২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগ চায় বিএনপি

শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর - নয়া দিগন্ত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকারের পদত্যাগ ও কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়েছে দলটি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সেনা মোতায়েন করতে হবে। এ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দেবে না।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জনসভার একাংশ ..ছবি : নয়া দিগন্ত 

শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকারের মধ্যে এখন বিএনপি ভীতি কাজ করছে। এ ভীতি থেকে রক্ষা পেতে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। তারা ভাবছে ইভিএম তাদের রক্ষা করবে, কিন্তু জনগণ তাদের রক্ষা করবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সব রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। অপশাসনকে পরাজিত করতে হবে। জাতিকে মুক্তি দিতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা সবাইকে আহ্বান জানাব, গণতন্ত্রকামী সবাই নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হোন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করুন। কারণ দেশনেত্রী কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন এ সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য। তাই আসুন সবাই ভেদাভেদ ভুলে একটি জাতীয় ঐক্য গঠন করে এ দানবকে পরাজিত করি।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে একদলীয় বাকশাল থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে বিএনপি গঠন করেছেন জিয়াউর রহমান। যেভাবে ১৯৭১ সালে জাতির ক্রান্তিকালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, আজ আবার সেই গণতন্ত্র সংকটের মুখে আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসনের কারণে।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মহাসচিব বলেন, আমাদের আজ বুকে সাহস নিয়ে, বুকে বল নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আজকের জনসমুদ্র প্রমাণ করেছে আজ বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বুকের রক্ত দিতে হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, দেশকে মুক্ত করতে হবে। যারা দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের রক্ত ছুয়ে শপথ নিতে হবে আমরা দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করব, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব।

খালেদা জিয়াসহ কারাগারে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা বাতিল করতে হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

ফখরুল বলেন, তারেক রহমানকে নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাঁকে সাজা দিতে চাইছে। রায়ের আগে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিচ্ছেন, এ মামলায় তারেক রহমানের সাজা হবে। তাহলে কি আপনারা আগেই গণভবনে রায় লিখে রেখেছেন। মনে রাখবেন, কোনো ষড়যন্ত্রের রায় দেশের জণগন মেনে নিবে না।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায় আপনাদের নিতে হবে। দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আমাদের কথা পরিষ্কার, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে।

বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভা শুরু হয়। সভা শুরুর আগেই সকাল থেকে দলের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে পুরো এলাকা।

সভা শুরু পর থেকেই বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তারা তাদের বক্তব্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। তারা বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। মুক্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে বিএনপি।

আরো পড়ুন : মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়ে নির্বাচনে যাবে বিএনপি
নয়া দিগন্ত অনলাইন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসভায় এই মন্তব্য করেছেন নেতারা। 

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসভা শুরু হওয়ার পর থেকেই বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তারা তাদের বক্তব্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। তারা বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। মুক্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে বিএনপি।


এদিকে জনসভা শুরুর পর যখন নেতারা বক্তব্য দেন ঠিক এ সময় বিএনপির দুটি পক্ষের নেতাকর্মীদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা একে অপরের দিকে পানির বোতল, ব্যানার, ফেস্টুন ছুড়ে মারে।

সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘এখন আমাদের আন্দোলন হচ্ছে সিইসি নুরুল হুদার বিরুদ্ধে। কারণ শেখ হাসিনা সরকার যা বলছে, যা করতে চাইছে হুদা কমিশন সেগুলো বাস্তবায়ন করছে। ১৯৯৬ সালের জনতার মঞ্চের নেতা নুরুল হুদার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আর নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তার নেতৃত্বেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে, দেশের গণতন্ত্র মুক্ত হবে।’

যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।’

‘আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। না হলে দেশের জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের প্রিয় নেত্রীকে মুক্ত করে আনবে’, যোগ করেন খোকন।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘আজ মিথ্যা মামলায় কারাগারে আমাদের নেত্রী। আমরা সরকারকে বলতে চাই, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। না হলে এ দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, ‘আজ খালেদা জিয়া কারাগারে নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র কারাগারে। তাকে কারাগারে আটকে রেখে বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে সরকার। কিন্তু আমরা সরকারকে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাব।’

ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাদরু বলেন, ‘আজ আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমাদের জন্য আনন্দ নয়, বিষাদের। কারণ, আমাদের প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় কারাগারে। আজ আমরা শপথ নিয়েছি, খালেদা জিয়াকে এই অবৈধ সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করার।’

যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, ‘খালেদা জিয়া এ দেশের মাটি ও মানুষের নেত্রী। অবৈধ সরকার অন্যয়ভাবে তাকে জেলে আটকে রেখেছে। আমরা তাঁকে কারাগারে রেখে আজ আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছি।’

নীরব সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনবে। তার নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাব।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রেখেছে এ অবৈধ সরকার। তারা চায়, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আবারও একটা পাতানো নির্বাচন করতে। কিন্তু এ দেশের জনগণ খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচন হতে দিবে না।’

তিনি বলেন, ‘সরকার যদি খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চায় তাহলে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেটি প্রতিহত করা হবে। আগামী নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে মুক্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। এ ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’

মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে। আর সেই নির্বাচন হবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। তাঁকে কারাগরে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন দেশে হতে দেওয়া হবে না।’

আরো পড়ুন : সরকার পতনের আওয়াজ উঠেছে: পল্টনের জনসভায় রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সারাদেশে অবৈধ সরকারের পতনের আওয়াজ উঠেছে। তিনি বলেন, সরকারের খুঁটি নড়বড়ে হয়ে গেছে; কিন্তু এই অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা টের পাচ্ছে না। আকাশে-বাতাসে, বৃক্ষে, বৃক্ষে, পাতায়, পাতায় পতনের আওয়াজ ধ্বনিত হচ্ছে। শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জনকল্যাণে কাজ করেছেন, এখানে একটু সংশোধন আছে। তিনি জনগনের কল্যাণে নয়, আওয়ামী লীগের কল্যাণে কাজ করেন। তার জনগণকে প্রয়োজন নাই, তার প্রয়োজন ক্ষমতা। কারণ ক্ষমতায় থাকলে পদ্মা সেতুর টাকা লুট করা যায়, ব্যাংক লুট করা যায়, রিজার্ভ লুট করা যায়, সোনা লুট করা যায়, কয়লা, পাথর লুট করা যায়।’

এসময় তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না। তাকে মুক্তি দিতে হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ইভিএম মানিনা, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জনসভা চলছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত রয়েছেন। ইতিমধ্যেই জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। ঢাকা মহানগর ছাড়াও পাশের বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য নেতাকর্ম হাজির রয়েছেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement