১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কোমলমতিদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে বাইরে

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন - ছবি : সংগৃহীত

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীর বাইরে। অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ নিহতের প্রতিবাদে টঙ্গী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। এ কারণে টানা তৃতীয় দিনের মতো গতকালও রাজধানী ছিল অচল। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো গতকালও ছিল শিক্ষার্থীদের দখলে। ক্রমেই এই আন্দোলনের বিস্তৃতি ঘটছে। জাবালে নূর পরিবহনের লাইসেন্স ও রুট পারমিট গতকাল বাতিল করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে পরিবহনের এক পরিচালককে। রিমান্ডে নেয়া হয়েছে গাড়ির চালককে। এ দিকে, প্রতিবাদ চলাকালেই ট্রাকচাপায় রাজধানীর শনিরআখড়ায় এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়। 

বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ : ছাত্রদের অহিংস আন্দোলনে গতকালও রাজধানী ছিল অচল। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তা অবরোধ করে গতকালও বিক্ষোভ করেছে ছাত্ররা। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গতকাল সড়ক অবরোধে অংশ নেয়। বেলা ১১টায় উত্তরার ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। এরপর রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। রাজধানীর বাড্ডায় জড়ো হয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ফার্মগেট এলাকায় অবরোধ সৃষ্টি করে বিজ্ঞান কলেজসহ ওই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। রামপুরা এলাকায় অবরোধকারীরা সকাল থেকেই সক্রিয় ছিল। মালিবাগসহ অন্যান্য এলাকায় আন্দোলনকারীরা সকাল থেকে যানবাহনের লাইসেন্স চেক করে। এ সময় লাইসেন্সবিহীন দু’টি গাড়ি পাওয়া গেলে তরঙ্গ ও গাঙচিল পরিবহনের ওই দু’টি গাড়ি ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা। যাত্রাবাড়ীতে সকাল থেকেই আন্দোলনকারীরা রাস্তায় অবস্থান নেয়। তারা যানবাহনের লাইসেন্স চেক করে। এ সময় লাইসেন্সবিহীন গাড়িগুলো আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা। যাত্রাবাড়ীতে কয়েক দফা পুলিশ ছাত্রদের ওপর লাঠিচার্জ করে। শিক্ষার্থীরা তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। শাহবাগে এসে জড়ো হয়েছিল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দিনভর তারা রাস্তা অবরোধ করে রাখে। শাহবাগ দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। বৃষ্টির মধ্যেও সেখানে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে যায়নি। সকালেই পান্থপথ সিগন্যাল বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। ল্যাব এইড ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় আগুনের কুণ্ডলী বানিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে তারা।

ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজসহ ওই এলাকার প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেয়। ল্যাব এইডের পেছনে পুলিশ বহনকারী একটি লেগুনার লাইসেন্স না থাকায় সেটি ভাঙচুর করে ছাত্ররা। মতিঝিলে দিনভর বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শাপলা চত্বরের চারপাশ দিয়ে পুরো এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এই এলাকা দিয়ে কোনো যান চলাচল করতে পারেনি। এমনকি আশপাশের যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সকালে ওইসব প্রতিষ্ঠানে গাড়ি নিয়ে যারা প্রবেশ করেছেন তাদের গাড়ি আর বের হতে পারেনি। ছাত্রদের বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে ৯ দফা দাবি জানিয়ে তারা স্লোগান দেয়।

ছাত্রদের ওপর ট্রাক চাপা : গতকাল দুপুরের দিকে রাজধানীর শনিরআখড়া এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দেয়া হয়। এতে ফয়সাল নামের এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই শনিরআখড়া এলাকায় ছাত্ররা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছিল। তারা যানবাহন থামিয়ে লাইসেন্স চেক করে। যেসব গাড়ির লাইসেন্স ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক ছিল না ওইসব গাড়ি তারা আটকে রাখে। এমনই একটি ট্রাকের কাগজপত্র চাইলে ট্রাকটি ছাত্রদের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেয়। এতে ফয়সাল গুরুতর আহত হয়।

পুলিশের অবস্থান পরিবর্তন : আন্দোলন শুরুর দু’দিন পুলিশ বেশ মারমুখো ছিল। এমনকি, ছাত্রীদের ধরেও পেটাতে দেখা গেছে। কিন্তু গতকাল পুলিশের অবস্থানের পরিবর্তন দেখা যায়। গতকাল বিভিন্ন এলাকায় পুলিশকে দেখা গেছে ছাত্রদেরকে বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পুলিশ নিয়ে আসে ছাত্রদেরকে বোঝানো জন্য। ছাত্ররা রাস্তা অবরোধ করে রাখলেও দু-একটি স্পট ছাড়া বেশির ভাগ এলাকায় পুলিশ সহিষ্ণুতার পরিচয় দেয়।

মারমুখি পরিবহন শ্রমিকেরা : গতকাল বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন শ্রমিকদের মারমুখো আচরণ করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে টার্মিনাল এলাকায় তারা সাধারণ যাত্রীদের ওপরও চড়াও হয়েছে। গতকাল দুপুরের দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় এক লেগুনা চালকের সাথে দুই যাত্রীর বচসা হলে টার্মিনালের শ্রমিকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওই যাত্রীকে মারধর করে বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলন : টানা তিন দিন আন্দোলন করলেও এই আন্দোলনে বড় ধরনের কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীরা বলছে, তারা অহিংস আন্দোলনই চালিয়ে যাবে। গতকাল তাদের বিভিন্ন এলাকায় চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে দেখা যায়। এমনকি মোটরসাইকেল চালকেরাও এ থেকে রেহাই পায়নি। রেহাই পায়নি পুলিশের গাড়িও। বেশ কয়েকটি স্থানে পুলিশের মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেক করতে দেখা যায় ছাত্রদের। এমনকি, পুলিশের মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় গাড়ি আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা। আবার রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ছাত্ররাই সহায়তা করে। কোনো রিকশা বা গাড়িতে বয়স্ক মুরুব্বীদের দেখা গেলে তাদের যাওয়ার জন্য রাস্তা করে দেয়। শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় রাস্তা ঝাড়– দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে দেখা গেছে।
দুর্ঘটনাস্থলে যেতে দিচ্ছে না পুলিশ : দুর্ঘটনাস্থল রেডিসনের সামনে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের যেতে দিচ্ছে না পুলিশ। গতকালও শিক্ষার্থীরা ওই স্পটে যেতে চাইলে পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয়। বাধা পেয়ে শিক্ষার্থীরা উত্তরা ও বিশ্বরোড এলাকায় অবস্থান নেয়।

আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকার বাইরেও : দু’দিন রাজধানীতে আন্দোলন চললেও গতকাল তা রাজধানীর বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমেই আন্দোলনের বিস্তৃতি ঘটছে। গতকাল গাজীপুর, টঙ্গী, সাভার ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ করেছে।

জাবালে নূরের রুট পারমিট ও লাইসেন্স বাতিল : দুই শিক্ষার্থীকে হত্যাকারী বাস জাবালে নূরের লাইসেন্স ও রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল বিআরটিএ থেকে এই তথ্য দেয়া হয়েছে। 
রাজধানীতে অঘোষিত হরতাল : ছাত্র আন্দোলনের ফলে টানা তৃতীয় দিন গতকালও রাজধানীতে ছিল অঘোষিত হরতাল। রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা গণপরিবহনশূন্য ছিল। রাস্তায় শত শত মানুষ দেখা গেছে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেক মানুষ মাইলের পর মাইল হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। কিন্তু তার পরেও মানুষের কোনো অভিযোগ নেই এই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। উল্টো মানুষ ভোগান্তি মেনে নিয়ে আন্দোলনের পক্ষেই সমর্থন জোগাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই দুপুরে ছুটির পরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আবদুল করিম ওরফে সজীব এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মিম নিহত হন। তারা রাস্তার পাশের ফুটপাথে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিয়ে মেরে ফেলে। এ সময় বেশ কয়েকজন শিার্থী গুরুতর আহত হন। পথচারীরা সাথে সাথে আহতদের কাছের কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে গুরুতর আহত কয়েকজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনার পর ৯ দফা দাবিতে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে রাজপথে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপুল শিক্ষার্থী। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়ে সমবেত হয়ে মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেস কাবের সামনে এসে বিক্ষোভ করেন ুব্ধ শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করেন। 
গতকালের বিক্ষোভে বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দেওয়ানহাট সিটি করপোরেশন কলেজ, বেপজা কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজ ও সরকারি সিটি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘পড়তে এসেছি, মরতে নয়’, ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ/ যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ’, ‘আর কত ছাত্রছাত্রীর জীবন নিয়ে বেপরোয়া চালকরা ক্ষান্ত হবে’, ‘যদি আন্দোলন করে আমরা ভুল করে থাকি তাহলে ভুল করেছেন বঙ্গবন্ধু আমাদের আন্দোলন শিখিয়ে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নৌপরিবহনমন্ত্রীমন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধেও স্লোগান দিতে থাকেন। বেপরোয়া চালকদের মদদদাতা উল্লেখ করে নৌমন্ত্রীর অপসারণ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
শাবি সংবাদদাতা জানান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিােভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিার্থীরা। 
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে শিার্থীরা একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেন। পরে একটি বিােভ মিছিল ক্যাম্পাস প্রদণি করে একই স্থানে এসে সমাবেশে মিলিত হন। এতে বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিার্থী অংশগ্রহণ করেন। 
শিার্থী খৈরম কামেশ্বরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাস্ট সাহিত্য সংসদের সভাপতি শুভম ঘোষ, সাস্ট সায়েন্স অ্যারেনার সাবেক সভাপতি রিফাত হায়দার, আমির হামজা, তৌহিদুজ্জামান জুয়েল, প্রণয় কান্তি বিশ্বাস, রনি সরকার প্রমুখ।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, ৯ দফা দাবিতে বরিশালে বিােভ করেছেন শিার্থীরা। গতকাল দুপুরে বরিশাল নগরের চৌমাথা এলাকার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে তারা বিােভ করেন।
শিার্থীদের বিােভের ফলে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তেেপ বেলা সোয়া ২টায় কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন শিার্থীরা।
এ দিকে, কর্মসূচি শুরুর দিকে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিব শিার্থীদের গালাগাল ও তাদের সাথে অসদাচরণের কারণে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। 
আন্দোলনকারী শিার্থীরা জানান, নিয়মিত কাস ও পরীা বর্জন করে দুপুর ১২টায় বরিশালের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, অমৃত লাল দে কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি মডেল কলেজ, ইনফ্রা পলিটেকনিক কলেজসহ বেশ কিছু শিাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক শ’ শিার্থী নগরের চৌমাথা এলাকায় আসেন।
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার ও সাভার বাসস্ট্যান্ডে গতকাল বুধবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিার্থীরা দুই শিার্থী নিহতের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ সময় মহাসড়কে পৌনে ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। সকাল থেকে মহাসড়কে যানবাহন কম থাকায় সাধারণ যাত্রীদের পরিবহন সঙ্কটে পড়তে হয়। সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভারের টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল কলেজ, সাভারের সিএফএমএম কলেজ, সাভার ল্যাবরেটরি কলেজ ও লিজেন্ট কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্র হতে থাকে। 
আশুলিয়া (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার আশুলিয়ার সকল সড়ক ও মহাসড়কে সীমিত পরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। সাধারণ মানুষ ও কর্মজীবী সব শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আশুলিয়ার ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-কালিয়াকৈর মহাসড়কের পাশাপাশি আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল ও মিরপুর-নরসিংহপুর-কাশিমপুর-কোনাবাড়ি সড়কসহ সব শাখা সড়কে ব্যাপক পরিবহন সঙ্কট। পুরো দিন ছিল সড়ক মহাসড়ক ফাঁকা। এ যেন অঘোষিত হরতাল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পরিবহন সংখ্যা ক্রমেই কমতে থাকে। 
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, বাসচাপায় দুই শিার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে এবার গাজীপুরেও বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানের শিার্থীরা গতকাল কয়েক দফা মহাসড়ক-সড়কে নেমে বিােভ ও অবরোধ করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে আশপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিার্থীরা বুধবার সকালে মিছিল নিয়ে চৌরঙ্গী মোড়ে জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১টায় সহস্রাধিক বিুব্ধ শিক্ষার্থী ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ ও ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। 

এ দিকে একই দাবিতে একই দিন দুপুরে ও বিকেলে জেলা শহর জয়দেবপুরে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কয়েক দফা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেছে। 
টঙ্গী সংবাদদাতা জানান, রাজধানীতে বাস চাপায় দুই শিার্থী নিহতের ঘটনায় চলমান আন্দোলনে যোগ দিয়েছে টঙ্গীর শিার্থীরাও। গতকাল বুধবার ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় অবরোধ ও বিােভ মিছিল করেছে শত শত শিার্থী। বেলা ১১টায় টঙ্গী সরকারি কলেজ, পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ, সাহাজ উদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মহাসড়কে নেমে আসে।
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, রাজধানীতে বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলন হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক শ’ শিক্ষার্থী অবস্থান করে নারায়ণগঞ্জের সাথে রাজধানীসহ আশপাশের জেলার সব যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। আটকে দেয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেন চলাচল। এ ছাড়া বন্ধ ছিল ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সর্ব প্রকার যান চলাচল। ওই সময়ে সাইনবোর্ড এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মারধর করে পরিবহন শ্রমিকেরা। বিকেল ৪টায় অবরোধকারীরা সরে গেলে যান চলাচল শুরু হয়।

ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহ শহরের পাঁচটি পৃথকস্থানে বিােভ করেছে শিার্থীরা। শহরের টাউন হল মোড় এলাকা থেকে এ বিােভ মিছিল শুরু করে বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানের শিার্থীরা।
স্থানীয় রয়েল মিডিয়া কলেজের শিার্থীদের নেতৃত্বে প্রায় ৫০০ শিার্থী শহরের নতুনবাজার, গাঙ্গিনারপাড়, পাটগুদাম ব্রিজের মোড়, টাউন হল মোড় ও শহরবাইপাস মোড়ে অবস্থান নেয়। প্রথম দিকে শিার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে বিােভ করলেও হঠাৎ করেই উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ে।


আরো সংবাদ



premium cement