশবীণা’ দেশে আনা হয় গত ১৯ আগস্ট। ওই দিন বিকেল ৫টা ১৯ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে উড়োজাহাজটি। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের বোয়িং কার্যালয় থেকে রওয়ানা হয়ে এদিন বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যান্ড করে ড্রিমলাইনারটি। এ নিয়ে বিমানের বহরে উড়োজাহজের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫টিতে।

টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম এই ড্রিমলাইনার চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগবে। এটি ঘণ্টায় ৬৫০ মাইল বেগে উড়তে সক্ষম। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই বিমান ওজনে হালকা। ভূমি থেকে বিমানটির উচ্চতা ৫৬ ফুট। দু’টি পাখার আয়তন ১৯৭ ফুট।

আকাশবীণায় আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। ড্রিমলাইনারের ইন ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট (আইএফই) সেবা দিতে প্যানাসনিক এভিওনিকস করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিমান। প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডি এস-মনিটর রয়েছে। মনিটরে বিবিসি, সিএনএনসহ ৯টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে।

ড্রিমলাইনার ৭৮৭ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। বিমানে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক যাত্রী ১৫ মিনিটের জন্য বিনামূল্যে ১০ মেগাবাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এরপরও কোনো যাত্রী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে চার্জ দিতে হবে। ১শ’ মেগাবাইটের জন্য ৮ ডলার, ৩শ’ মেগাবাইটের ১৬ ডলার আর ৬শ’ মেগাবাইটের জন্য ৩২ ডলার হারে চার্জ দিতে হবে যাত্রীদের।

এছাড়া মোবাইল ফোনে রোমিং সুবিধা থাকলে আকাশে থাকার সময় কল করতে পারবেন যাত্রীরা। এজন্য ২৫টি স্যাটেলাইটের সঙ্গে করা হয়েছে চুক্তি। বিমানটি যে স্থানের ওপর দিয়েই যাবে, যাত্রীদের সামনে তখন স্ক্রিনে দেখা যাবে থ্রিডি ম্যাপ, একইসঙ্গে উঠে আসবে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।

সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢাকায় বিমানের ফ্লাইট অপারেশন রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এটি। এর মাধ্যমে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, ককপিট, ফুয়েল, নেভিগিয়েশনসহ সব তথ্য জানতে পারবেন ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তারা। যেকোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তারা অপারেশন রুম থেকে পাইলটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবেন। এজন্য ঢাকায় বিমানের প্রধান কার্যালয়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সার্ভার স্থাপন করা হয়েছে।

ড্রিমলাইনার পরিচালনার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিমানের ১৪ জন পাইলট। ড্রিমলাইনার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রকৌশল বিভাগের ১১২ জনকে। এছাড়া কেবিন ক্রুদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement